রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :১১ জুলাই, ২০২১ ৮:০১ : পূর্বাহ্ণ
অবশেষে আন্তর্জাতিক ট্রফি উঠেছে মেসির হাতে। ব্রাজিলকে হারিয়ে কোপা আমেরিকার ফাইনালে জয় পেল আর্জেন্টিনা। অ্যাঞ্জেলো ডি মারিয়ার গোলে জয় পেল তারা। ২৮ বছর পর কোপা জয় আর্জেন্টিনার।
১৯৯৩ সালে শেষবার কোপা আমেরিকা কাপ জয় করেছিল লা অ্যালবেসেলেস্তের দল। ২০১৪ সালে এই মারাকানা স্টেডিয়ামেই জার্মানির কাছে ১-০ গোলে হেরে গিয়েছিলেন মেসিরা। সেই ক্ষত আজও দগদগে। অবশেষে আজ কাঙ্খিত জয়টা পেয়ে গেল আর্জেন্টিনা।
মারাকানা স্টেডিয়ামে আয়োজিত কোপা আমেরিকার ফাইনাল ম্যাচের প্রথমার্ধেই ১-০ গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। আজ লিও স্কালোনি একটা ট্রাম্প কার্ড খেলে দেন। এতদিন ধরে যে অ্যাঞ্জেল দি মারিয়াকে দ্বিতীয়ার্ধেরও কিছুক্ষণ পরে মাঠে নামাচ্ছিলেন, আজ তাকেই দলের প্রথমার্ধে দেখতে পাওয়া গেল। সেইসঙ্গে বেড়ে যায় আর্জেন্টিনার খেলার গতিও।
আর্জেন্টিনার কোচ জানতেন, শুরুতেই গোল করতে পারলে বাড়তি আত্মবিশ্বাস পাবে দল। প্রথম একাদশেই রেখেছিলেন ডি মারিয়াকে। সুফলও পেলেন।
রডরিগো ডি পলের বাড়ানো পাস আটকাতে ব্যর্থ হন ব্রাজিলের রেনান লোডি। পা বাড়িয়েছিলেন তিনি, কিন্তু পৌঁছতে পারেননি। সেই বল পেয়ে যান ডি মারিয়া। একাই এগিয়ে যেতে থাকেন বল নিয়ে। তার গতির সঙ্গে পেরে ওঠেনি কেউ। গোলের সামনে পৌঁছে ব্রাজিলের গোলরক্ষক এডেরসন মোরায়েজের মাথার ওপর দিয়ে বল পাঠিয়ে দেন জালের ভিতর। ২২ মিনিটে আর্জেন্টিনাকে ১-০ গোলে এগিয়ে দিলেন ডি মারিয়া।
আজ দুই দলই একটু বেশি আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেছে। ১৫ মিনিটের মাথায় লিওনেল মেসি এবং নেইমার জুনিয়র দু’জনেই চোট পেয়ে মাঠের মধ্যে ছটফট করতে শুরু করেছিলেন। একদিকে ৪-৩-৩ ছকে যেখানে দল নামিয়েছেন স্কালোনি, সেখানেই তিতে ৪-২-৩-১ ছকে নিজেদের গুটি সাজিয়েছেন।
শুরু থেকেই একে অপরের ওপর চাপ বাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছিল দুই দল। ৩৪ মিনিটের মাথায় গোল বক্সের সামনে ফ্রি কিক পেয়েছিল ব্রাজিল। তবে আর্জেন্টিনার মানব প্রাচীরে ধাক্কা খেয়ে ফেরে নেমারের শট। প্রথমার্ধে বল দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে ছিল ব্রাজিল। গোলে দুটো শটও নিয়েছিল তারা। কিন্তু গোল করতে পারেনি।
ম্যাচ শুরুর ৩ মিনিটের মাথায় হলুদ কার্ড দেখেন ব্রাজিলের ফ্রেড। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই তাকে তুলে তিতে। ফ্রেডের বদলে মাঠে নামেন রবের্তো ফিরমিনো। একে অপরের জামা ধরা, চোরাগোপ্তা পা চালানো, ইচ্ছাকৃতভাবে আটকে রাখা চলতেই থাকে দুই দলের মধ্যে। হলুদ কার্ড দেখেন আর্জেন্টিনার লিয়েন্ড্রো প্যারাদেসও।
দ্বিতীয়ার্ধে ব্রাজিলের আক্রমণের ঝাঁঝ অনেকটাই বেড়ে যায়। ৫২ মিনিটের মাথায় গোল পেয়েই গিয়েছিল ব্রাজিল। রিচার্লিসনের শট জালে জড়িয়ে যায়। তবে অফ সাইড ছিলেন তিনি। বাতিল হয়ে যায় সেই গোল।
২ মিনিটের মধ্যে ফের আক্রমণে উঠে আসে ব্রাজিল। ফের সুযোগ পান রিচার্লিসন। তার জোরালো শট আটকে দেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। বারবার আক্রমণে উঠতে থাকে ব্রাজিল। চাপ বাড়তে থাকে আর্জেন্টিনার রক্ষণে। বক্সের মধ্যে এক বার পড়ে যান নেমার। তবে পেনাল্টি দেননি রেফারি।
৮৬ মিনিটের মাথায় নেমারের ফ্রি কিক থেকে বল পেয়ে গিয়েছিলেন পরিবর্তে হিসেবে নামা গ্যাবি। তার শট আটকে দেন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক মার্টিনেজ।
সময় যত এগিয়েছে ব্রাজিল মরিয়া হয়ে উঠেছে। ফ্রি কিক পেয়েছে, কর্নার পেয়েছে, মাঠে আসা কিছু দর্শকের উৎসাহ পেয়েছে কিন্তু গোল করতে পারেননি নেমাররা।
৮৭ মিনিটে নিশ্চিত একটা গোল মিস করেন মেসি। বেশ কয়েকটা সুযোগ ব্রাজিল তৈরি করলেও অবশেষে আর কোনও গোল তারা করতে পারেনি।
বেজে গেল নির্ধারিত সময়ের বাঁশি। আর সেইসঙ্গে গোটা বিশ্বজুড়ে শুরু হয়ে যায় নীল-সাদা সমর্থকদের আনন্দ উচ্ছ্বাস।
গোল্ডেন বুট ও বল দুটোই মেসির
টুর্নামেন্টজুড়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ফুটবল জাদুকর লিওনেল মেসি যে গোল্ডেন বুট ও বল জিতবেন সেটা অনুমিত ছিল। অবশেষে তাই হলো। কোপা আমেরিকার সর্বাধিক গোলদাতার সম্মান পেলেন মেসি। নির্বাচিত হয়েছেন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়। জিতলেন সোনার বুট ও বল।
পুরো টুর্নামেন্টে সর্বাধিক চার গোল করেছেন মেসি। মেসি যে শুধুমাত্র গোল করেছেন তাই নয়, সতীর্থদের দিয়ে গোল করিয়েছেনও। চারটি গোল করার পাশাপাশি দলকে গোল করতে সহায়তা করেছেন পাঁচটি। যা কোপার ইতিহাসে অনন্য এক রেকর্ড।
এদিকে মেসির সঙ্গে গোল্ডেন বুটের জন্য লড়াইয়ে টিকে ছিলেন তারই সতীর্থ লউতারো মার্টিনেজ। তিনি ফাইনালে নামার আগ পর্যন্ত তিনটি গোল করেন। যদি ব্রাজিলের বিপক্ষে আজকের ফাইনালে তিনি গোল করতে পারতেন তাহলে গোল্ডেন বুট মেসির বদলে পেতেন লউতারো মার্টিনেজই। কারণ মেসির চেয়ে কম সময় খেলেছেন তিনি। কিন্তু সেটি আর হয়নি, আর তাই মেসি শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছেন সঙ্গে ব্রাজিল থেকে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন গোল্ডেন বুট।
সেরা গোলরক্ষক মার্তিনেজ
কোপা আমেরিকার ২০২১ সালের আসর নিজের করে নিলেন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক এমিলিয়েনো মার্তিনেজ। সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার গোল্ডেন গ্লাভস উঠল তার হাতে। পুরো আসরজুড়ে দুর্দান্ত গোলকিপিংয়ের ফল পেলেন তিনি।
আলবিসেলেস্তেদের পক্ষে চীনের মহাপ্রাচীর ছিলেন তিনি। আসরের সাত ম্যাচে মাত্র ৩ গোল হজম করেছেন ২৮ বছর বয়সী এ গোলরক্ষক।
মূলত দলকে সেমি থেকে ফাইনালে তিনিই এনেছেন। শ্বাসরুদ্ধকর টাইব্রেকারে কলম্বিয়ার ৩টি শট দুর্দান্তভাবে ঠেকিয়ে দেন তিনি। রচনা করেন মহাকাব্যের।
আর ফাইনালে ব্রাজিল একটি গোলও দিতে পারেনি। রিচার্লিসনের কল্যাণে একবার জালের দেখা পেয়েছে সেলেকাওরা, তবে অফসাইড ভাগ্যে তা আর ঝুলিতে জমা করতে পারেনি তারা।
প্রতি ম্যাচে দুই বা ততোধিক গোল করা ব্রাজিল দলের ফাইনালে গোলশূন্য থাকার অন্যতম কারণ এমি. মার্তিনেজ। পুরো ৯০ মিনিট জাল অক্ষত রেখে নিজ দলের শিরোপা জেতানোয় অবদান রেখেছেন তিনি।
পুরো ম্যাচে গোলপোস্ট বরাবর ১৩টি শট নিয়েছে ব্রাজিল। যার মধ্যে দুইটি ছিল লক্ষ্য বরাবর। দুটি শটই ঠেকিয়ে দিয়েছেন মার্তিনেজ।
বিশেষ করে ম্যাচের ৮৭ মিনিটের সময় ডি-বক্সের ভেতরে বাম পাশ থেকে বুলেট গতির শট নিয়েছিলেন গ্যাব্রিয়েল বারবোসা। সেই শট ঠেকান মার্তিনেজ।
এমন দুর্দান্ত পারফর্ম করলে আসরের সেরা গোলরক্ষক তিনি না হয়ে আর কে হবেন!