নিজস্ব প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :২৮ জুলাই, ২০২১ ১১:৩০ : অপরাহ্ণ
চট্টগ্রামের অন্যতম নান্দনিক ও ঐতিহাসিক স্থান সিআরবি রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন চট্টগ্রামের ২৫ বিশিষ্টজন। স্মারকলিপিতে
সিআরবি এলাকায় সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) প্রস্তাবিত ৫০০ শয্যার হাসপাতাল ও ১০০ শয্যার মেডিক্যাল কলেজ নির্মাণ প্রকল্প বাতিলের জন্য সবিনয় আবেদন জানানো হয়েছে।
বুধবার (২৮ জুলাই) প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ও বিশেষ সহকারীর পৃথক ই-মেইলে এই স্মারকলিপি পাঠানো হয়েছে। এছাড়া বৃহস্পতিবার ফ্যাক্স ও ডাকযোগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একই স্মারকলিপি পাঠানো হবে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের মাধ্যমেও প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রী বরাবর লেখা স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, ‘সভ্যতার অগ্রগতি এবং মানুষের লোভের আঘাতে চট্টগ্রামে প্রকৃতির সব অপরূপ দান আজ তিরোহিত। অবশিষ্ট আছে শুধু মহানগরীর কেন্দ্রস্থলে চট্টগ্রামের ফুসফুস খ্যাত সিআরবি।
শতবর্ষী বৃক্ষরাজি, পাহাড়, টিলা ও উপত্যকায় ঘেরা এই সিআরবি বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যমণ্ডিত একটি অনন্য স্থান। এরকম উন্মুক্ত স্থান চট্টগ্রামে আর নেই। অথচ ঢাকায় রয়েছে রমনা পার্ক, চন্দ্রিমা উদ্যান, বোটানিক্যাল গার্ডেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, বাহাদুর পার্কসহ বৃক্ষশোভিত বহু উন্মুক্ত অঞ্চল ও খেলার মাঠ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার নেতৃত্বে যেখানে বাংলাদেশ জুড়ে বিপুলভাবে বৃক্ষরোপণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেখানে সিআরবি এলাকায় যদি বিত্তবানদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য একটি মুনাফাভিত্তিক বেসরকারি হাসপাতাল নির্মিত হয়- তার চেয়ে বেদনাদায়ক ঘটনা আর কি হতে পারে।
চট্টগ্রামের সিআরবির এই উন্মুক্ত স্থানেই এখন আয়োজিত হয় বাংলা নববর্ষ, বসন্ত উৎসব, রবীন্দ্র ও নজরুল জন্মবার্ষিকী এবং বাঙালির চিরায়ত নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। একসময় বাঙালির প্রাণের এই অনুষ্ঠানগুলো আয়োজন করা হত ডিসি হিলে, সার্কিট হাউজের সামনে উন্মুক্ত স্থানে, যা এখন জিয়া শিশু পার্ক এবং আউটার স্টেডিয়ামে যা এখন একটি বিশাল কংক্রিট আচ্ছাদিত সুইমিংপুল ও বিপণি কেন্দ্র।
মাস্টারপ্ল্যানের আলোকে ২০০৯ সালে সিডিএর প্রণীত ‘ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান’-এ সিআরবিকে ঐতিহ্য হিসেবে সংরক্ষণের বিষয়টি উল্লেখ আছে জানিয়ে স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, সিআরবিসহ রেলওয়ের বৃক্ষ আচ্ছাদিত যেকোনো স্থান ব্যতিরেকে রেলওয়ের মালিকানাধীন বিশাল, বিস্তৃত সমতল ভূমির যে কোনো একটি জায়গায় হাসপাতালটি নির্মাণ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে নগরীতে বিজিএমই ভবনের কাছে, ইউএসটিসি এবং ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের পাশে এই হাসপাতালটি নির্মাণ করা যেতে পারে।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, এই সিআরবিতেই আছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক শহীদ আব্দুর রবসহ আরও ৮-১০ জন শহীদের সমাধি। বাঙালির শ্রেষ্ঠ সন্তান এসব বীর শহীদদের গৌরব স্মৃতি অম্লান ও অক্ষুন্ন থাকুক এই আমাদের কামনা।
আমাদের আকুল আবেদন, চট্টগ্রামের শেষ প্রকৃতিঋদ্ধ স্থান সিআরবিকে রক্ষা করুন।’
স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেছেন- ড. অনুপম সেন, শহীদজায়া বেগম মুশতারী শফী, দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক, দৈনিক পূর্বকোণের সম্পাদক ডা. ম. রমিজউদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক আবুল মনসুর, একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, আন্তর্জাতিক মানবতা বিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান, পেশাজীবী নেতা ডা. এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন, আইনজীবী নেতা ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, একুশে পদকপ্রাপ্ত নাট্যজন আহমেদ ইকবাল হায়দার, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাহবুবুল আলম, কথাসাহিত্যিক ফেরদৌস আরা আলীম, শিক্ষাবিদ আনোয়ারা আলম, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাস, দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশের সম্পাদক রূশো মাহমুদ, দৈনিক পূর্বদেশের সম্পাদক মুজিবুর রহমান, দৈনিক বীর চট্টগ্রাম মঞ্চের সম্পাদক সৈয়দ উমর ফারুক, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফফর আহমেদ, মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলা পরিষদের মহাসচিব মো. ইউনুস, কবি ও সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল এবং চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম জিয়াউদ্দিন।