রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :২৮ মে, ২০২১ ৯:৩০ : অপরাহ্ণ
ভারতে সম্প্রতি বাংলাদেশি এক তরুণীকে নির্মম ও পৈশাচিক যৌন নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর অভিযুক্ত চার যুবক ও দুই তরুণীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে দুজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। নির্যাতিতা ওই তরুণীকে কেরালা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ব্যাঙ্গালুরু পুলিশ। এখন বাংলাদেশের পুলিশ চেষ্টা করছে নির্যাতিতা ও অভিযুক্তদের দেশে ফিরিয়ে আনতে।
ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, এক তরুণীকে বিবস্ত্র করে তার ওপর কয়েকজন পৈশাচিক নির্যাতন চালাচ্ছে।
ভিডিওটি দেখে এক তরুণের পরিচয় শনাক্ত করেছেন নির্যাতিতার বাবা। তার নাম রিফাদুল ইসলাম রিদয়, ঢাকার মগবাজারের বাসিন্দা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি ‘টিকটক রিদয় বাবু’ নামে পরিচিত।
ব্যাঙ্গালুরু পুলিশ গ্রেপ্তার হওয়া যে চার তরুণের নাম প্রকাশ করেছে সেখানে রিদয় বাবুর নামও দেখা গেছে।
অভিযুক্ত অপর তিন তরুণ হলেন-রাখিমুদ্দিন ইসলাম সাগর, মোহাম্মদ বাবু সাহিক এবং হাকিম। তাদের সবার বয়স ২৩ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। তবে গ্রেপ্তার দুই তরুণীর নাম বা পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।
ব্যাঙ্গালুরু পুলিশ জানিয়েছে যে, ভিডিওটি ভারতের পূর্ব ব্যাঙ্গালুরুর রামামুর্থিনগর এলাকার একটি ভবনে গত ছয় দিন আগে ধারণ করা হয়েছিল।
ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর পুলিশ যখন গ্রেপ্তার হওয়া অভিযুক্তদের নিয়ে ওই ভবনে যায় তখন ঘটনাস্থল থেকে সাগর ও রিদয় পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ তাদের পায়ে গুলি চালাতে বাধ্য হয় বলে দাবি করা হচ্ছে। আহত দুইজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
এদিকে এ ঘটনায় বাংলাদেশ ও ভারতে দুটি মামলা দায়ের হয়েছে। প্রথম মামলাটি দায়ের করেছে ব্যাঙ্গালুরু সিটি পুলিশ।
ওই ভিডিও আলামত এবং কয়েকজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে রামামুর্থি নগর পুলিশ স্টেশনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, নির্যাতনসহ আইনের সংশ্লিষ্ট কয়েকটি ধারায় মামলা দায়ের করা হয়।
পরের মামলাটি দায়ের করেন নির্যাতিতার বাবা। বৃহস্পতিবার (২৭ মে) রাতে ঢাকার হাতিরঝিল থানায় রিফাদুল ইসলাম রিদয়সহ অজ্ঞাতনামা আরও ৪ জনকে আসামী করে মানবপাচার ও পর্ণোগ্রাফি আইনে মামলাটি করেন তিনি।
মামলার এজাহারের বলা হয়, গত প্রায় ১২-১৫ মাস আগে মেয়েটি তার বন্ধু রিদয়ের সাথে ভারত হয়ে দুবাই যাবে বলে তার বাবাকে জানায়। তিনি যেতে নিষেধ করার পরও গত প্রায় এক বছর মেয়েটির কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে তিনি জানতে পারেন যে, রিদয় আরও কয়েকজনের যোগসাজশে তার মেয়েকে অসৎ উদ্দেশ্যে পাচার বা আন্তর্জাতিক পাচারকারীদের কাছে বিক্রির উদ্দেশ্যে এক বছর আগেই বিদেশে নিয়ে গেছে।
তার মেয়ে বর্তমানে ভারতে আছেন বলে তিনি লোক মারফতে জানতে পেরেছেন।
পরে কয়েকজন নির্যাতনের ওই ভিডিও ক্লিপটি তাকে দেখালে তিনি তার মেয়ে ও প্রধান অভিযুক্ত রিদয়কে শনাক্ত করেন।
তার আগে ওই ভিডিও ক্লিপটি ভারতে ছড়িয়ে পড়েছিল। গেল বৃহস্পতিবার আসাম পুলিশ তাদের ভ্যারিফাইড অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওতে থাকা অভিযুক্তদের ছবি যুক্ত করে এদের ব্যাপারে তথ্য চেয়ে পোস্ট দেন।
এজন্য বড় ধরনের পুরস্কার দেওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়।
খবর পাওয়া যায় যে, আসামিরা ব্যাঙ্গালুরুতে অবস্থান করছেন। পরে ব্যাঙ্গালুরু পুলিশ বৃহস্পতিবার অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে।
এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে ব্যাঙ্গালুরু পুলিশের সন্দেহ, অভিযুক্ত সবাই একটি সংঘবদ্ধ দলের সদস্য। এবং প্রত্যেকে বাংলাদেশের নাগরিক। নির্যাতিতাকে পাচার করতে ভারতে আনা হয়েছে বলে তাদের ধারণা।
এরই মধ্যে অভিযুক্ত ও নির্যাতিতাকে আইনানুগ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন তেজগাঁও পুলিশের উপ কমিশনার মো. শহিদুল্লাহ।
বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অভিযুক্ত রিদয়ের বিষয়ে তিনি জানান যে, মামলার প্রধান অভিযুক্ত রিদয় আগে থেকেই এ ধরনের নোংরা কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন।
উপ কমিশনার মো. শহিদুল্লাহ বলেন, বাসার কাউকে না জানিয়ে তিনি ৩/৪ মাস আগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। তার বিরুদ্ধে ডাকাতির প্রস্তুতির মামলাও রয়েছে।
অভিযুক্তরা অবৈধভাবে আলাদা আলাদাভাবে বিভিন্ন সময়ে ভারতে গেছেন বলে পুলিশ ধারণা করছে। এ বিষয়ে এখনও তদন্ত চলছে।
এদিকে রিদয়ের পরিবার দাবি করছে, টিকটক করে হঠাৎ করে খুব পরিচিতি পাওয়ার কারণে রিদয়ের সম্মান ক্ষুণ্ণ করতেই এমন অভিযোগ আনা হয়েছে।
সূত্র: বিবিসি