বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা অর্থ-বাণিজ্য

ইরান নয়, আমিরাত থেকেই এসেছে বে-টার্মিনালের মানসম্পন্ন বিটুমিন



নিজস্ব প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :২২ জুন, ২০২১ ৪:৩০ : অপরাহ্ণ

দেশীয় প্রতিষ্ঠান বে-টার্মিনাল অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোং লিমিটেড সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে সড়ক নির্মাণে ব্যবহৃত উপকরণ বিটুমিন আমদানি করেছে। কিন্তু একটি গোষ্ঠী সরকারি বিভিন্ন সংস্থা এবং ভোক্তাদের কাছে বে-টার্মিনালের আমিরাত থেকে আমদানি করা বিটুমিনকে ইরানি বলে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশের উন্নয়ন কাজের চাহিদার যোগান দিতে প্রায় ২০ বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যের শারজাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাল্ক পেট্রোলিয়াম বিটুমিন আমদানি করছে দেশের স্বনামধন্য শিল্পগ্রুপ পিএইচপি ফ্যামিলির সহযোগী প্রতিষ্ঠান বে-টার্মিনাল। দেশের প্রচলিত আইন, আমদানি নীতি আদেশ মানার পাশাপাশি ল্যাব টেস্টে মান নিশ্চিত করে আমদানি করা হচ্ছে মানসম্পন্ন এসব বিটুমিন। এরপর নিজস্ব কারখানায় প্রক্রিয়াজাতকরণের পর তা বাজারে সরবরাহ করা হয়।

জানা গেছে, গত ১৯ মে মধ্যপ্রাচ্যের শারজাহ থেকে বে-টার্মিনাল সরকারের সব আদেশ মেনে বিটুমিন আমদানি করে।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, ব্যবসায়িক ঈর্ষার কারণে একটি গোষ্ঠী কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে বে-টার্মিনালের বিরুদ্ধে ইরানের বিটুমিন আমিরাতের নামে খালাসের ভিত্তিহীন অভিযোগ করে। দুবাইতে বিটুমিনের প্ল্যান্ট নেই-এমন মিথ্যা তথ্যও প্রচার করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।

পিএইচপি ফ্যামিলির জেনারেল ম্যানেজার (সাপ্লাই চেইন) মোহাম্মদ এরশাদুল মোস্তফা রাজনীতি সংবাদকে জানান, বে-টার্মিনালের আমদানিকৃত শিল্পের কাঁচামাল বাল্ক পেট্রোলিয়াম বিটুমিনের চালান গত ১৯ মে চীনের পতাকাবাহী ‘গোয়াং ঝু ওয়ান’ জাহাজে করে চট্টগ্রাম বন্দরের বর্হিনোঙরে আসে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী এই বিটুমিন ইস্টার্ন রিফাইনারি ল্যাবের পরীক্ষায় মান উত্তীর্ণ হয়। এরপর বারবার তাগাদা দিলেও জাহাজটি জেটিতে ভিড়ছিল না। তখন আমরা মহামান্য আদালতের শরণাপন্ন হই। গত ১৬ জুন আদালত জাহাজ থেকে বিটুমিন খালাসের আদেশ জারি করেন। এর প্রেক্ষিতে বিগত ১৭ জুন থেকে বিটুমিন খালাস শুরু হয়ে ১৮ জুন শেষ হয়। বর্তমানে জাহাজ জেটিতে অবস্থান করছে। মহামান্য আদালতের আদেশ পাওয়া সাপেক্ষে জেটি ত্যাগ করতে পারবে।

পিএইচপি ফ্যামিলি সূত্রে জানা গেছে, মূলত বে-টার্মিনাল দুবাইয়ের শারজা অঞ্চলের ভেরাজকো এফজেডই প্রতিষ্ঠান থেকে এই বিটুমিন আমদানি করেছে। ইস্টার্ন রিফাইনারির ল্যাব টেস্টে ঘোষিত মানে তা উত্তীর্ণ হয়েছে। দুবাই শারজা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এই প্রতিষ্ঠানকে কান্ট্রি অফ অরিজিন সার্টিফিকেট দিয়েছে।

জানা গেছে, ইরানের বিটুমিন আমিরাতের হয়ে বাংলাদেশ আসার কোনো সুযোগ নেই। এমনকি মিথ্যা ঘোষণায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাস নেওয়ারও সুযোগ নেই।

পিএইচপি ফ্যামিলির জেনারেল ম্যানেজার (সাপ্লাই চেইন) মোহাম্মদ এরশাদুল মোস্তফা রাজনীতি সংবাদকে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পণ্য খালাস নেওয়ার পর উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুন্ন করতে বিভ্রান্তিমূলক এমন অভিযোগ তোলা হয়েছে। আমদানি নিষিদ্ধ না হলে যে কোনো পণ্য আমদানি করার অধিকার বাংলাদেশের সকল নাগরিকের রয়েছে।

তিনি বলেন, বিটুমিনের চালানবাহী জাহাজ বন্দরে আটকা পড়াতে আমাদের গ্রাহকদের কাছে সময়মতো বিটুমিন যোগান দিতে পারিনি। এতে আমাদের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। মূলত পণ্যগুলো খালাস হওয়ার পর থেকেই আমাদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করার চেষ্টা চলছে।

বাংলাদেশ নৌবাণিজ্য দপ্তর চট্টগ্রামের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিন বলেন, মহামান্য আদালতের আদেশ পেয়ে গোয়াং ঝু ওয়ান জাহাজ আটক করা হয়েছিল। আদালতের আদেশ না পাওয়া পর্যন্ত জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দর ত্যাগ করতে পারবে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কাস্টমসের একজন কর্মকর্তা জানান, সমস্ত বিষয় বিবেচনা ও দরকারি ডকুমেন্টস, ঘোষিত মান উত্তীর্ণ টেস্ট রিপোর্ট দেখেই বিটুমিন খালাসের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে কিছু তথ্য যাচাই বাছাই করছেন তারা। প্রাথমিকভাবে আমদানিকারক বে-টার্মিনালের কোনো ধরনের তথ্য গোপন বা অন্য কোনো সমস্যা তারা পাননি।

অভিযোগ রয়েছে, সকল বিধি-বিধান মেনে আমদানির পর খালাসের অনুমতি দিলেও একটি গোষ্ঠী মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করে পিএইচপি ফ্যামিলিকে হয়রানি ও সুনাম ক্ষুন্নের চেষ্টা চালাচ্ছেন। গত কয়েকদিন ধরে কাস্টমস কর্মকর্তাদের বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টাও করছেন তারা; যাতে দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিটুমিন আমদানি ব্যাহত হয়। কিন্তু কাস্টমস কর্মকর্তারা এসব বিষয় আমলে না নিলেও এ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর