শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪ | ৪ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ৯ জিলকদ, ১৪৪৫

মূলপাতা খেলা

জিম্বাবুয়েকে ‘বাংলাওয়াশ’ করে তামিমদের ঈদ উপহার


রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :২০ জুলাই, ২০২১ ৯:২৫ : অপরাহ্ণ
Rajnitisangbad Facebook Page

সিরিজ আগেই জিতে নিয়েছিল। এবার তিন ওয়ানডে সিরিজের শেষ ও তৃতীয় ম্যাচে ৫ উইকেটে জিতে জিম্বাবুয়েকে তাদেরই মাঠ হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় ডুবালো বাংলাদেশ। এ যেন বাঙালি জাতিকে ঈদ উপহার দিলো তামিম বাহিনী।

২৯৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ১২ বল ও ৫ উইকেট অক্ষত রেখেই জয় পায় বাংলাদেশ। জয়ের মূল কারিগর ছিলেন তামিম ইকবাল। ক্যারিয়ারের ১৪তম সেঞ্চুরি করে ১১২ রানে আউট হন বাংলাদেশ অধিনায়ক।

সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে রান পাননি। ওয়ানডেতে দলের সেরা ব্যাটসম্যান আর এখন দলের অধিনায়ক। কব্জির ব্যাথা নিয়ে পুরো সিরিজ খেললেও বাড়তি একটা প্রত্যাশার চাপ ছিল তামিমের ওপর।

সেই প্রত্যাশা পূর্ণ করেন শেষ ম্যাচে এসে। আজ জিম্বাবুয়ের দেয়া ২৯৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাট হাতে শুরুটা ভালোই করেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। তামিমের ব্যাটে ছিল ভালো ইনিংসের ইঙ্গিত। কিন্তু ছন্দ ধরে রাখতে পারলেন না লিটন । সুইপ শট খেলতে গিয়ে আউট হয়ে গেছেন তিনি। জিম্বাবুয়ের বোলার ওয়েসলি মাধেভেরের বলে সুইপ খেলতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগে মারুমানির হাতে ধরা পড়েন তিনি । সাজঘরে ফেরার আগে ৩৭ বলে ৩২ রানে করেন। ফলে দলীয় ৮৮ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপর তামিমের সঙ্গে দলের হাল ধরেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান।

তবে ভালো শুরু পেলেও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি এই অলরাউন্ডার। ৪২ বলে ৩০ রান করে আউট হয়ে গেছেন সাকিব। দুই উইকেটে হারালেও এক প্রান্ত আগলে লড়াই করতে থাকেন তামিম। তাছাড়া জিম্বাবুয়ে সফরে এবার একেবারেই হাসছিল তার ব্যাট। প্রথম ম্যাচে ‘ডাক’ মারার পর দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আউট হয় ২০ রানে। এরপর তাকে নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়! চারিদিকে গুঞ্জন চলছিল তামিমের ব্যাটে ধার ফুরিয়ে গেছে।

অবশেষে আজ সব সমালোচনার জবাব দিলেন সেঞ্চুরি দিয়ে। এটি তামিমের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ১৪তম সেঞ্চুরি। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরি পাওয়ার পর তিরিপানোর বলে উইকেটকিপার রেগিস চাকাভার গ্লাভসে ধরা পড়েন তিনি। সাজঘরে ফেরার আগে ৯৭ বলে ৮ চার ও ৩ ছক্কায় ১১২ রান করেন।

তামিম আউট হওয়ার পরের বলেই আউট হন মাহমুদুল্লাহ। শূন্য রানে কট বাহাইন্ড হন তিনি।

দ্রুত দুই উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরেন মিঠুন ও নুরুল হাসান সোহান। ব্যক্তিগত ৩০ রানে তুলে মিঠুন আউট হলে দলের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন আফিফ হোসেন ও নুরুল হাসান সোহান। সোহান অপরাজিত থাকেন ৪৫ রানে। ৩৯ বলের ইনিংসটি সাজান ৬টি চারের মারে। আফিফের ব্যাট থেকে আসে অপরাজিত ২৬ রান। তাদের দুজনের ব্যাটে ভর করে জয়ের বন্দরে নোঙ্গর করে টাইগাররা।

জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করলো বাংলাদেশ

এর আগে আজ হোয়াইটওয়াশের লজ্জা এড়াতে শুরু থেকেই দেখে শুনে ব্যাট চালাচ্ছিলেন দুই স্বাগতিক ওপেনার চাকাবাহ এবং মারুমানি। তবে হাত গুটিয়ে বসে ছিল না টাইগার বোলাররা।

দলীয় ৩৬ রানে প্রথম উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। ৯ম ওভারে বল হাতে আসেন সাকিব আল হাসান। এসেই প্রথম তিন বলে দুটি ডট বল দেন আর একটি রান। চতুর্থ বলে সাকিবকে সুইপ করতে যান তাদিওয়ানাসে মারুমানি। তবে সামনে পায়ের বল লাগলে আবেদন করেন টাইগাররা আর তাতেই সাড়া দেন আম্পায়ার। মারুমানি ১৯ বলে ৮ রানে ফেরেন ড্রেসিংরুমে।

এরপর আরেক ওপেনার রেগিস চাকাবাহকে সঙ্গ দিতে আসেন দলপতি ব্রেন্ডন টেইলর। তারা দুজন মিলে বেশ ভালোই খেলছিলেন। চাকা সচল রেখেছিলেন। আর স্কোর এগোচ্ছিল বেশ। তবে ১৮তম ওভারে এসে পা হড়লাকেন টেলর। ২০০তম ওয়ানডে খেলতে নামা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের বলে মিড অফে বল হাওয়ায় তুলে দেন টেলর। আর সেখান থেকে বেশ সহজেই বল তালুবন্দি করেন তামিম ইকবাল। আর তাতেই ৩৯ বলে ২৮ রান করে সাজঘরে ফেরেন টেলর।

তবে আউট হবার আগে অন্যরকম এক কীর্তি গড়েন জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক। প্রতিপক্ষ বিবেচনায় বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বাধিক ১৫০০ রান পূরণ করেন তিনি। যাই হোক টেলর ফিরলে দলের হাল ধরেন রেজিস চাকাভা ও ডিয়োন মায়ার্স। এই জুটিতেই এগিয়ে যেতে থাকে জিম্বাবুয়ে। বিশেষ করে চাকাভা তৃতীয় হাফসেঞ্চুরি ‍তুলে নেন। ৩০তম ওভারে ৭১ রান করে ফেলা এই জুটির প্রতিরোধ ভাঙেন মাহমুদউল্লাহ। ৩৪ রান করা মায়ার্স ফিরে যান বোল্ড হয়ে। পরের ওভারেই দুই ম্যাচ পর খেলতে নামা মোস্তাফিজ ফেরান ওয়েসলে মেধেভেরেকে। কাটার মাস্টারের স্লোয়ারে বিভ্রান্ত হয়ে ক্যাচ উঠিয়ে দেন সাকিবের কাছে।

দ্রুত দুই উইকেট পড়লেও জিম্বাবুয়ে বড় স্কোরের আশা দেখছিল চাকাভার দৃঢ়তায়। ক্যারিয়ার সেরা ৮৪ রান করা এই ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে ফিরিয়েছেন তাসকিন। ফুলার লেংথের বল ফ্লিক করতে গেলে অফ স্টাম্প উপড়ে যায় চাকাভার। এরপর দলের হাল ধরেন সিকান্দার রাজা ও রায়ান। কাটার মাস্টার মোস্তাফিজের বলে জিম্বাবুয়ের সিকান্দার রাজা ৫৭ রান করে আউট হলেও লড়াই চালিয়ে যান অপর প্রান্তে থাকা রায়ান।

তবে তাকে ৫৯ রানে সাজঘরে ফেরান সাইফুদ্দিন। এরপর আর কেউ কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারেনি। বাংলাদেশের পক্ষে বল হাতে তাসকিন আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমান ৩টি করে উইকেট শিকার করেন। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ নিয়েছেন ২টি।

৬৪ রানের জুটি গড়েন তারা পঞ্চম উইকেটে। টানা পঞ্চম ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরির আগে আউট হন মিঠুন।

৪৪তম ওভারে আউট হওয়ার আগে ৫৭ বলে ৩০ রান আসে তার ব্যাটে।

আফিফ হোসেনকে নিয়ে বাকি কাজটুকু সারেন ৫ বছর পর একাদশে সুযোগ পাওয়া নুরুল হাসান। ষষ্ঠ উইকেটে ৩১ রান যোগ করেন দুইজন।

আফিফ ২৬ ও সোহান ৪৫ রানে অপরাজিত থেকে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন।

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর