রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :২৫ জুলাই, ২০২১ ৮:৫৩ : অপরাহ্ণ
বড় লক্ষ্য ছুড়ে দিয়েছিলো জিম্বাবুয়ে। সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে তাই বাংলাদেশ পড়ে গিয়েছিল চ্যালেঞ্জের মুখে। তবে সেই চ্যালেঞ্জ উতরে সৌম্য-শামীম ঝড়ে ম্যাচ ও সিরিজ দুটিই নিজেদের করলো মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল।
রোববার (২৫ জুলাই) হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে ১৯৪ রানের বড় লক্ষ্যে খেলতে নেমে চার বল হাতে থাকতেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় টাইগাররা।
সৌম্য সরকারের ফিফটির সঙ্গে সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও শামীম হোসেনের ছোট্ট ইনিংসগুলো গড়ে দেয় জয়ের ভিত। ৪ বল হাতে থাকতেই জয় নিশ্চিত হয় টাইগারদের। সৌম্য-শামীম ঝড়ে ২-১ এ সিরিজ পকেটে পুড়ে বাংলাদেশ।
১৯৪ রানের বড় লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে নাঈমকে হারিয়ে শুরুতেই ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। প্রথম দুই ওভার দেথে-শুনে ব্যাট করলেও ব্লেসিং মুজারাবানির করা তৃতীয় ওভারে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফেরেন টাইগার ওপেনার নাঈম। আউট হওয়ার পূর্বে করেন মাত্র ৩ রান।
২০ রানে প্রথম উইকেট হারিয়ে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে দলের হাল ধরেন সাকিব আল হাসান ও সৌম্য সরকার। পরপর দুই ছক্কায় ম্যাচে ফেরার আভাস দিলেও জঙ্গুয়ের করা ওভারের চতুর্থ বলে উইকেট হারান সাকিব। দুই ছক্কা ও এক চারে ১৩ বলে ২৫ রান করে ফেরেন সাকিব।
বড় রান তাড়া করতে ক্যারিয়ারের ৫ম ফিফটি পান সৌম্য, এ সিরিজে যেটি তার দ্বিতীয়। ফিফটির পর ক্রিজে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি সৌম্য। দলীয় ১৩৩ রানে লুক জঙ্গুয়ের বলটা তুলে মারতে গিয়েছিলেন সৌম্য, তাতে লং অফে ধরা পড়েছেন তিনি।
ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ ৬৮ রান করে সৌম্য ফেরেন সাজঘরে। ৪৯ বলে ৯ চার ও ১ ছক্কা হাঁকান বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
সৌম্যের বিদায়ের পর ক্রিজে এসেই তাণ্ডব চালান আফিফ। ৫ বলে ২ ছক্কায় ১৪ রানে বোল্ড হন তিনি। এরপর মাহমুদউল্লাহর সঙ্গী হন শামীম পাটোয়ারি। এসেই টানা তিন চারে বাংলাদেশকে জয়ের আরও কাছে নিয়ে গেলেন তিনি। শেষ ২ ওভারে প্রয়োজন মাত্র ১৩ রান।
তবে শামীমের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত থাকতে পারেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক। মুজারাবানির বলে চাকাভার ক্যাচে ফিরেছেন তিনি। ২৮ বলে ৩৪ রান মাহমুদউল্লাহর। শেষদিকে শামীম-নূরুলের ব্যাটে ৪ বল ও ৫ উইকেট বাকি থাকতেই ১৯৩ রান তাড়া করে শেষ ম্যাচের সঙ্গে সিরিজও জিতলো বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া।
এর আগে এই অলিখিত ফাইনালে টস জিতে ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৯৩ রান করে জিম্বাবুয়ে।
মোস্তাফিজুর রহমানকে ছাড়া টাইগারদের বোলিং লাইনআপ যে একেবারেই ছন্নছাড়া, তা আরও একবার দেখা গেল। তিন পেসার তাসকিন, সাইফউদ্দিন, শরীফুল এবং মেহেদী হাসানের জায়গায় নামা বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ বেদম মার খেয়েছেন। একমাত্র সাকিবকেই একটু বুঝে শুনে খেলেছে জিম্বাবুয়ে।
মাত্র ২৬ বলে জিম্বাবুয়ের স্কোর পঞ্চাশ ছাড়িয়ে যায়। অবশেষে দলীয় ৬৩ রানে প্রথম উইকেটের পতন হয়। ২০ বলে ২৭ করা মাররুমানিকে বোল্ড করে দেন এই পেস বোলিং অল-রাউন্ডার। এতেও জিম্বাবুয়ের রানের গতি কমেনি। উইকেটে এসেই ঝড় তোলেন রেগিস চাকাভা। আরেক ওপেনার মাধভেরেও দাপটে ব্যাটিং করছিলেন। ৩১ বলে ৫৯ রানের এই জুটি ভাঙেন সৌম্য সরকার।
১২তম ওভারের প্রথম বলে ডিপ মিড উইকেটে দারুণ ক্যাচ নেন শামিম হোসেন পাটোয়ারী। বল বাউন্ডারির লাইনের উপর দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার আগেই শূন্যে লাফিয়ে বল ভেতরে ঠেলে দেন নাঈম। এরপর শূন্যে ভেসে থাকা বল কিছুটা দৌড়ে গিয়ে তালুবন্দি করেন শামিম। এভাবেই শেষ হয় ২২ বলে ৬ ছক্কায় চাকাভার ৪৮ রানের ইনিংস। যিনি নাসুমের এক ওভারে ৩টিসহ সাকিবের ওভারেও ছক্কা মেরেছেন। নাসুমের আগের ওভারে তো রিভার্স সুইপে ছক্কা মারেন তিনি! একই ওভারের পঞ্চম বলে অধিনায়ক সিকান্দার রাজাকে ফেরান সৌম্য। এই তারকা অল-রাউন্ডার দুই বল করে ‘ডাক’ মারেন।
রাজার বিদায়ের জিম্বাবুয়ের রানের চাকা সচল রাখেন মাধেভেরে। মাত্র ৩১ বলে ফিফটির দেখা পান এই ওপেনার। তবে এরপর বেশিদূর যেতে পারেননি তিনি। সাকিবের করা ইনিংসের ১৬তম ওভারের প্রথম বলেই থার্ড ম্যান অঞ্চলে থাকা শরিফুলের হাতে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। তবে তার আগে মাধেভেরের ব্যাট থেকে আসে ৩৬ বলে ৪ ছক্কায় ৫৪ রানের ইনিংস।
শেষদিকে ফের বিশাল রান খরচ করেন সাইফউদ্দিন। ইনিংসের ১৮তম ওভারে রায়ান বার্লের কাছে ১ ছক্কা ও ৩ বাউন্ডারি হজম করেন তিনি। ওই ওভারে তার খরচ ১৯ রান। তবে পরের ওভারের প্রথম বলেই ডিয়ন মায়ার্সকে (২৩) নাসুম আহমেদের ক্যাচ বানিয়ে থামান শরিফুল। ওই ওভারে রান আসে মাত্র ২টি। কিন্তু সাইফের করা শেষ ওভারে ফের বার্ল ঝড়ে আসে ১৬ রান। শেষ দশ ওভারেই আসে ৯২ রান।
বার্ল ১৫ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৩১ রানে অপরাজিত থাকেন।
বল হাতে ৩ ওভারে ১৯ রান খরচে ২টি উইকেট তুলে নিয়েছেন সৌম্য। ১টি করে উইকেট গেছে সাইফউদ্দিন, শরিফুল ও সাকিবের দখলে।
তিন ম্যাচে ব্যাট হাতে ১২৬ রান করে সিরিজসেরার পুরষ্কার উঠেছে সৌম্যের হাতে।
২০১৩ সালের পর এবার জিম্বাবুয়ে সফরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। টেস্ট সিরিজে স্বাগতিকদের উড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ। দাপট দেখিয়ে ৩-০ ব্যবধানে জিতে নেয় ওয়ানডে সিরিজও। টি-টোয়েন্টি সিরিজের শুরুটাও হয়েছিল দুর্দান্ত। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে জিম্বাবুয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশকে পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ দেয়। শেষ ম্যাচে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বীতা হলেও সৌম্য-শামীম ঝড়ে শেষ হাসিটা হেসেছে বাংলাদেশ।