শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা রাজধানী

লকডাউনে ঢাকায় যানজট, গাছাড়া ভাব মানুষের



নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :৬ জুলাই, ২০২১ ২:৪০ : অপরাহ্ণ

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাওয়ায় দেশের মানুষকে বাঁচাতে গত ১ জুলাই থেকে এক সপ্তাহের জন্য কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মানার আহ্বানসহ ২১টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রথম তিন দিন প্রশাসনের কড়াকড়ির কারণে রাস্তাঘাট ফাঁকাই ছিল। কিন্তু চতুর্থ দিন থেকে রাস্তাঘাটে মানুষের চলাচল বেড়ে যায়। পঞ্চম দিরে লকডাউনের চিত্র আরও ঢিলেঢালা হয়ে যায়। আজ মঙ্গলবার (৬ জুলাই) ষষ্ঠ দিনে রাজধানীর কিছু কিছু এলাকায় লকডাউন একেবারেই ভেঙে পড়েছে।

আজ সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত খামারবাড়ি, আসাদগেট, ইন্দিরা রোড, বিজয়সরণি, রাসেল স্কয়ার, কল্যাণপুর ও গাবতলীসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, তীব্র যানজট।

দিন যতই যাচ্ছে রাজধানীর সড়কে মানুষ এবং যানবাহনের চাপ ততোই বাড়ছে। সড়কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কঠোর বিধিনিষেধ মানাতে একদিকে যেমন তৎপরতা চালাচ্ছে, অন্যদিকে লকডাউন ভাঙতে দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়েই মানুষ রাস্তায় বের হচ্ছে।

শনির আখড়া থেকে সায়দাবাদ পর্যন্ত কঠোর লকডাউনের প্রতি কারো কোনো তোয়াক্কা নেই। যাত্রাবাড়ী মোড়ে মানুষের প্রচণ্ড ভিড়ের পাশাপাশি রাস্তায় রয়েছে রিকশার দাপট। শত শত রিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল করছে। মতিঝিল এলাকাতেও যানবাহন চলাচল আরও বেড়েছে। ব্যক্তিগত গাড়ি এবং মোটরসাইকেলের চাপ এখানেও বেশি ছিলো।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের রায়েরবাগ এলাকায় কঠোর লকডাউন জারি করা হয়েছে বলে রাস্তাঘাট দেখে মনে হয়নি। কিছু কিছু মিনিবাস চলেছে। এছাড়া ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল, রিকশা এবং কিছু হিউম্যান হলার যাত্রী পরিবহন করেছে। হেঁটে কর্মস্থলে যাওয়া মানুষের ব্যাপক ভিড় ছিলো রাস্তায়। অনেকে পায়ে হেঁটেই কর্মস্থলের দিকে রওয়ানা হয়েছেন।

রাজধানীর গাবতলী এলাকায় পুলিশের চেকপোস্ট থাকলেও যানবাহন ও মানুষের চলাচলে কোনো বাধা নেই। সকালে এখানে চেকপোস্টে ২০-২৫ জন পথচারীকে আটক করে পুলিশ। মিরপুর জোনের ট্রাফিক বিভাগের এসি মিজানুর রহমান জানান, তারা যৌক্তিক কারণ ছাড়া বের হয়েছে। তাদেরকে আইনানুগ ব্যবস্থার আওতায় আনা হবে। কোন যৌক্তিক কারণ ছাড়াই তারা রাস্তায় বেরিয়েছে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় সেনাবাহিনীর চেকপোস্ট বসানো হলেও মানুষের ভিড় এবং যানবাহনের সংখ্যার কমতি নেই। এখানে সেনাসদস্যরা রিকশা, মোটরসাইকেল ব্যক্তিগত গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সময় যানবাহনের দীর্ঘ লাইন পড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। ধানমন্ডি ২৭ নম্বর, আসাদগেট, শ্যামলীসহ এলাকার বিভিন্ন স্থানে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে।

অলিগলিতেও মানুষের উপস্থিতি বেড়েছে। তাদের কেউ বের হয়েছেন বাজার করতে, কেউ কর্মস্থলে যোগ দিতে, কেউ সকালের নাস্তা করতে। আবার কেউবা বের হয়েছেন হাঁটতে।

এদিকে কঠোর লকডাউনের মধ্যেও দোকান খোলা রাখার ঘোষণা দিয়েছে দোকান মালিক সমিতি। গতকাল সোমবার তারা গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছে। এরপরই আজ সকাল থেকে রাজধানীর প্রায় সব জায়গাতেই অনেক দোকানপাট আংশিকভাবে খুলতে দেখা যাচ্ছে। রাজধানীর পান্থপথের বেশ কয়েকটি ফার্নিচারের দোকান বিশেষ করে যেগুলো অলিগলির একটু ভেতরে রয়েছে সেগুলোতে বেচাকেনা চলছে। এছাড়া ছোট ছোট মার্কেটগুলোর দোকানপাট খুলেছে। সব এলাকার অলি গলির ভেতরের দোকানপাট পুরোপুরি খোলা রয়েছে। কাঁচাবাজারে প্রতিদিনের মতোই ভিড় লেগেই ছিলো।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে দেশে করোনা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নেবে-যা নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যেতে পারে।

মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে সারাদেশে কঠোর লকডাউন শুরু হয়। যা শেষ হওয়ার কথা ছিলো আগামীকাল বুধবার (৭ জুলাই) মধ্যরাতে। এরমধ্যে লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর সুপারিশ করে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। এই প্রেক্ষাপটে লকডাউনের মেয়াদ আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর