শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা চট্ট-মেট্টো

অষ্টম শ্রেণি পাস করে নিউরোমেডিসিন, স্নায়ুরোগ, ডায়াবেটিস ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ!



নিজস্ব প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :৬ জুলাই, ২০২১ ১০:৩০ : অপরাহ্ণ

নিউরোমেডিসিন, স্নায়ুরোগ, ডায়াবেটিস ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ হিসেবে তিনি গত ৮ বছর ধরে চিকিৎসা করছেন। অথচ ডাক্তারি পাস তো দূরের কথা, লেখাপড়ার দৌড় তার অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। তিনি একসময় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ড বয়ের চাকরি করতেন। ওয়ার্ড বয়ের অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে তিনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তকমা লাগিয়ে দিব্যি রোগী দেখছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। তার এই জালিয়াতি ও প্রতারণা অবশেষে পুলিশের জালে ধরা পড়লো।বেরিয়ে এলো তার হাড়ির খবর।

মঙ্গলবার (৬ জুলাই) দুপুরে মুহাম্মদ খোরশেদ আলম (৪২) নামে এই ভুয়া চিকিৎসককে আটক করেছে আকবর শাহ থানা পুলিশ। কথিত এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক গত ৭ মাস ধরে চট্টগ্রাম নগরীর আকবর শাহ থানার কর্নেল জোন্স সড়কের কাট্টলি মেডিকেল হল নামে একটি ফার্মেসিতে চেম্বার খুলে রোগী দেখে আসছিলেন। সাইনবোর্ড ও ভিজিটিং কার্ডে নামের পাশে তিনি যুক্ত করেন নানা ডিগ্রির বাহার-এমবিবিএস (ডিএমসি), এফসিপিএস (মেডিসিন), এমডি (নিউরোলজি)। রোগীদের থেকে ভিজিট নিতেন ৫০০ টাকা।

পুলিশের জেরায় প্রথমে খোরশেদ আলম খুব দৃঢ়ভাবে নিজেকে পাস করা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বলে দাবি করেন। কিন্তু পুলিশ তাকে ডিগ্রির সনদ দেখাতে বললে তিনি তার দৃঢ় অবস্থান থেকে সরে আসেন। অকপটে স্বীকার করেন তার সব ডিগ্রি ভুয়া।

বিস্ময়কর বিষয় হলো, খোরশেদ আলম এর আগে ২০১৭ সালে মাগুরায় ও ২০১৩ সালে কুমিল্লায় কথিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সেজে চেম্বার খুলে রোগী দেখেছিলেন। কিন্তু এই দুই জায়গায় তিনি মোবাইল কোর্টের কাছে ধরা পড়েছিলেন। মাগুরায় একবছর ও কুমিল্লায় তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছিল মোবাইল কোর্ট।

খোরশেদ আলম চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানার আবদুর রহিমের ছেলে। বর্তামানে তিনি নগরীর পাহাড়তলী থানার সরাইপাড়া এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকতেন।

তিনি তার ভিজিটিং কার্ডে নগরীর জামাল খান এলাকার আল্ট্রা অ্যাসে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নাম লিখে প্রতারণার আশ্রয় নেন। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি সেখানে চেম্বার করতেন না।

অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া আকবর শাহ থানার এস আই বদিউল আলম রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘একজন রোগী খোরশেদ আলমের চিকিৎসা নিয়ে সন্দেহ করে থানায় এসে অভিযোগ করেন, তিনি ভুয়া চিকিৎসক। এরপর আমরা তার চেম্বারে হানা দিই। জিজ্ঞাসাবাদে প্রথমে তিনি খুব দৃঢ়ভাবে নিজেকে ডিগ্রিধারী চিকি’সক বলে দাবী করেন। কিন্তু পরে তার ডিগ্রির সনদ দেখতে চাইলে তিনি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন বলে স্বীকার করেন।’

তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে খোরশেদ আলম জানিয়েছেন, ঢাকা মেডিকেল ওয়ার্ড বয়ের কাজ করতে গিয়ে তিনি চিকিৎসা বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। এই অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে তিনি গত ৮ বছর ধরে ডাক্তার সেজে চেম্বার খুলে রোগী দেখা শুরু করেন। মূলত ৫০০ টাকা করে ভিজিটের লোভে তিনি চিকিৎসক সেজে রোগী দেখা শুরু করেন।’

তার চেম্বার থেকে সিলমোহর, ভিজিটিং কার্ড, প্রেসক্রিপশন, চিকিৎসা সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে জানিয়ে এস আই বদিউল আলম বলেন, ‘খোরশেদ আলমের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।’

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর