রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :৩ জুন, ২০২১ ৭:০৪ : অপরাহ্ণ
নাম নাফতালি বেনেট। ইসরায়েলের সাবেক কমান্ডো এবং পরে প্রযুক্তি খাতের সফল ব্যবসায়ী। ৪৯ বছর বয়সী নাফতালি বেনেটই হতে যাচ্ছেন ইসরায়েলের নতুন প্রধানমন্ত্রী।
ইসরায়েলে ১২ বছর ক্ষমতায় থাকা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ক্ষমতার অবসান হতে যাচ্ছে। দেশটিতে আটটি বিরোধী দল মিলে একটি জোট সরকার গঠন করতে সক্ষম হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী ডানপন্থি দল ইয়ামিনা পার্টির প্রধান নাফতালি বেনেট শুরুতে প্রধানমন্ত্রী হবেন। এরপর তিনি মধ্যপন্থী দল ইয়েশ আতিদ পার্টির নেতা ইয়াইর লাপিদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন। অর্থাৎ আগামী ২০২৩ সালের ২৭শে আগস্ট পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবেন নাফতালি বেনেট।
প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হওয়ার উচ্চাভিলাষ বেনেটের অনেক আগে থেকেই। তবে যেভাবে তা পূরণ হতে যাচ্ছে, তা হয়ত তিনি নিজেও ভাবেননি। তার দল ইয়ামিনা গত সাধারণ নির্বাচনেও জিতেছে মাত্র ছয়টি আসনে। কিন্তু অল্প ওই আসনই এখন হয়ে উঠেছে তার তুরুপের তাস।
রাজনৈতিক জীবনে যথেষ্ট আলোচিত উগ্র ডানপন্থি হিসেবে পরিচিত বেনেট। ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ধারণা প্রত্যাখ্যান করে আসা এই নেতা নিজেকে নেতানিয়াহুর চেয়েও ‘কট্টর’ হিসেবে দাবি করে থাকেন।
অতি কট্টরপন্থি হিসেবে চিহ্নিত বেনেট ইসরায়েলকে একটি ইহুদি জাতিরাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করতেই বেশি উদ্যোগী। তিনি বিশ্বাস করেন, জর্ডান নদীর পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম এবং সিরিয়ার গোলান মালভূমি- যা ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর থেকে ইসরায়েল দখল করে রেখেছে- ঐতিহাসিক ও ধর্মীয়ভাবে ইসরায়েলই ওই ভূখণ্ডের দাবিদার।
বেনেটকে এক সময় নেতানিয়াহুর শিষ্য হিসেবেই বিবেচনা করা হতো। তিনি ২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত নেতানিয়াহুর চিফ অব স্টাফের দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু এরপর দুজনের মতপার্থক্য দেখা দেয় এবং নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি থেকে পদত্যাগ করে বেনেট যোগ দেন ধর্মীয় কট্টরপন্থি দল জিয়ুশ হোম পার্টিতে। ২০১৩ সালের নির্বাচনে দলীয় সাফল্যে ভূমিকা রেখে পার্লামেন্ট সদস্য হন তিনি।
এরপর ২০১৯ সাল পর্যন্ত ইসরায়েলের প্রতিটি জোট সরকারে মন্ত্রী হয়েছেন বেনেট। তবে ২০১৯ সালের নির্বাচনে তাদের ডানপন্থি জোট কোনো আসন জিততে ব্যর্থ হয়। মাত্র ১১ মাসের ব্যবধানে সেই ব্যর্থতা কাটিয়ে ইয়ামিনা দলের প্রধান হিসেবে পার্লামেন্টে যোগ দেন তিনি।
ইংরেজি ভাষায় দক্ষ নাফতালি বেনেট প্রায়ই বিদেশি টেলিভিশন নেটওয়ার্কের আলোচনায় অংশ নেন এবং ইসরায়েলের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের পক্ষে সাফাই দেন।
মধ্যপ্রাচ্য সংকটের দুই রাষ্ট্র সমাধান মানেন না বেনেট। ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের ধারণাকে তিনি কঠোর ভাষায় নাকচ করে থাকেন। বেনেট পুরোপুরি ইহুদি সংস্কৃতি মেনে চলেন এবং ইহুদিদের ধর্মীয় টুপি ‘কিপ্পা’ ব্যবহার করেন।
বিবিসি বলছে, রাজনীতিতে নামার আগে সেনাবাহিনীর অভিজ্ঞতা ও ব্যবসায়িক সমৃদ্ধি বিশেষ সুবিধা দিয়েছে বেনেটকে।
নাফাতলি বেনেট ১৯৭২ সালে হাইফায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা ইহুদি অভিবাসী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে স্ত্রী ও চার সন্তানসহ তিনি তেলআবিবের রানানা মহল্লায় বাস করছেন।
জেরুসালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে তিনি উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। পাশাপাশি প্রযুক্তি বিষয়ে তিনি বাণিজ্যিক উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ২০০৫ সালে তার সিকিউরিটি সফটওয়ার সিওটা মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আরএসএ’র কাছে ১৪ কোটি ৫০ লাখ ডলারে (এক হাজার দুই শ’ ২৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা) বিক্রি করেন।
সূত্র: রয়টার্স ও বিবিসি