নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :১৮ জুলাই, ২০২১ ৩:৪৩ : অপরাহ্ণ
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের একাংশ (প্রয়াত নূর হোসাইন কাসেমীর অংশের নেতারা) ২০ দলীয় জোট ছাড়ার বিষয়ে মুখ খুলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘তারা সরকারের চাপে টিকতে না পেরে জোট থেকে বেরিয়ে গেছেন। উনারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, অনেক দিন ধরে দেন-দরবার করছেন, শেষ পর্যন্ত এটা হয়েছে।’
আজ রোববার (১৮ জুলাই) দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, রাজনীতি ভাঙাগড়ার খেলা। উনাদের ওপর রাজনৈতিক চাপ, মামলা মোকদ্দমার প্রচণ্ড রকমের চাপ। চাকরি চলে যাবে, বেশির ভাগ মাদ্রাসায় চাকরি করেন। তারা রাজনীতিতে টিকতে পারছেন না। তাই যেতেই পারেন।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতাদের উদ্দেশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যাওয়ার সময় সত্য কথাগুলো বলে যাওয়াই ভালো। অযথা অন্যকে দোষারোপ করে একটা নজির সৃষ্টি করতে চান, এটা ঠিক না। আমাদের সঙ্গে তাদের কখনও কোনো সমস্যা হয়নি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জোট গঠনের সময় ২০-দলীয় জোটের যে ঘোষণাপত্র ছিল, ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে একটা আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য একটা জোট। সেভাবে আন্দোলন করেই নির্বাচনে যাওয়ার একটা ব্যাপার ছিল। সেখানে শরিক যে কোনো দল তার নিজস্ব রাজনীতি করবে, নিজস্ব কথা বলবে। এখানে একটা দলের রাজনীতি আর একটা দলের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার কোনো ব্যাপার নেই। প্রশ্নই উঠতে পারে না।’
জমিয়তের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়াকে উদ্দেশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তিনি যে কথাগুলো বলেছেন, এ কথাগুলো একেবারেই সত্য নয়। কীভাবে তিনি বললেন, আলেম-ওলামাদের গ্রেফতারের বিষয়ে আমরা কিছু বলিনি। আমিই তো সবচেয়ে আগে কথা বলেছি। মানুষ আশা করে যে, আলেম-ওলামারা সত্য কথা বলবেন। কিন্তু এটা ওনারা কীভাবে বললেন? দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাদের প্রতি মানুষের সেই আস্থা থাকবে কিনা আমি জানি না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা শরিয়া আইনে বিশ্বাস করি না এটাও বলেছেন, আমাদের সংগঠন পড়ে দেখবেন শরিয়া আইনের বিষয়টা নাই। উনারা চান ওনারা করুক। শরিয়া আইনের বিষয়ে আমাদের পরিষ্কার করে বলা আছে, আমরা কখনও শরিয়াবিরোধী কোনো আইন পাস করব না। আমরা যখন সরকারে ছিলাম সেটা করিনি।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা শরিয়া আইনের বিরোধিতা করেছি, ইসলামি মূলবোধে বিশ্বাসী না-এসব কথাবার্তা বলা মানে হলো ব্যক্তিগত আক্রমণ করা। এটা আমি মনে করি, উনারা ভালো কাজ করেননি। এ সমস্ত ব্যক্তিগত আক্রমণ থেকে ওনারা দূরে সরে আসবেন। বিরোধী রাজনীতিতে ওনারা টিকতে পারছেন না, সেই কারণে ওনারা চলে যাচ্ছেন, সেটা বলে দিলেই তো হয় যে, সরকারের প্রচণ্ড চাপে আমরা টিকতে পারছি না। মামলা-মোকদ্দমায় ভীষণভাবে ব্যতিব্যস্ত হয়ে গেছি। এটা না বলে কাউকে ব্যক্তিগত দোষারোপ করা সঠিক কাজ নয়।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জমিয়তের যে মহাসচিব ছিলেন প্রয়াত নূর হোসাইন কাসেমী সাহেব, অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় মানুষ। ব্যক্তিগতভাবে আমি খুব শ্রদ্ধা করতাম। একজন সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক মানুষ বলতে যা বোঝায়, তিনি সে রকমই ছিলেন। তিনি বড় আলেম ও ইসলামি চিন্তাবিদও ছিলেন। তিনি মারা যাওয়াতেই সমস্যাগুলো তৈরি হয়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।’
গত ১৪ জুলাই সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ছাড়ার ঘোষণা দেয় জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম (একাংশ)।
এর প্রতিক্রিয়ায় ওই দিন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান বলেছিলেন, জমিয়তের নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে জোট ছেড়েছেন।
প্রসঙ্গত জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম দুই ভাগে বিভক্ত। উভয় অংশ বিএনপি জোটের শরিক। একটি অংশের নেতৃত্বে ছিলেন প্রয়াত নূর হোসাইন কাসেমী। অপর অংশের নেতৃত্বে ছিলেন প্রয়াত মুফতি ওয়াক্কাস। করোনা আক্রান্ত হয়ে নূর হোসাইন কাসেমীর ইন্তেকালের পর এই অংশের এখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাওলানা জিয়াউদ্দিন (ভারপ্রাপ্ত সভাপতি) ও মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া (ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব)। নূর হোসাইন কাসেমী অংশের নেতারা বেরিয়ে গেলেও মুফতি ওয়াক্কাসের অনুসারীরা এখনও ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে রয়েছেন।
২০০১ সালে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়। ২০০১ সালের নির্বাচনে দলটির দুজন নেতা সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন।
আরও পড়ুন:
https://rajnitisangbad.com/2021/07/14/%e0%a6%95%e0%a7%87%e0%a6%a8-%e0%a6%b9%e0%a6%a0%e0%a6%be%e0%a7%8e-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%8f%e0%a6%a8%e0%a6%aa%e0%a6%bf-%e0%a6%9c%e0%a7%8b%e0%a6%9f-%e0%a6%9b%e0%a6%be%e0%a7%9c%e0%a6%b2%e0%a7%8b/