রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :১৫ আগস্ট, ২০২১ ৪:৪০ : অপরাহ্ণ
টানটান উত্তেজনায় কেটেছে রাত। সকাল হতেই বিনাযুদ্ধে ক্ষমতার হস্তান্তর হয়ে গেলো আফগানিস্তানে। তালেবান নেতাদের সঙ্গে মাত্র ৪৫ মিনিট বৈঠকের পরেই প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ইস্তফা দিলেন আশরাফ গনি।
তার জায়গায় আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হতে পারেন তালেবানের প্রধান মোল্লা আবদুল গনি বারাদার।
আজ রোববার (১৫ আগস্ট) সকালে আশরাফ গনি এবং আমেরিকার কূটনীতিবিদদের সঙ্গে সমঝোতা করতে তিনিও প্রেসিডেন্টের বাসভবনে হাজির ছিলেন।
গতকাল শনিবার রাতে উত্তরের মাজার-ই-শরিফ দখলের পর থেকেই কাবুলের পতনের ঘণ্টা বাজতে শুরু করেছিল। রোববার সকালে জালালাবাদ দখল করে তাতে সিলমোহর দেন তালেবান যোদ্ধারা। তার পর রাজধানী কাবুলেও দলে দলে প্রবেশ করতে শুরু করে তারা।
যদিও দলীয় নেতৃত্বের নির্দেশে কাবুলে ঢোকার মুখেই থমকে যেতে হয় তাদের। এর পর সরাসরি আশরাফ এবং আমেরিকার কূটনীতিবিদদের সঙ্গে সমঝোতা চান বলে দাবি করেন তালেবান নেতৃত্ব। তারা জানিয়ে দেন, গায়ের জোরে কাবুল দখল করতে চান না। শান্তিপূর্ণ ভাবে ক্ষমতার হস্তান্তর চান।
এর পরেই মার্কিন কূটনীতিবিদ এবং ন্যাটো প্রতিনিধিদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন আশরাফ গনি। তার পর বৈঠকের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয় তালেবান নেতৃত্বকে। সেই মতো মোল্লা আবদুল গনি বারাদারের নেতৃত্বে প্রেসিডেন্টের বাসভবনের উদ্দেশে রওনা দেয় তালেবানের একটি প্রতিনিধি দল।
স্থানীয় তোলো টিভিকে সম্প্রচারিত এক ভিডিওবার্তায় দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার হস্তান্তর হবে। কাবুল আক্রমণের শিকার হবে না। এই শর্তে তালিবানের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে।
সংবাদ সংস্থা এপি জানিয়েছে, তালেবান প্রধান মোল্লা আবদুল গনি বারাদারের নেতৃত্বে নেতারা ক্ষমতার ‘হস্তান্তরের’ প্রস্তুতির জন্য প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে রয়েছেন। কাতার এবং আমেরিকার কূটনীতিবিদরাও রয়েছেন সেখানে।
এর আগে তালেবানের তরফ থেকে বলা হয়েছে, ‘কাবুল এখন আমাদের দখলে। তবে আলোচনার মাধ্যমেই আফগান সরকারের থেকে ক্ষমতার হস্তান্তর চাই আমরা। আমরা এখন আফগান সরকারের বক্তব্য শোনার অপেক্ষায় রয়েছি।’
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, কাবুলে প্রবেশ করে সংঘর্ষ এড়াতে তালেবান যোদ্ধাদের নির্দেশ দিয়েছেন সশস্ত্র গোষ্ঠীটির শীর্ষ নেতারা। যারা কাবুল ছেড়ে বেরিয়ে যেতে চান, তাদের যাতে নিরাপদে শহর ছাড়তে দেওয়া হয় সেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মহিলাদের অনুরোধ করা হয়েছে, নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার জন্য।
এদিকে কূটনীতিকদের কাবুল থেকে বের করে নিয়ে আসছে আমেরিকা।
গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রদেশের মধ্যে ১৮টি তালেবানের হাতে ছিল। কিন্তু এর পর কার্যত ঝড়ের গতিতে এগোতে শুরু করে তালেবান। একে একে হেরাট, আয়বাক, গজনি, কন্দহর, তালিকান, কুন্দুজ দখল করে তারা। উত্তর দিক থেকে কাবুলের প্রবেশ পথ মাজার-ই-শরিফও একদিনেই দখল করে নেয় তালেবান। তার পর আজ (১৫ আগস্ট) রোববার সকালে দক্ষিণের জালালাবাদ দখল করে তারা। এ পর্যন্ত মোট ২৬টি প্রদেশ তালেবানের দখলে চলে গেছে।
তালেবানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি মেনে এ বছর ৯ মার্চ থেকে সেনা সরাতে শুরু করে আমেরিকা। তার পর থেকেই ডালপালা মেলতে শুরু করে তালেবান। জুন মাসের শেষ দিকে সরাসরি আফগান বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে বাধে তাদের। তাতে আফগান বাহিনীকে পরাস্ত করে দেশের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে এগোতে শুরু করে তালেবান। তার পর দেড় মাসের মধ্যেই আফগানিস্তানের দখল নিলো তারা।
সূত্র : রয়টার্স, এএফপি ও আল জাজিরা