শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা বিনোদন

স্মৃতি থেকে পরীমনি, নন্দিত থেকে নিন্দিত



নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :৫ আগস্ট, ২০২১ ২:১৫ : অপরাহ্ণ

গত ৯ জুন রাতে ঢাকা বোট ক্লাবে ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হওয়ার অভিযোগ তোলার পর পরীমনি সাধারণ মানুষের ব্যাপক সহানুভূতি পান। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই পরীমনির বিতর্কিত কিছু কর্মকাণ্ড গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলে নিন্দিত চরিত্রে পরিণত হন এই অভিনেত্রী।

ঢাকার বনানীর বাসায় অভিযান চালিয়ে গতকাল বুধবার চিত্রনায়িকা পরীমনিকে আটক করেছে র‍্যাব ৷

পরীমনির বাসায় প্রায় ৩ ঘণ্টা তল্লাশি চালিয়ে ভয়ংকর নতুন মাদক এলএসডি ও আইস জব্দ করা হয়। এছাড়া তার ড্রয়িং রুমের কাভার্ড, শো-কেস, ডাইনিং রুম, বেডরুমের সাইড টেবিল এবং টয়লেট থেকে বিপুল সংখ্যক বিদেশী মদের বোতল উদ্ধার করা হয়েছে।

পরীমনির বাসায় ঢুকে বিস্মিত হন র‌্যাব সদস্যরা। তারা দেখেন, বাসার ভেতরে থরে থরে সাজানো রয়েছে বিভিন্ন ব্রান্ডের মদের বোতল।পরীমনির বাসাটা যেন ছোটখাটো একটা মদের বার।

অভিযানে অংশ নেওয়া র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, পরীমনির বাসায় এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে মদ পাওয়া যায়নি। তার বাসা থেকে রাশিয়ান ভদকা, জিন, টাকিলা, হুইস্কি ও বহু মূল্যবান রেড ওয়াইন ব্র্যান্ডের মদ জব্দ করা হয়েছে। যা বাংলাদেশে খুব কমই আমদানি হয়। এছাড়া তার বাসায় পাওয়া যায় বিদেশি সিগারেটও।

এ ঘটনা এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি।

র‍্যাবের অভিযানে আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনির আসল রূপ বেরিয়ে আসে। এতে তার ঝলমলে ক্যারিয়ারে কলঙ্কের দাগ লেগে গেছে।

স্মৃতি থেকে পরীমনি

২০১৫ সালে বিদ্যুতের মতো যে পথচলা শুরু করেছিলেন পরীমনি, সেটা যেন ২০২১-এ এসে ধ্বংসের মুখে পড়ে গেলো। যেমন রাতারাতি তার উত্থান হয়েছিল, তেমন রাতারাতিই যেন পতনের খাতায় নাম লেখালেন ঢালিউডের এই গ্ল্যামারগার্ল।

এবার জেনে নেয়া যাক, আলোচিত এই নায়িকার উত্থান হয় কীভাবে।

পরীমনির আসল নাম ছিল শামসুন্নাহার স্মৃতি। এক বুক স্বপ্ন নিয়ে ২০১১ সালে ঢাকায় আসেন সাতক্ষীরার এই তরুণী। লক্ষ্য ছিল শোবিজ জগতে কাজ করা। শুরুতে মডেলিং দিয়ে শুরু হয়েছিল তার পথচলা। এরপর আসে নামের পরিবর্তন। নাম হয় পরীমনি।

একের পর এক সিনেমায় যুক্ত হয়ে ঝড়ের মতো মুহূর্তেই তিনি আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসেন।

২০১৫ সালে মুক্তি পায় পরীমনি অভিনীত প্রথম সিনেমা ‘ভালোবাসা সীমাহীন’। ওই সিনেমা মুক্তির আগেই তিনি প্রায় ২৩টি সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন! যেকোনো সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির নায়িকাদের ক্ষেত্রেই এটি বিরল। যদিও সবগুলো সিনেমা শেষ পর্যন্ত মুক্তির আলো দেখেনি।

‘ভালোবাসা সীমাহীন’ দিয়ে যাত্রা শুরু হলেও পরীমনি আলোচনায় আসেন ‘রানা প্লাজা’ সিনেমার মাধ্যমে। কেবল ২০১৫ সালেই তার এক ডজন সিনেমা মুক্তি পেয়েছিল। রাতারাতি ঢালিউডের তারকা বনে যান তিনি।

বছর খানেকের মধ্যে পরীমনি ২০টির বেশি সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হন। অঢেল টাকা আর অভিজাত জীবন যেন স্বেচ্ছায় ধরা দেয় তার হাতে।

দামি গাড়ি, কোটি টাকার ফ্ল্যাট, মূল্যবান অলঙ্কার কি নেই তার। অথচ তার সমসাময়িক নায়িকাদের অনেকে বাসা ভাড়া দিতেও হিমশিম খাচ্ছেন।

রাজধানীর অভিজাত এলাকা বনানীতে ফ্ল্যাট নেন পরীমনি। লেকের ধারে তার সেই রাজকীয় বাসার অন্দরমহল বিভিন্ন সময় ছবি ও ভিডিওতে দেখা গেছে। এছাড়া একাধিক গাড়িও রয়েছে এই অভিনেত্রীর।

কিছুদিন আগে এক দুর্ঘটনায় তার আগের গাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সবাইকে অবাক করে দিয়ে মাত্র একদিন পরেই নতুন আরেকটি বিলাসবহুল গাড়ি কিনে ফেলেন পরী। তখন অবশ্য অনেকে তার এত অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

মাদকাসক্ত পরীমনি

র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে পরীমনির অন্ধকার জগতের বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে।

সূত্র বলছে, টাকার নেশায় সিনে জগতের আড়ালে নিষিদ্ধ পর্নো ব্যবসায় নাম লেখান পরীমনি। সিনেমা শুটিংয়ের আড়ালে পরী মূলত প্রভাবশালীদের ঘনিষ্ঠ হতেই বেশি পছন্দ করতেন। রাজধানীর পাঁচতারকা হোটেলে তাকে লাস্যময়ী ভঙ্গিতে দেখা যায়। প্রায় প্রতিদিনই গভীর রাত পর্যন্ত পার্টি শেষে মদ্যপ অবস্থায় বের হতেন তিনি।

এছাড়া পরী ধূমপানে অভ্যস্ত (চেইন স্মোকার)।

সূত্র বলছে, কয়েকটি ব্যাংকে পরীর মোটা অঙ্কের টাকা রয়েছে। যার বেশিরভাগই তিনি পেয়েছেন শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে। টাকার নেশা তাকে ছাড়ে না। একপর্যায়ে নাম লেখান পর্নোগ্রাফির নিষিদ্ধ জগতে।

এজন্য পরী তার ঘনিষ্ঠ মডেলদের মাধ্যমে একটি চক্র গড়ে তোলেন। উঠতি মডেল এবং চিত্রনায়িকাদের পর্নোছবি তুলে পাঠানো হতো কথিত হাই-প্রোফাইলদের কাছে। তার মাধ্যমে অনেকে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হন।

পরীর ঘনিষ্ঠদের তালিকায় আছেন- পুলিশ কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, আমলা, রাজনীতিবিদসহ অনেক প্রভাবশালীর নাম। এদের কেউ কেউ দেশের বাইরে পরীর সঙ্গে ঘুরতে যান। একটি বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান তাকে হ্যারিয়ার গাড়ি উপহার দেন।

চেয়ারম্যানকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এছাড়া পরীর বেশ কয়েকটি ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।

জানা যায়, পরীমনিকে গ্ল্যামার জগতে নিয়ে আসেন রাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার কথিত চলচ্চিত্র প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ। সিনেমায় নাম লেখানোর আগে দীর্ঘদিন তার কাছেই থাকতেন পরী।

চিত্রনায়িকা পরীমনির কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল বুধবার রাতে রাজের রাজধানীর বনানীর বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব। তার বাসা থেকে মাদক ও সিসা সেবনের সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে। এরপর তাকে আটক করা হয়।

স্বল্পশিক্ষিত নজরুল নিজেকে প্রভাবশালী এক আওয়ামী লীগ নেতার একান্ত সচিব (পিএস) বলেও পরিচয় দেন। তিনিই প্রথম পরীমনিকে ঢাকায় এনে চলচ্চিত্রে ভেড়ানোর চেষ্টা করেন।

আরও পড়ুন:

পরীমনি সর্ম্পকে মুখ খুললেন তার প্রথম স্বামী

আরও পড়ুন:

https://rajnitisangbad.com/2021/08/05/%e0%a6%b0%e2%80%8c%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%ac-%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%b2%e0%a7%9f%e0%a7%87-%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%95/

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর