রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :২৮ মে, ২০২১ ১০:২১ : পূর্বাহ্ণ
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে চতুর্থ মেয়াদে জয়ী হয়েছেন বাশার আল-আসাদ। তবে সিরিয়ার বিরোধী দলগুলো এ নির্বাচনকে ‘প্রহসন’ আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
সিরিয়ার পার্লামেন্টের স্পিকার হাম্মুদা সাব্বাগ লাইভ কনফারেন্সে নির্বাচনের যে ফল ঘোষণা করেছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে বাশার ৯৫ দশমিক ১ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। বাশারের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী মাহমুদ আহমেদ মারি ও আব্দুল্লাহ সালৌম আবদুল্লাহ পেয়েছেন যথাক্রমে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ ও ১.৫ শতাংশ ভোট। আর নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৭৮ দশমিক ৬ শতাংশ।
পঞ্চান্ন বছর বয়সী বাশার আল-আসাদ ২০০০ সাল থেকে সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন। তার বাবা হাফেজ আল-আসাদ প্রায় পঁচিশ বছর সিরিয়া শাসন করেছেন। তারপর দায়িত্ব নিয়েছিলেন বাশার।
সিরিয়াজুড়ে গৃহযুদ্ধের মধ্যে ২০১৪ সালে দেশটিতে সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বিরোধীরা ওই নির্বাচন বর্জন করেছিল।
এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হয়েছে মূলত সরকার-নিয়ন্ত্রিত এলাকায়। এবং বিদেশে সিরীয় কয়েকটি দূতাবাসে ভোটগ্রহণ করা হয়েছে।
তবে নির্বাচনের বিরুদ্ধে বড় ধরনের প্রতিবাদ হয়েছে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইদলিব প্রদেশে।
সিরিয়ার নির্বাসিত বিরোধী নেতারা এই নির্বাচনকে ‘প্রহসন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
সিরিয়ান নেগোসিয়েশন কমিশনের মুখপাত্র ইয়াহইয়া আল আরিদি এই নির্বাচনকে সিরীয় জনগণের অবমাননা হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করতে রাশিয়া ও ইরানের সহযোগিতায় এটি সরকারি একটি সিদ্ধান্ত। এর মধ্য দিয়ে স্বৈরতন্ত্রকেই চালু রাখা হলো।’
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো বলেছে, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু ছিল না। গত বুধবার ভোট দেওয়ার পর বাশার আল-আসাদ পশ্চিমাদের সমালোচনা করে বলেন, পশ্চিমাদের মতামত ‘শূন্য’ হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
এ ছাড়া ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এক বিবৃতিতে সিরিয়ার নির্বাচনকে অবৈধ বলে উল্লেখ করেছেন। নির্বাচনের আগে দেওয়া ওই বিবৃতিতে তারা বলেছেন, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধান ছাড়া এটি অবাধও নয়, সুষ্ঠুও নয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা সুশীল সমাজ সংগঠন, বিরোধী দলসহ সিরীয় জনগণ, যাঁরা এই নির্বাচন প্রক্রিয়াকে অবৈধ বলছেন, তাদের সমর্থন করি।’
এক দশকের গৃহযুদ্ধে সিরিয়া এখন বিপর্যস্ত। ২০১১ সালের মার্চে আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রপন্থিদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সরকারি বাহিনীর রক্তক্ষয়ী পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে এ গৃহযুদ্ধের সূচনা হয়েছিল।
সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধে অন্তত তিন লাখ ৮৮ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে এবং দেশটির প্রায় অর্ধেক মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছে। এর মধ্যে বিদেশে শরণার্থী শিবিরে আছে প্রায় ৬০ লাখ মানুষ।
এরপর থেকেই যুদ্ধ পরিস্থিতি বাশারের অনুকূলে যেতে থাকে এবং রাশিয়ার বিমান হামলা আর ইরানের সামরিক সহযোগিতায় বড় শহরগুলোতে সরকারি বাহিনী আবারও কর্তৃত্ব স্থাপনে সক্ষম হয়।
তবে সিরিয়ার বড় একটি অংশ এখনও বিদ্রোহী, জিহাদি ও কুর্দি নেতৃত্বাধীন বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। এবং দেশটিতে সংঘাতের রাজনৈতিক সমাধানসূত্র এখনও দেখা যাচ্ছে না।
সূত্র: বিবিসি