নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :২৩ জুন, ২০২১ ৪:০১ : অপরাহ্ণ
কাজীর গরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই-রাজধানীকে ৭ জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন করার চিত্রটাও অনেকটা একই রকম। চলাচলে নিষেধাজ্ঞাও কাগজে কলমেই।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ঢাকার আশপাশের সাত জেলায় লকডাউনে দূরাপাল্লার বাস ও লঞ্চ সার্ভিস বন্ধ করে দেয়া হলেও বন্ধ হয়নি ঢাকামুখী মানুষের স্রোত। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন অফিস ও কলকারখানা খোলা থাকায় নানান উপায় ঢাকায় ফিরছে মানুষ। পুলিশের নজর এড়িয়ে সুযোগ বুঝে কিছু কিছু গণপরিবহনও ঢাকায় ঢুকে পড়ছে।
আজ বুধবার (২৩ জুন) লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে এই চিত্র দেখা গেছে।
রাজধানীর ঢোকার রাস্তাগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে, দূরপাল্লার বাস ছাড়া চলছে সব রকমের যানবাহন। ট্রাক, পিকআপ, মাইক্রোবাস যে যা পাচ্ছেন তাতে করেই আসছেন রাজধানীতে। বের হওয়ার ক্ষেত্রেও একই চিত্র।
সকাল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সাইনবোর্ড রায়েরবাগ এলাকাতে মানুষের ব্যাপক চাপ ছিল। আব্দুল্লাহপুর এলাকাতেও যানবাহনের চাপ ছিল। পণ্যবাহী যানবাহনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত গাড়ি ও মাইক্রোবাস চলাচলের কারণে আমিন বাজার এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। সাইনবোর্ড এলাকায় পুলিশের চেকপোস্ট অনেকটাই শিথিল ছিল। এই সুযোগে সকালের দিকে বেশকিছু দূরপাল্লার বাস যাত্রী নিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করেছে। নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা রুটে চলাচলরত বেশকিছু গণপরিবহন যাত্রীসহ ঢাকায় ঢুকছে। পুলিশ সদস্যরাও তেমন একটা বাধা দিচ্ছে না। তবে দূরপাল্লার কোন বাস যাতায়াত করেনি। সাইনবোর্ড এলাকার চেকপোস্টে পুলিশ থাকতে তারা যাত্রীবাহী পরিবহনকে বাধা দেয়নি। ঠিকানা পরিবহন, শ্রাবণ পরিবহন, ইকবাল পরিবহন, অনাবিল পরিবহন, হিমালয় পরিবহন, বোরাক পরিবহনের বাসগুলো যাত্রী নিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় প্রবেশ করেছে।
দেখা গেছে, রাজধানীর আমিনবাজার, আব্দুল্লাহপুর ও সাইনবোর্ড এলাকায় ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার জন্য শত শত মানুষ পরিবহনের জন্য দাঁড়িয়ে আছে। এসব জায়গা দিয়ে যেসব স্থানীয় পরিবহন চলাচল করছে তার সব পরিবহনেই ছিল উপচেপড়া ভিড়। সব সিট পূর্ণ হওয়ার পর পাশাপাশি দাঁড়িয়েও যাত্রী নিতে দেখা গেছে।
নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে থেকে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ঢাকায় এসে অফিস করেন। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও সিএনজি, অটোরিক্সা, মোটরসাইকেল ও পিকআপ ভ্যানে মানুষকে ঢাকায় প্রবেশ করতে দেখা গেছে। হেঁটে ও ছোট যানবাহনে ভেঙে ভেঙে ঢাকা প্রবেশ করায় নানা দুর্ভোগ ও ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে বলে জানান তারা।
নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা ব্যাংক কর্মকর্তা সাজ্জাদুল ইসলাম জানান, তাকে প্রতিদিন ঢাকায় এসে অফিস করে আবার নারায়ণগঞ্জে ফিরে যেতে হচ্ছে। বাস চলাচল করায় এবং অফিস বন্ধ না থাকায় তাকে চরম দুর্ভোগ নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। সরকার সম্পূর্ণ অপরিকল্পিতভাবে লকডাউন ঘোষণা করে মানুষের ভোগান্তিতে ফেলে দিয়েছে।
মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসা শেখ আবদুল্লাহ জানান, ‘প্রথমে তিনি বাসে উঠেছিলেন। কিছুদূর আসার পর পুলিশের একটি চেকপোষ্টে বাসটি ঘুরিয়ে দেওয়া হয় যাত্রীদের নামিয়ে। পরে সেখান থেকে সিএনজি, মিনি ট্রাক ও মাইক্রোবাসে এসে আমিনবাজার নেমেছেন। পরে পায়ে হেঁটে ব্রিজ পার হয়ে ঢাকায় ঢুকেছেন।’
ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, ‘একদিক খোলা রেখে আরেক দিক বন্ধ রাখলে কারো কোন উপকার হবে না বরং সবার কষ্ট বাড়বে।’
নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘সরকার নারায়ণগঞ্জ জেলায় লকডাউন দিয়েছে। কিন্তু আমি তো ঢাকায় চাকরি করি। আমার অফিস তো খোলা। প্রতিদিন নারয়ণগঞ্জের সানারপাড় থেকে অফিস করতে আসি। কিন্তু আজ (মঙ্গলবার) বাস পাইনি। তাই সিএনজি করে ভেঙে ভেঙে ঢাকা আসতে হয়েছে। ভাড়া নিয়েছে বেশী।’
ঢাকার প্রধান তিনটি বাস টার্মিনাল গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ থেকে আজও কোনো বাস ছেড়ে যায়নি এবং ঢাকার বাইরে থেকেও কোনো বাস টার্মিনালে আসেনি বলে জানা গেছে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিস্তার ঠেকাতে মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী ও গোপালগঞ্জ জেলায় মঙ্গলবার সকাল থেকে ৩০ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। তাই ঢাকামুখী দূরপাল্লার বাস, লঞ্চ ও ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। প্রথমে দূরপাল্লার বাস বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। পরে মঙ্গলবার সকাল থেকে লঞ্চ ও রাত ১২টা থেকে ট্রেন সার্ভিস বন্ধ ঘোষণা করা হয়।