নিজস্ব প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :২০ জুলাই, ২০২১ ১০:৫০ : পূর্বাহ্ণ
একদিন পরই পবিত্র ঈদুল আজাহা। তাই পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে করোনার ঝুঁকি সত্ত্বেও ঢাকা ছাড়ছে মানুষ। কিন্তু শেষ মুহূর্তের যাত্রায় সব পথেই ভোগান্তি। সড়কে তীব্র যানজট, লঞ্চে ধারণ ক্ষমতার তিনগুণ যাত্রী এবং লোকাল ট্রেনে চরম বিশৃঙ্খলা ও ভোগান্তি সঙ্গী করেই গ্রামে ফিরছে মানুষ।
জানা গেছে, এবারের ঈদ যাত্রা শুরু থেকেই ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানজটের ভোগান্তি সঙ্গী করেই উত্তরবঙ্গের মানুষের যাত্রা শুরু হয়। শেষ দিনে আজ (২০ জুলাই) মঙ্গলবারও এই ভোগান্তি থেকে ঘরমুখো মানুষের মুক্তি মেলেনি। সকাল নয়টা পর্যন্ত ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের টাঙ্গাইলের করোটিয়া থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার অংশে যানজটের কারণে যাত্রীদের নাকাল হতে হচ্ছে। ধীরগতিতে এবং থেমে থেমে চলাচল করছে সব ধরনের পরিবহন।
কালিয়াকৈর মহাসড়ক, টঙ্গী থেকে ভোগড়া হয়ে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার এবং গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে কালিয়াকৈর বাইপাস পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার সড়কে তীব্র যানজট হয়েছে। সাভার বাস স্ট্যান্ড, নবীনগর, ধামরাই ও মানিকগঞ্জের ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে যানজট সৃষ্টি হয়েছে।
যানজটের কারণে চালক ও যাত্রীদের পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। বিশেষ করে শিশুদের ভোগান্তি অনেক বেশি হচ্ছে। এ ছাড়া গরু নিয়ে উত্তরাঞ্চল থেকে ঢাকা অভিমুখে যাত্রা করা ব্যবসায়ীরা পড়েছেন চরম বেকায়দায়। সড়কেই কেটে যাচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইয়াসির আরাফাত জানান, শেষ মুহূর্তে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ অনেক বেড়েছে। মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটে। ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ি সরাতে সময় লাগার কারণে সড়কে পরিবহনের চাপ বেড়ে গেছে। এসব কারণে সোমবার রাত থেকে যানজট দীর্ঘ হয়। ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে পড়ে যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
সকালে সদরঘাট থেকে দক্ষিণাঞ্চলের ১৮ জেলার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে ১২০টি লঞ্চ। দেশের দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার ঘরমুখো মানুষ ভিড় করছে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়াঘাটে। মঙ্গলবার সকাল থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন যানবাহনে চড়ে যাত্রীরা ঘাটে উপস্থিত হয়ে ফেরি ও লঞ্চে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছে।
সোমবার বিকেল থেকে শিমুলিয়া ফেরিঘাট ও লঞ্চঘাট এলাকায় মানুষের ছিলো উপচেপড়া ভিড়। সারারাত ধরেই ফেরিগুলো বিরামহীনভাবে মানুষ ও যানবাহন পারাপার করেছে। এ সময় কোন ফেরি ও লঞ্চেই যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় ছিলো। রাতে কয়েক পশলা বৃষ্টির মধ্যেও যাত্রীদের কাকভেজা হয়ে ভোগান্তি সঙ্গী করেই বাড়ি ফিরতে হয়েছে। মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাটে কয়েক’শ যানবাহনের দীর্ঘ লাইন। প্রতিটি ফেরিতেই মানুষের উপচে পড়া ভিড় রয়েছে।
হুড়োহুড়ি করে লঞ্চে উঠছেন যাত্রীরা। আর এ পরিস্থিতি দেখে বোঝার উপায় নেই দেশে মহামারি চলছে।
নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে বাস টার্মিনালে। তবে, স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে বাস কাউন্টারগুলোতে তেমন কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। পাশাপাশি আসনে যাত্রী না বসানোর নির্দেশনা থাকলেও অনেকক্ষেত্রেই তা মানা হচ্ছে না।
এদিকে কমলাপুর রেলস্টেশনেও আজ সকাল থেকে দেখা গেছে, ঈদে বাড়ি ফেরা হাজার হাজার মানুষের ভিড়। বৃদ্ধ থেকে শুরু করে শিশুসহ অসংখ্য নারী-পুরুষ লাগেজ, ট্রলিব্যাগ ও বস্তা নিয়ে প্রবেশ করছেন স্টেশন কম্পাউন্ডে। যাত্রীদের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। আন্তঃনগর ট্রেনে অর্ধেক আসন ফাঁকা রাখার নিয়ম মানা হলেও লোকাল ট্রেনে ভোগান্তি ও বিশৃঙ্খলা চরমে।