ঢাকায় ভয়ঙ্কর এক নতুন মাদকের সন্ধান পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। লেট স্ট্যাট অব ড্রাগ বা লাইসার্জিক্যাল এসিড ডাই-থ্যালামাইড নামের এই মাদক বিশ্বে সংক্ষেপে এলএসডি নামে পরিচিত।
এই মাদক এতোটাই ভয়ঙ্কর যে, সেবনের পর নেশাকারীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। শুধু তাই নয়, এই মাদক সেবনকারী আশেপাশের অন্যদের জন্য বিপদজনক। মুহুর্তেই অনাকাঙ্ক্ষিত নৃশংস ঘটনা ঘটাতে পারে।
গতকাল বুধবার রাতে রাজধানীর ধানমন্ডি ও লালমাটিয়া এলাকা থেকে এলএসডিসহ তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরা হলেন, সাদমান সাকিব ওরফে লুপল (২৫), আসহাব ওয়াদুদ ওরফে তূর্য (২২) ও আদিব আশরাফ (২৩)। তিনজনের কাছ থেকে ২০০টি এলএসডি জব্দ করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (২৭ মে) সংবাদ সম্মেলনে ডিবি প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার এ তথ্য জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হাফিজুর রহমানের মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে তারা এই মাদকের সন্ধান পেয়েছে। দেশে এলএসডি জব্দের ঘটনা এটাই প্রথম বলে জানিয়েছে ডিবি।
ডিবি প্রধান এ কে এম হাফিজ আক্তার জানান, সম্প্রতি মারা যাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমান নিজেও এই মাদকে আসক্ত ছিলেন।
তিনি জানান, ঈদের পরদিন ১৫ মে ঢাবির কার্জন হল এলাকায় তিন বন্ধুর সঙ্গে মাদক সেবন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র হাফিজুর রহমান। এর প্রতিক্রিয়া শুরু হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে এক ডাব বিক্রেতার ভ্যানে রাখা দা নিয়ে নিজের গলায় আঘাত করেন তিনি। কিছুক্ষণ পর হাসপাতালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন হাফিজুর।
ডিবি প্রধান জানান, এলএসডিসহ তিন জনকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, নেদারল্যান্ডের এক নাগরিকের সাথে তারা টেলিগ্রাম অ্যাপসের মাধ্যমে যোগাযোগ করে পেপ্যাল মেইলের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে মাদকটি গ্রহণ করতেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক গ্রুপ ব্যবহার করে তারা এসব মাদক বিক্রি করতেন। প্রতিটি এলএসডি তিন হাজার টাকা মূল্যে তারা বিক্রি করেন।
গোয়েন্দারা বলছেন, প্রায় এক বছর ধরে ফেসবুকে ‘আপনার আব্বা’ এবং ‘বেটার ব্রউরি অ্যান্ড বিয়ন্ড’ নামে দুটি গ্রুপের মাধ্যমে এলএসডির ব্যবসা করছিল গ্রেপ্তার তিন তরুণ। এক হাজারের বেশি সদস্যের গ্রুপ দুটি পরিচালনা করেন লুপল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর ছাত্রত্ব বাতিল হওয়ার পর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি।
গোয়েন্দারা জানান, খুবই শক্তিশালী এলএসডির ডোজগুলো সাধারণত মাইক্রোগ্রাম হিসেবে নেয়া হয়। এই মাদক উত্তেজক ও আনন্দদায়ক। মনের ওপরও এর প্রভাব রয়েছে। কখনো কখনো এর প্রভাবে ভীতিকর অনুভূতি তৈরি হয়, যাকে ব্যাড ট্রাপ বলা হয়।
গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, নানাভাবে এলএসডি বাজারজাত করা হয়। যেমন: ব্লটার পেপার বা নকশা করা বিশেষ কাগজে এলএসডি মেশানো হয়। এভাবেই এলএসডি বেশি সহজলভ্য। এ ছাড়া ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল আকারে, তরল বা কিউব আকারে পাওয়া যায়।