সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪ | ১৬ বৈশাখ, ১৪৩১ | ১৯ শাওয়াল, ১৪৪৫

মূলপাতা রাজধানী

যাত্রী সেজে ভয়ঙ্কর ছিনতাইকারী ওরা


নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশের সময় :৫ জুন, ২০২১ ৪:০১ : অপরাহ্ণ
Rajnitisangbad Facebook Page

বিদেশ থেকে আত্মীয় আসবে, তাই তাকে বিমানবন্দর থেকে রিসিভ করতে গাড়ি লাগবে। এমন কৌশল খাটিয়ে প্রাইভেটকার ভাড়া করতো একটি চক্র। ভাড়া নেওয়া প্রাইভেটকার নিয়ে সুবিধাজনক স্থানে গিয়ে ড্রাইভারকে হাত-পা বেঁধে রাস্তায় ফেলে দিয়ে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যেতো চক্রটি। দীর্ঘদিন ধরে এমন কাজ করে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকলেও অবশেষে গোয়েন্দা জালে ধরা পড়েছেন তারা।

ভয়ঙ্কর গাড়ি ছিনতাইকারী চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।

আজ শনিবার (৫ জুন) ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ছিনতাইকারী এই চক্রের তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।

তিনি জানান, শুক্রবার নরসিংদী ও কুমিল্লার একাধিক স্থানে অভিযান চালিয়ে এই চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ছয় ছিনতাইকারী হলেন- মীর মিজান মিয়া, হাবিব মিয়া, ফারুক, কামাল মিয়া, আলামিন ও মোবারক।

হাফিজ আকতার বলেন, একটি দস্যুতার মামলার রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে এই চক্রটির সন্ধান মিলেছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণার মাধ্যমে প্রাইভেটকার চুরি করলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলো। অন্য মামলার তদন্তে তাদের চক্রের সদস্য হাবীব মিয়াকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য বেরিয়ে আসে।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, উত্তরা পূর্ব থানায় দস্যুতা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে একটি চক্র আছে যারা কৌশলে প্রাইভেটকার ভাগিয়ে নিয়ে অল্পদামে বিদেশ থেকে দেশে কয়েক মাসের জন্য ঘুরতে আসা ব্যক্তিদের কাছে ওইসব গাড়ি বিক্রি করে দিচ্ছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে প্রথমে হাবীব মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল নরসিংদী ও কুমিল্লা জেলার একাধিক স্থানে অভিযান করে তাদের আরও ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তাররকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে হাফিজ আকতার বলেন, গত ২১ এপ্রিল গ্রেপ্তারকৃত মো. হাবিব মিয়া তার বিদেশ ফেরত এক আত্মীয়কে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে আনার কথা বলে কিশোরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে একটি হাইয়েস মাইক্রোবাস ভাড়া করে। পরদিন ২২ এপ্রিল আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে মাইক্রোবাস চালক মো. আবুল বাশার গ্রেপ্তারকৃত হাবিবের দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী করিমগঞ্জ থানা এলাকা থেকে চার জন যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। ওইদিন রাতে আনুমানিক ১১টায় তাদের বহনকৃত মাইক্রোবাসটি ঢাকার আব্দুল্লাহপুরে পৌঁছালে অজ্ঞাতনামা যাত্রীবেশে গ্রেপ্তারকৃতরা লুঙ্গি, গামছা ও দড়ি দিয়ে মাইক্রোবাস চালক মো. আবুল বাশারের হাত-পা বেঁধে ফেলে। এরপর মাইক্রোবাসের নিয়ন্ত্রণ তারা নিয়ে নেয়।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, গ্রেপ্তারকৃত ফারুক মাইক্রোবাসটি চালিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানাধীন গাউছিয়া নরিকান্দী রোডে নিয়ে যায়। এরপর মাইক্রোবাসের চালক মো. আবুল বাশারকে চলন্ত গাড়ি থেকে ফেলে দিয়ে সোনারগাঁও-এর দিকে চলে যায় তারা। পরে গ্রেফতারকৃত হাবিব গাড়িটি চালিয়ে কুমিল্লা জেলার চান্দিনা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নিয়ে গিয়ে সেখানে অবস্থানরত গ্রেফতারকৃত মিজানের কাছে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়। এরপর গ্রেফতারকৃত মিজান ভুয়া নম্বর প্লেট ও কাগজপত্র সংগ্রহ করে কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার থানার বিভিন্ন এলাকায় ভাড়ার বিনিময়ে ওই গাড়িটি চালাতো।

হাফিজ আকতার বলেন, এই চক্রটি এখন পর্যন্ত কী পরিমাণ গাড়ি চুরি করেছে তার তদন্ত চলছে। তবে তারা জানিয়েছে-তাদের ছিনতাইকৃত প্রাইভেট কারগুলো তারা সিলেটে বেশি বিক্রি করেছে। কারণ সিলেটে বিদেশ ফেরত বহু দেশি নাগরিক আসে কয়েক মাসের জন্য। ওই প্রবাসীরা কয়েক মাসের জন্য অল্পদামে গাড়ি কিনতে চায়। আর এই চক্রটিও ওই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছিলো। তবে প্রবাসীরা গাড়ি কেনার সময় বুঝতে পারে না গাড়ি চুরিকৃত কিনা। যদিও পরবর্তীতে ফেঁসে যাচ্ছে তারাই। তাই গাড়ি কেনার আগে অবশ্যই বিআরটিএ’র অনুমোদন আছে কি না এবং কার নামে অনুমোদন রয়েছে সেগুলো যাছাই বাছাই করার অনুরোধ করছি।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, এই চক্রটি ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকতে গ্রামের বিভিন্ন সহজ সরল মানুষের কাছ থেকে অব্যবহৃত সিম কিনে ব্যবহার করতো। তারা মনে করতো সেসব সিম ব্যবহার করলে তাদেরকে ধরা যাবে না। তাই নিজের নামে রেজিস্ট্রেশন করা সিম অন্যকে না দেওয়ার অনুরোধ করছি আমরা।

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর