শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা চট্ট-মেট্টো

১০১ বিশিষ্টজনের বিবৃতি

‘কিছু আমলা ষড়যন্ত্র করে সিআরবিতে হাসপাতাল প্রকল্পের দুঃসাহস দেখিয়েছেন’



নিজস্ব প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :২৪ জুলাই, ২০২১ ১০:৫০ : অপরাহ্ণ

কিছু আমলা ষড়যন্ত্র করে চট্টগ্রামের সিআরবিতে রেলের জায়গায় হাসপাতাল প্রকল্পের দুঃসাহস দেখিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিশিষ্ট নাগরিকরা।

চট্টগ্রামের অন্যতম নান্দনিক ও ঐতিহাসিক স্থান সিআরবিতে হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজ নির্মাণের সিদ্ধান্ত ‘আত্মঘাতী’ হিসেবে আখ্যায়িত করে চুক্তি বাতিলের দাবিতে বিবৃতি দিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক-সাংবাদিক, আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ১০১ জন বিশিষ্ট নাগরিক।

তারা অভিযোগ করে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুশাসনকে কলঙ্কিত করতে প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা কিছু আমলা ষড়যন্ত্র করে রেলের জায়গায় বেসরকারি হাসপাতাল প্রকল্পের দুঃসাহস দেখিয়েছেন।

শনিবার (২৪ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিশিষ্টজনেরা চট্টগ্রামের ফুসফুস সিআরবিকে সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, এই ইট-পাথরের উঁচু দালান আর শিল্প প্রতিষ্ঠানের ভিড়ে শতবর্ষী বৃক্ষে ঘেরা সিআরবিকে এক টুকরো অক্সিজেন প্ল্যান্ট বলা চলে।
পাহাড়ের মধ্যে প্রাকৃতিক শোভা মন্ডিত এলাকায় হাসপাতাল নির্মাণ করতে গেলে শতবর্ষী অনেক গাছ কাটা পড়ার পাশাপাশি এখানকার সবুজ নিসর্গ ধ্বংস হয়ে যাবে।

এছাড়া হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাবিত স্থানে রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আবদুর রবের কবর, যিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের প্রথম নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এই মাটি শহীদের স্মৃতিধন্য। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে এই সিআরবি তথা পাহাড়তলী ছিল বিপ্লবের সূতিকাগার। সেইসব স্মৃতি সংরক্ষণে রেল উদ্যোগ নেয়নি। অথচ শহীদের কবর, শহীদের নামে কলোনি, শহীদের নামে যে সড়ক সেই জমি তারা বেসরকারি হাসপাতালকে বরাদ্দ দিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, সিআরবি এলাকায় এই প্রকল্প স্থাপিত হলে সেটির নেতিবাচক প্রভাব শুধু প্রকল্পের নির্দিষ্ট স্থানেই সীমিত থাকবে না। এটি শুধু শতবর্ষী বৃক্ষ না কাটার বিষয় নয়; সময়ের প্রয়োজনে প্রকল্প এলাকা ঘিরে নতুন নতুন দালান, অবকাঠামো, দোকানপাট, পার্কিং, ফার্মেসি, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, চিকিৎসা সংশ্লিষ্টদের জন্য আবাসিক ভবনে ছেয়ে যাবে। যার ফলে পরিবেশ দূষণ ঘটবে এবং পুরো সিআরবি এলাকাটির প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সাংস্কৃতিক বলয় হুমকির মুখে পড়বে। কিছু আমলা ষড়যন্ত্র করে সিআরবিতে রেলের জায়গায় হাসপাতাল প্রকল্পের দুঃসাহস দেখিয়েছেন।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বলেছে, সিআরবিতে যেকোনো বাণিজ্যিক স্থাপনা মাস্টার প্ল্যানের লঙ্ঘন। ১৯৯৯ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করে চট্টগ্রাম নগরে মাস্টারপ্ল্যান কার্যকর করে সরকার। সেখানে সিআরবির মতো হেরিটেজকে রক্ষা করার কথা বলা হয়েছে।

এ অবস্থায় আমরা চট্টগ্রামবাসীর পক্ষে সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক প্রাকৃতিক ঐতিহ্য ও বন্দরনগরীর ফুসফুস খ্যাত চির সবুজ সিআরবিতে শুধু হাসপাতালই নয়, কোনো ধরনের স্থাপনা করা সমীচীন হবে না। প্রকৃতি ও পরিবেশ বিনাশী সব কর্মকাণ্ডই হবে আত্মবিধ্বংসী।

বিবৃতিতে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে- একুশে পদকপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ ড. অনুপম সেন, শহীদ জায়া বেগম মুশতারী শফি, দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক, আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত, একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন, দৈনিক ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান, পেশাজীবী নেতা ডা. এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম, একুশে পদকপ্রাপ্ত বংশীবাদক ক্যাপ্টেন আজিজুল ইসলাম, আইনজীবী নেতা ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী বাবুল, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন, আওয়ামী লীগ নেতা মফিজুর রহমান, নাট্যজন আহমেদ ইকবাল হায়দার, চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম, চুয়েটের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর আলম, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাস, দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশের সম্পাদক রুশো মাহমুদ, দৈনিক পূর্বদেশ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, দৈনিক বীর চট্টগ্রাম মঞ্চ সম্পাদক সৈয়দ উমর ফারুক, সাংবাদিক আবু সুফিয়ান, বিশ্বজিত চৌধুরী, ওমর কায়সার, রাশেদ রউফ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনজুরুল আলম, প্রাবন্ধিক অজয় দাশগুপ্ত, বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরু বাঙালি, কবি ও সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল, প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফফর আহমেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইউনূস, চিত্রশিল্পী আহমেদ নেওয়াজ, শহীদের সন্তান গাজী সালেহ উদ্দিন, নাট্যজন শিশির দত্ত, অভিক ওসমান, প্রদীপ দেওয়ানজী, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি সাংবাদিক রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, কবি ফাউজুল কবির, কবি ও সাংবাদিক নাজিমুদ্দিন শ্যামল এজাজ ইউসুফী, কবি সাথী দাশ, প্রফেসর ড. মো. সেকান্দর চৌধুরী, অধ্যাপক আবুল মনসুর, প্রফেসর ড. মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী, কাজী এস এম খসরুল আলম কুদ্দুসী, জিনোবোধী ভিক্ষু, মাধব দীপ, শ্রমিক নেতা মৃণাল কান্তি চৌধুরী, আইনজীবী নেতা এ এইচ এম জিয়াউদ্দিন, শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ মো. জাহাঙ্গীর, আবৃত্তিশিল্পী অঞ্চল চৌধুরী, নাট্যকার-নির্দেশক রবিউল আলম, স্থপতি আশিক ইমরান, অধ্যক্ষ হাসিনা জাকারিয়া বেলা, অধ্যাপিকা ফেরদৌস আরা আলীম, পরিবেশবিদ ড. ইদ্রীস আলী ড. আনোয়ারা আলম, স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের শিল্পী মিহির লালা, নাট্য ব্যক্তিত্ব ম. সাইফুল আলম চৌধুরী, শিল্পী কল্পনা লালা, চিত্রশিল্পী দীপক দত্ত, নাট্যব্যক্তিত্ব কুন্তল বড়ুয়া, আইনজীবী ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম বাবু, আবৃত্তিশিল্পী আবদুল হালিম দোভাষ, রাশেদ হাসান, ডা.সরফরাজ খান বাবুল, প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার, নাট্যকার রোসাঙ্গির বাচ্চু, স্বাচিপ নেতা ডা. মিনহাজুর রহমান, শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ দবির উদ্দিন আহমদ, অধ্যাপক আবু তাহের চৌধুরী, শিল্পী আলাউদ্দিন তাহের, অধ্যাপক ভবরঞ্জন বণিক, নাট্য নির্দেশক মুনীর হেলাল, কবি ইউসুফ মুহম্মদ, সাংস্কৃতিক সংগঠক ডা. চন্দন দাশ, চলচ্চিত্র নির্মাতা আনোয়ার হোসেন পিন্টু, মুক্তিযুদ্ধ একাডেমি ট্রাস্ট চট্টগ্রাম বিভাগের আহবায়ক আ ফ ম মোদাচ্ছের আলী, গণজাগরণ মঞ্চ চট্টগ্রামের সমন্বয়কারী শরীফ চৌহান, অধ্যক্ষ কাবেরী সেনগুপ্ত, নারীনেত্রী জেসমিন সুলতানা পারু, চলচ্চিত্র নির্মাতা শৈবাল চৌধুরী, সাংস্কৃতিক সংগঠক শীলা দাশগুপ্তা, কবি রিজোয়ান মাহমুদ, উন্নয়ন ও মানবাধিকার কর্মী কমল সেনগুপ্ত, কবি আবসার হাবিব, জ্যোতির্ময় নন্দী, আইনজীবী মুজিবুল হক, সাবেক সাংসদ সাবিহা মুছা, বিএফইউজে’র যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজী, সংস্কৃতিকর্মী মানসী দাশ তালুকদার, নৃত্যশিল্পী প্রমা অবন্তী, চবি সিন্ডিকেট সদস্য শাহআলম নিপু, গবেষক জামাল উদ্দিন, মুক্তিযোদ্ধা গবেষক ও সাংবাদিক ম. শামসুল হক, নাট্যকার সঞ্জীব বড়ুয়া, নাট্যজন অভিজিৎ সেনগুপ্ত, শিক্ষক নেতা রনজিত কুমার নাথ, নূরুল হক সিদ্দিকী, প্রদীপ কানুনগো, সৈয়দ লকিতুল্লাহ, ওসমান গণি এবং তাপস চক্রবর্তী।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর