নিজস্ব প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :৯ আগস্ট, ২০২১ ৭:৩০ : অপরাহ্ণ
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে সিটি করপোরেশনের একজন স্বাস্থ্যকর্মীর বিরুদ্ধে। ওই স্বাস্থ্যকর্মী নগরীর বিভিন্ন বাসায় গিয়ে প্রতি ডোজ টিকা জনপ্রতি ১ হাজার টাকার বিনিময়ে মানুষকে পুশ করছেন। বাসায় টিকা গ্রহণকারী এমন দুই ব্যক্তিকে আটক করে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
আটক দুই ব্যক্তি হলেন-মো. হাসান ও মোবারক আলী।
গত শনিবার (৭ আগস্ট) চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী থানার জাকির হোসেন রোডের বাইলেনে ব্যাংকার মোবারক আলীর বাসায় কয়েকজন ব্যক্তি টিকা গ্রহণ করেন। নগরীর উত্তর কাট্টলী সিটি করপোরেশন মোস্তফা হাকিম মাতৃসদন হাসপাতাল টিকাকেন্দ্রের স্বাস্থ্যকর্মী বিশু দে ওই বাসায় গিয়ে মো. হাসান ও সাজ্জাদসহ আরও কয়েকজন ব্যক্তিকে টিকা দেন।
মো. হাসান শনিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এমডি হাসান নামের আইডি থেকে বাসার ভেতর টিকাগ্রহণের একটি ছবি পোস্ট করেন। স্ট্যাটাসে তিনি টিকার জন্য মোবারক আলীকে ধন্যবাদ জানান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মোবারক আলী নগরীর বেসরকারী স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা।
বাসায় টিকা নেয়ার ছবিসহ এই ফেসবুক স্ট্যাটাসটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরে আসে। এরপর পুলিশ গতকাল রোববার রাতে অভিযান চালিয়ে ব্যবসায়ী মো. হাসান নামে ওই যুবককে আটক করে। পরে ব্যাংকার মোবারক আলীকেও আটক করে পুলিশ।
খুলশী থানার ওসি মো. শাহীনুজ্জামান রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘আটককৃত হাসান ও মোবারক আলী প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, সিটি করপোরেশন মোস্তফা হাকিম মাতৃসদন হাসপাতাল টিকাকেন্দ্রের স্বাস্থ্যকর্মী বিশু দে ওই বাসায় গিয়ে তাদের টিকা পুশ করেছেন। জনপ্রতি ১ হাজার টাকা মূল্যে তারা টিকা গ্রহণ করেছেন বলে জানিয়েছেন।’
সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্যকর্মী বিশু দে, টিকা গ্রহণকারী সাজ্জাদ এবং এ ঘটনায় আরও যারা জড়িত আছে তাদের আটক করতে অভিযান চলছে বলে জানান তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশু দে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশননের স্বাস্থ্য বিভাগে ল্যাব টেকনেশিয়ান হিসেবে কর্মরত আছেন। তাকে সম্প্রতি নগরীর উত্তর কাট্টলী সিটি করপোরেশন মোস্তফা হাকিম মাতৃসদন হাসপাতাল টিকাকেন্দ্রে বদলি করা হয়। তার বাসা নগরীর হাজারী গলিতে। তিনি আজ (৯ আগস্ট) সোমবার মোস্তফা হাকিম মাতৃসদন হাসপাতাল টিকাকেন্দ্রে যাননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিটি করপোরেশন মোস্তফা হাকিম মাতৃসদন হাসপাতাল টিকাকেন্দ্রের ইনচার্জ ডা. সুমন তালুকদার রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘বিশু দে নগরীর খুলশীতে একটি বাসায় গিয়ে টিকা পুশ করার বিষয়টি নিয়ে পুলিশ আমার সাথে কথা বলেছে। কিন্তু সে আজকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলো।’
বিশু দে কোথায় থেকে টিকা সংগ্রহ করেছেন-এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শনিবার তো গণটিকা ক্যাম্পেইন ছিল। সে হয়তো কোনো ওয়ার্ড থেকে টিকা সংগ্রহ করে বাইরে সরবরাহ করেছে।’
তিনি তো কর্মরত আছেন মোস্তফা হাকিম মাতৃসদন হাসপাতাল টিকাকেন্দ্রে। তিনি বাইরের থেকে কীভাবে টিকা সংগ্রহ করেছেন?-এই প্রশ্নের উত্তরে ডা. সুমন তালুকদার সুর পাল্টে বলেন, ‘তা ঠিক আছে। ভাই, আমার পক্ষে তো ১ হাজার মানুষকে দেখা সম্ভব না। একজন মানুষকে টিকা পুশ করা হয় ০.৫ এমএল পরিমাণ। সে হয়তো মানুষকে ০.৫ এমএল পরিমাণের কম কম দিয়ে বাকিটা পকেটে করে বাইরে নিয়ে গেছে। এখন সে এটা কীভাবে করেছে সেটা ও আসলে বলা যাবে।’
জানা গেছ, মোস্তফা হাকিম মাতৃসদন হাসপাতাল টিকাকেন্দ্রটি সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের জন্য পৃথকভাবে টিকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনার পর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন বন্ধ রেখেছেন। তাই এ বিষয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘ঘটনাটি আমি শুনেছি। এটা খুবই দুঃখজনক। সিটি করপোরেশনের টিকা কার্যক্রম পরিচালনা করে স্বাস্থ্য বিভাগ। ওই স্বাস্থ্যকর্মীর বিরুদ্ধে টিকা নিয়ে অনিয়মের অভিযোগের প্রমাণ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা খুবই স্পর্শকাতর একটি বিষয়। সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ এটার দায় এড়াতে পারে না। আসলে খারাপ লোকেরা প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ঘাপটি মেরে থাকে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।’
চট্টগ্রাম বিভাগের স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘ঘটনাটি জানার পর আমি সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরীকে ফোন করলে তিনি রিসিভ করেননি। করোনার টিকা বাসায় নেওয়ার বিধান নেই। কীভাবে টিকাকেন্দ্র থেকে টিকা বাইরে গেলো সেটার তদন্ত হওয়া উচিত। সিটি করপোরেশনের ওই স্বাস্থ্যকর্মীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।’