শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা আইন-আদালত

মুনিয়ার আত্মহত্যায় বসুন্ধরা এমডির সংশ্লিষ্টতা পায়নি পুলিশ



নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :২২ জুলাই, ২০২১ ৪:৩০ : অপরাহ্ণ

কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার (২১) মৃত্যুর ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগের মামলা থেকে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহানকে অব্যাহতি দিয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে পুলিশ। মুনিয়ার মৃত্যুর পেছনে সায়েম সোবহানের কোনো সংশ্লিষ্টতার তথ্য-প্রমাণ পায়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (১৯ জুলাই) দুপুরে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে এ প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।

পুলিশের দেয়া ওই প্রতিবেদনের ওপর ২৯ জুলাই শুনানির দিন ধার্য করেন আদালত। ওইদিন আদালত সিদ্ধান্ত নেবেন চূড়ান্ত এই প্রতিবেদন গ্রহণ করবেন কিনা।

ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী গণমাধ্যমকে বলেছেন, কলেজছাত্রী মুনিয়ার আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলায় বসুন্ধরার এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। তাই মামলার তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ১৯ জুলাই আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।

মোসারাত জাহান মুনিয়া মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়।

মামলার বাদী মুনিয়ার বড়বোন নুসরাত একটি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তার মামলায় যদি পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় তাহলে তিনি নারাজি আবেদন করবেন।

মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার পরিদর্শক মোল্লা আবুল হাসানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৭ এপ্রিল আনভীরের বিদেশ যাত্রার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন ঢাকার মুখ্য মহানগর আদালত। পরের দিনই মামলাটি থেকে আগাম জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন আনভীর। যদিও এ বিষয়ে আর শুনানি হয়নি।

গত ২৬ এপ্রিল রাতে গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে মুনিয়ার মরদেহ উদ্ধারের পর দায়ের হওয়া মামলায় আসামি করা হয় বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরকে। মামলায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ আনা হয়।

ঘটনার দিন রাতেই মুনিয়ার বোন নুসরাত বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলাটি করেন।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, দুই বছর আগে এক বন্ধুর মাধ্যমে আনভীরের সাথে মুনিয়ার পরিচয় হয়। পরিচয়ের পর থেকে তারা বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় দেখা করতেন এবং সব সময় মোবাইলে কথা বলতেন। আনভীরের সাথে মুনিয়ার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ২০১৯ সালে আনভীর মুনিয়াকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে বনানীতে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন।

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে আনভীরের পরিবার মুনিয়ার সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্কের কথা জানতে পারে। তখন আমার বোনকে (মুনিয়াকে) আনভীরের জীবন থেকে সরে যাওয়ার জন্য হুমকি দেন তার মা।

এ ঘটনার পর আনভীর মুনিয়াকে কৌশলে কুমিল্লায় পাঠিয়ে দেন এবং পরে বিয়ে করবেন বলে আশ্বাস দেন। গত মাসের (মার্চ) ১ তারিখে গুলশানের ১২০ নম্বর সড়কের ১৯ নম্বর বাসার বি/৩ ফ্যাটটি ভাড়া নেন আনভীর। ১ মার্চ থেকে মুনিয়া সেই ফ্ল্যাটেই ছিলেন এবং আনভীর মাঝে মাঝে ওই ফ্ল্যাটে আসা যাওয়া করতেন।

গত ২৩ এপ্রিল ফ্ল্যাট মালিকের বাসায় ইফতার পার্টিতে গিয়ে মুনিয়া ছবি তোলেন। ফ্ল্যাট মালিকের স্ত্রী ফেসবুকে সেই ছবি পোস্ট করলে সেটি আনভীরের পরিবারের একজন দেখে ফেলেন এবং আনভীরকে জানান। বিষয়টি নিয়ে আনভীর মুনিয়াকে বকাঝকা করেন এবং হুমকি দেন। ২৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে মুনিয়া তার মোবাইল নম্বর থেকে নুসরাতকে ফোন করে কান্নাকাটি শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘আনভীর আমাকে বিয়ে করবে না, সে শুধু আমাকে ভোগ করেছে। এছাড়া আমাকে সে ‘মনে রাখিস তোকে আমি ছাড়ব না’ বলে হুমকি দিয়েছে।

এজাহারে বলা হয়েছে, মুনিয়া ফোন করে নুসরাতকে চিৎকার করে বলেন, ‘যেকোনো সময় আমার বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তোমরা তাড়াতাড়ি ঢাকায় আসো।’

এই ফোনের পর কুমিল্লা থেকে ঢাকায় আসেন নুসরাত। গুলশানের ফ্ল্যাটটির দরজা ভেতর থেকে বন্ধ পান তিনি। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে শোয়ার ঘরে মুনিয়ার ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পান।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর