নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :১০ জুন, ২০২১ ১০:৩৫ : অপরাহ্ণ
সম্প্রতি ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত ফিলিস্তিনিদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে আহ্বান জানিয়েছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত ইউসূফ এস ওয়াই রামাদান। তার সেই আহ্বান প্রচার হয়েছিলো বাংলাদেশের গণমাধ্যমে। এই আহ্বানটিকে কাজে লাগিয়ে অভিনব প্রতারণার মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করে নিজের পকেটে ভরতো ইয়াসির আরাফাত নামের এক যুবক। কিন্তু গোয়েন্দা পুলিশের জালে তার প্রতারণা শেষ পর্যন্ত ধরা পড়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১০ জুন) প্রতারক ইয়াসির আরাফাতকে ঠাকুরগাঁও থেকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
যেভাবে প্রতারণার জাল বিছায় ইয়াসির
প্রতারক ইয়াসির আরাফাত প্রথমে আব্দুল্যাহ আল ফয়সাল নামে একটি ফেইক ফেসবুক আইডি খোলে। এরপর সেই আইডিতে ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য সাহায্য চেয়ে পোস্ট করে সে। ওই পোস্টে সে কয়েকজনের কাছ থেকে আর্থিক সহযোগিতা পাওয়ার স্ক্রিনশর্ট দিয়ে লেখে, ‘ক্ষুদ্র প্রয়াস’। ওই স্ক্রিনশর্টের ছবিগুলোর একটিতে দেখা যায়- চ্যানেল আইয়ের পর্দায় দেখানো হয়েছে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত সাহায্যের আহ্বান করেছেন। আর সহযোগিতা পেতে তিনটি বিকাশ নাম্বার, একটি নগদ এবং একটি রকেট নাম্বার দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু বাস্তবতা হলো-চ্যানেল আইয়ের পর্দায় ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূতের ছবি সম্বলিত যে ছবিতে সাহায্য পেতে নাম্বার দেওয়া হয়েছিল সেগুলো কৌশলে ফটোশপের মাধ্যমে এডিট করে প্রতারক ইয়াসিরের বিকাশ, রকেট ও নগদ একাউন্ট নাম্বার বসিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছে। এই নাম্বারগুলোতে যারা টাকা পাঠিয়েছে, তা নিজের পকেটে ভরেছে প্রতারক ইয়াসির আরাফাত।
এভাবেই চলে আসছিল ইয়াসিরের প্রতারণা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গোয়েন্দা পুলিশের জালে তার প্রতারণা ধরা পড়ে।
এক ব্যক্তি সাহায্য পাঠিয়ে বেশ কিছুদিন পর নিশ্চিত হতে ফিলিস্তিনি দূতাবাসে যোগাযোগ করেন। কিন্তু দূতাবাসে ওই ব্যক্তির নামে কোনো অর্থ গ্রহণ করা হয়নি। এরপর বিষয়টি ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশকে অবহিত করে দূতাবাস। গোয়েন্দা পুলিশ ঘটনার পর্যালোচনা করে দেখতে পায়, এটি একটি অভিনব প্রতারণা। এরপরই ইয়াসির আরাফাতকে ঠাকুরগাঁও থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগ।
গ্রেফতারের পর প্রতারক ইয়াসির গোয়েন্দা পুলিশকে জানায়, সে ঠাকুরগাঁও কলেজে পড়লেও ফেক আইডিতে উল্লেখ করেছিলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। আবার সে বিকাশে চাকরি করে বলে যে তথ্য যুক্ত করেছিল তাও ভুয়া। এসবের স্বীকারোক্তিও দিয়েছে প্রতারক ইয়াসির।
এই বিষয়ে গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, প্রতারক ইয়াসির ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূতের ছবি ব্যবহার করে নিজস্ব মোবাইল নাম্বার এবং বিকাশ নাম্বার দিয়ে মানুষের কাছ থেকে সাহায্য সহযোগিতা চেয়ে আসছিলো। সে ফেক আইডি দিয়ে বিভিন্ন মেয়েদের সাথে সম্পর্কও গড়ে তোলে। এমনকি ওই ফেক ফেসবুক আইডিতে সে বিকাশে চাকরি নিয়েছে উল্লেখ করে মানুষজনের কাছ থেকে প্রতারণা করে। সর্বশেষ ফিলিস্তিনি জনগণের নামে এবং রাষ্ট্রদূতের নামে সে প্রতারণা করেছে। আমরা তদন্ত করে তার অবস্থান শনাক্ত করে তাকে গ্রেপ্তার করি।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তারের পর সে আমাদের কাছে স্বীকার করেছে, সে এই প্রতারণার মাধ্যমে কয়েক হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তাকে গ্রেপ্তার না করলে সে আরও মানুষের সাথে প্রতারণা করতো। তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।