নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :১৭ জুন, ২০২১ ১:৪০ : অপরাহ্ণ
রাজধানীর বিভিন্ন ক্লাব, মদ ও জুয়া নিয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, তরিকত ফেডারেশন এবং জাতীয় পার্টির সাংসদদের তুমুল তর্কে-বিতর্কে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে জাতীয় সংসদ অধিবেশন।
আজ বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) অধিবেশনের শুরুতেই পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেন জাতীয় পার্টির সাংসদ মুজিবুল হক চুন্নু।
পয়েন্ট অব অর্ডারে আলোচনার শুরুতে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘কয়েকদিন যাবৎ একজন চিত্র নায়িকার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে উত্তরা বোট ক্লাব। কে করল এই ক্লাব? এই ক্লাবের সদস্য কারা হয়? শুনেছি ৫০-৬০ লাখ টাকা দিয়ে এর সদস্য হতে হয়। এত টাকা দিয়ে কারা এর সদস্য হয়? আমরাতো ভাবতেই পারি না। সারাজীবন এত ইনকামও করি না।’
রাজধানীর কয়েকটি ক্লাবের নাম উল্লেখ করে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান চুন্নু বলেন, ‘এসব ক্লাবে মদ খাওয়া হয়। জুয়া খেলা হয়। বাংলাদেশে মদ খেতে হলে লাইসেন্স লাগে। সেখানে গ্যালন গ্যালন মদ বিক্রি হয়। লাইসেন্স নিয়ে খায় তবে এত মদতো বিক্রি হওয়ার কথা নয়।’
কারো নাম উল্লেখ না করে চুন্নু বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তারা এখানে কীভাবে সদস্য হয়? এত টাকা কোথা থেকে আসে?’
রাজধানীর অভিজাত এলাকায় ডিজে পার্টি বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে তিনি বলেন, ‘গুলশান-বারিধারা এলাকায় ডিজে পার্টি হয়, সেখানে ড্যান্স হয়, মদ খাওয়া হয়। এসব আমাদের আইনে নেই, সংস্কৃতিতে নেই, ধর্মে নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলবো, আপনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন-কেন এসব হচ্ছে? কেন বন্ধ করা হবে না? ওই সব ক্লাবের সদস্য কারা হয়? পরীমনির যে ঘটনা সেটা বোট ক্লাবে। ওই জায়গার একজন মালিক আছে। তিনি যেতেও পারেন না, এসব দেখতে হবে।’
পরে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলুল করিম সেলিম, বিএনপির হারুনুর রশীদ, তরিকত ফেডারেশনের সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী এবং বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গাঁ আলোচনায় অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা এ সময় সংসদে উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশে মদ ও জুয়ার লাইসেন্স দেওয়ার জন্য বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে দায়ী করে আওয়ামী লীগের সাংসদ শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ‘এটা তো বোট ক্লাব। জিয়াউর রহমান স্টিমার ক্লাব করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু মদ-জুয়ার লাইসেন্স বন্ধ করে দিয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান আবার চালু করেছিলেন। যারা অপরাধ শুরু করেছে, তাদের আগে বিচার করা উচিত। ওখান থেকে ধরতে হবে।’
শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বক্তব্যের পর বিএনপি দলীয় সাংসদ হারুনুর রশিদ বলেন, ‘আমাদের বিরোধী দলের একজন সংসদ সদস্য একটা বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু সিনিয়র এক সদস্য (শেখ সেলিম) কোথায় চলে গেলেন? বাংলাদেশে অনেক বিদেশি থাকেন। এছাড়া অন্য ধর্মের মানুষদের জন্য, ডোমদের জন্য মদের বৈধতা আছে। কোন মুসলমানের জন্য আইনে অনুমতি নেই। জিয়াউর রহমান যদি মুসলমানদের মদের লাইসেন্স দিয়ে থাকেন, যদি প্রমাণ করতে পারেন আমি সদস্য পদ ছেড়ে দেব।’
হারুনুর রশিদ বলেন, ‘এসব ক্লাবে মদের ব্যবসার সঙ্গে সরকারি লোক জড়িত। আমি চ্যালেঞ্জ করছি। পুলিশ এসব জায়গা থেকে টাকা নেয়। প্রধানমন্ত্রী কোনো দলের নয়, উনি রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী। এসব খুঁজে দেখা হোক।’
তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, ‘হারুন সাহেবের সদস্য পদ আজই ছেড়ে দেওয়া উচিত। উনি বললেন, জিয়াউর রহমান মুসলমানদের মদ খাওয়ার পারমিশন দেননি। উনি দেখাক, আইনে কোথায় বলা আছে, মুসলমানরা মদ খেতে পারবেন না। আইন এখানে এনে দেখাক। পদ ছেড়ে দিক।’
পরে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ মশিউর রহমান বলেন, ‘এখানে রাষ্ট্রীয় কিছু বিষয় আছে। বঙ্গবন্ধু লাইসেন্স দেননি। ২১ বছরে আইনকে মিসইউজ (অপব্যবহার) করে এটা করা হয়েছে। বিদেশীদের অ্যারেঞ্জমেন্টের জন্য এটা করেছে। ক্লাবগুলোতে একজন ডাক্তার দিয়ে সার্টিফিকেট নিয়ে নেয়, দৈনিক মদ খেতে হবে। তারপর লাইসেন্স নেওয়া হয়। বিএনপি এই লাইসেন্স দিয়েছিল। এখন কোনো মুসলমান যদি মদ খায়, সেখানে সরকারের কিছু করার নেই।’