শুক্রবার, ১০ মে, ২০২৪ | ২৭ বৈশাখ, ১৪৩১ | ১ জিলকদ, ১৪৪৫

মূলপাতা জাতীয়

ঢাকাকে কেন বিচ্ছিন্ন করতে চাইছে সরকার?


রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :২২ জুন, ২০২১ ৯:৩০ : অপরাহ্ণ
Rajnitisangbad Facebook Page

‘আগে রাজা-বাদশারা কী করতেন? যখন এরকম আক্রমণ আসে, তখন রাজধানীটাকে রক্ষা করে। এখানেও তাই করা হচ্ছে।’- ঢাকার চারদিকের সাতটি জেলায় জারি করা বিশেষ লকডাউন প্রসঙ্গে এ কথা বলেন ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক নজরুল ইসলাম।

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় চলমান বিধিনিষেধের মধ্যেই মঙ্গলবার (২২ জুন) থেকে ঢাকার আশেপাশের সাতটি জেলায় নয়দিনের বিশেষ লকডাউন শুরু হয়েছে। এর মাধ্যমে রাজধানীকে দেশের বাকি জেলাগুলো থেকে এক প্রকার বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে বলা যায়।

এমন সময় সরকার এই ব্যবস্থা নিয়েছে, যখন সীমান্তবর্তী জেলাগুলোসহ দেশের অনেক জেলায় সংক্রমণের হার বেড়ে গেছে, অনেক জেলায় স্থানীয়ভাবেও লকডাউন চলছে।

কিন্তু ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করার প্রতি সরকার কেন জোর দিয়েছে?

কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির একজন সদস্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সীমান্তবর্তী জেলাগুলো পার হয়ে ভেতরের জেলাগুলোতেও কোভিড সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। এটা তো আর থেমে থাকবে না।’

সব কিছু বন্ধ
সরকারি নির্দেশনা দেয়ার পরেও সেটা বাস্তবায়নের মূল দায়িত্ব থাকে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ওপর। সেখানে স্বরাষ্ট্র, সংস্থাপন আর স্থানীয় সরকার-তিনটি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কাজ করেন। অতীতে তাদের সমন্বয়হীনতার কারণে অনেক স্থানেই লকডাউন পুরোপুরি সফল করা যায়নি। তবে বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, এবার সেটা বাস্তবায়ন হবে।

যে সাত জেলায় বিশেষ লকডাউন জারি করা হয়েছে, তার একটি ঢাকা বিভাগের রাজবাড়ী জেলা।

এতদিন এসব স্থানে চলাচলে বিধিনিষেধের কথা বলা হলেও সীমিত যাত্রী নিয়ে গাড়ি চলাচল, দোকানপাট বা শপিং-মল খোলা ছিল। তবে বিশেষ লকডাউনে জরুরি সেবা ছাড়া আর সব কিছু বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে।

ঢাকার চারদিকের জেলাগুলোর প্রধান সড়কগুলোর বিভিন্ন পয়েন্টে বাধা তৈরি করে ঢাকামুখী বা ঢাকা থেকে বের হওয়া গাড়ির চলাচল আটকে দেয়া হচ্ছে। নৌ-চলাচল বন্ধ রয়েছে, রেল থামছে না লকডাউন জারি করা জেলাগুলোর স্টেশনে।

রাজবাড়ীর রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বলেছেন, তারা জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি করে লকডাউন কার্যকরে সক্রিয় অবস্থান নিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘সব স্থানে আমাদের মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছে। মার্কেট এলাকাগুলোয় দেখছি, নিত্যপ্রয়োজনীয় বা অত্যাবশ্যক জিনিসপত্র ছাড়া অন্যসব দোকান বন্ধ রয়েছে। মানুষজন যাদের বাইরে দেখেছি, তারা ওষুধের দোকানে আসা বা কর্মক্ষেত্রে যাওয়া মানুষ।’

লকডাউনের মাধ্যমে বৈষম্য
দোকানীরা বলছেন, লকডাউনের মাধ্যমে বৈষম্য করা হয়েছে। রাজধানী ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে এমন সময় যখন বাংলাদেশে কোভিড আক্রান্ত হয়ে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিনই বেড়েই চলেছে।

দেশে এখন নমুনা পরীক্ষার বিচারে গড়ে প্রতি পাঁচজনের একজন কোভিড রোগী শনাক্ত হচ্ছেন। তবে জনসংখ্যার অনুপাতে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর সংক্রমণ হারের তুলনায় এখনো কম রয়েছে রাজধানীতে।

তাহলে যেখানে, রাজধানীতেই সব কিছু খোলা রয়েছে, সেখানে আশেপাশের জেলায় জারি করা লকডাউন দিয়ে আসলে কী লাভ হবে?

এই প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য বিভাগের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বলছেন, তারা যেকোনো উপায়েই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছেন।

তিনি বলেন, ‘লাভ ক্ষতির হিসাবের চেয়ে সংক্রমণটা প্রতিরোধ করাই হল গুরুত্বপূর্ণ, যেভাবে পারা যায়। যেহেতু ঢাকায় আমরা দেখছি ইদানীং সংক্রমণ সামান্য কম, কাজেই এটা যেন ঢাকার ভেতরে না আসে বা ঢাকায় যারা আছে, তারা যেন বাইরে না যায়-এই চলাচল বন্ধ করতে পারলেই সীমিত হলেও সংক্রমণটা কমানো যাবে বলে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি পরামর্শ দিয়েছে।’

স্থানীয়ভাবে লকডাউন
দেশে ১৫ জুলাই পর্যন্ত চলাচলে বিধিনিষেধ থাকার পরেও ঢাকার চারদিকের সাতটি জেলায় বিশেষ লকডাউনের ঘোষণা এসেছে সরকারের পক্ষ থেকে। এসব জেলার ওপর দিয়ে ঢাকায় চলাচল করতে হয় বিধায়, এই লকডাউনের ফলে ঢাকা এক প্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

গত এপ্রিল মাস থেকেই বাংলাদেশে চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপের কথা বলা হয়। শুরুতে কড়াকড়ি থাকলেও পরবর্তীতে সেই ব্যবস্থা কার্যত ভেঙ্গে পড়ে। এরপর বিধিনিষেধের মধ্যেই যেসব এলাকায় সংক্রমণ বেশি, সেখানে স্থানীয়ভাবে লকডাউন জারির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। কিন্তু চট্টগ্রাম, খুলনা, যশোর, সিলেটের মতো আরও অনেক শহরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি থাকার পরেও, সেখানে এতো কড়াকড়ি ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

তাহলে কেন ঢাকার প্রতি সরকারের এতো গুরুত্ব?

সেই কারণ ব্যাখ্যা করে সরকারের কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলছেন, ‘এর ফলে ঢাকার বাসিন্দাদের একটা নিরাপদ পরিবেশ দেয়া যাবে। আসলে ঢাকা থেকেই তো সব কিছু পরিচালিত হয়। এখানেই মন্ত্রণালয়, সব কেন্দ্র এখানে। তো এখানে যদি সমস্যা দেখা দেয় তাহলে তো সারা দেশ চালানো যাবে না। এই কারণে ঢাকা রক্ষায় এতটা গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।’

তবে অন্য শহরগুলোতেও সংক্রমণ বেড়ে গেলে স্থানীয়ভাবে লকডাউন কার্যকরের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে বলে এর আগে সরকারি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।

সোমবার বিকেলে হঠাৎ আসা লকডাউনের ঘোষণায় ভোগান্তিরও শিকার হয়েছেন বহু মানুষ। অনেক মানুষ পরিবারপরিজন নিয়ে যানবাহন না পেয়ে হেঁটে গন্তব্যে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

জরুরি কাজে ঢাকা এসে বা ঢাকার বাইরে গিয়ে অনেকে আটকে পড়েছেন বলেও খবর পাওয়া যাচ্ছে।

সূত্র: বিবিসি

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর