নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :১ আগস্ট, ২০২১ ২:৪১ : অপরাহ্ণ
সরকার করোনাভাইরাসে মৃত্যু ও শনাক্তের প্রকৃত সংখ্যা জানাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, সরকার উদ্দেশ্যমূলকভাবে মৃত্যু ও শনাক্তের প্রকৃত সংখ্যা না জানিয়ে জনগণের সাথে প্রতারণা করছে।
আজ (১ আগস্ট) রোববার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, শনিবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির সভা পর্যবেক্ষণ করে যে, ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট সারাদেশে ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণের হার দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করে বলেন, সরকারের অব্যবস্থাপনার কারণে বেশিরভাগ মানুষ করোনা টেস্ট করাতে পারছে না। হাসপাতালে সংবাদকর্মীদের তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বাধানিষেধ আরোপ করেছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের ভয়ে সংবাদকর্মীরা প্রকৃত তথ্য তুলে ধরতে পারছেন না।
মির্জা ফখরুল বলেন, মানুষ করোনা পরীক্ষার জন্য জেলা হাসপাতাল ও পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতে ভিড় করছে। কিন্তু সরকারের নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে বেশিরভাগ মানুষ করোনা টেস্ট করাতে পারছে না। শুরু থেকেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর করোনা টেস্টের ক্ষেত্রে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে দেশের মানুষের কাছে সঠিক তথ্য প্রকাশিত হচ্ছে না। অন্যদিকে সংক্রমিত ব্যক্তিরা হাসপাতালে বেড ও অক্সিজেন পাচ্ছে না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ঢাকার বাইরের জেলাগুলো থেকে করোনা সংক্রমিত রোগীরা জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে মৃত্যুবরণ করছে। জেলা হাসপাতালগুলোতে পরিস্থিতি উন্নয়নের কোনো প্রচেষ্টা সরকারের নেই। অন্যদিকে ঢাকায় করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে অতিরিক্ত রোগীর চাপে চরম অব্যবস্থাপনা দেখা দিয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের নাগরিকদের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক টিকা সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণের সুনির্দিষ্ট রোড ম্যাপ সরকার এখন পর্যন্ত জনগণের সামনে দিতে পারেনি। সরকার অবলীলায় জনগণকে ভুল তথ্য দিয়ে প্রতারণা করছে। একদিকে সরকার বলছে প্রতি সপ্তাহে ৬০ লাখ টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে, অথচ গত ৭ মাসেও ৬০ লাখ টিকা দিতে পারেনি। সরকার টিকা প্রাপ্তির কোনো নিশ্চয়তা ছাড়াই প্রতিমাসে ১ কোটি টিকা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। যা জনগণের সাথে প্রতারণা ছাড়া কিছুই নয়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রতিমাসে ১ কোটি টিকা দেয়ার জন্য টীকা প্রাপ্তির উৎস সরকার এখন পর্যন্ত জানাতে পারেনি। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এসব উক্তি এখন হাস্যকর হয়ে উঠেছে। এগুলো যে ফাঁকা বুলি, তা বুঝতে বাকি নেই জনগণের। এসব ফাঁকা বুলি না আওড়িয়ে অবিলম্বে টিকা সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণের সুনির্দিষ্ট রোড ম্যাপ জনগণের সামনে তুলে ধরুন।
মির্জা ফখরুল বলেন, অপরিকল্পিত লকডাউনে জনগণের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। বিএনপি এর আগে অনেকবার বলেছে, দিন আনে দিন খাওয়া প্রান্তিক মানুষ, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত, পরিবহন শ্রমিক, মাঝি, রিকশা ও ভ্যান শ্রমিকসহ সকল প্রকার নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্য সহায়তা এবং আর্থিক সহায়তা ব্যতীত লকডাউন কখনো কার্যকর হবে না। এজন্যই বিএনপি এসব মানুষের জন্য এককালীন ১৫ হাজার টাকা অনুদান হিসেবে প্রদানের প্রস্তাব করেছিল। সরকার সেদিকে না গিয়ে দলীয় লোকদের ২ হাজার ৫ শ’ টাকা করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দুর্গত মানুষের কাছে এই সহযোগিতা পৌঁছাচ্ছে না।
করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় চরম ব্যর্থতার জন্য সকল দায় নিয়ে সরকারের পদত্যাগ করা উচিত বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।