রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :২১ মে, ২০২১ ১০:০২ : পূর্বাহ্ণ
১১ দিনের রক্তক্ষয়ী হামলা শেষে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দুই পক্ষই যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। মিসরের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের মধ্যকার অস্ত্রবিরতি চুক্তি হয়েছে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টা থেকে (বাংলাদেশ সময় শুক্রবার ভোর ৫টা) এটি কার্যকর হয়।
উভয়পক্ষ বলেছে, অস্ত্রবিরতি চুক্তির কোনোরূপ লঙ্ঘন হলেই শক্ত জবাব দেওয়া হবে। মিসর জানিয়েছে, অস্ত্রবিরতি পর্যবেক্ষণে দুই জায়গায় দুটি প্রতিনিধি দল পাঠাবে তারা।
২০১৪ সালের পর এটাই ছিল দুই দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় যুদ্ধ। হামাস বলেছে, আল-আকসা ও জেরুজালেমের শেখ জারায় ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধের প্রতিশ্রুতি পেয়ে তারা যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছেন।
গাজায় গত ১১ দিন ধরে ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলি হামলায় আশঙ্কায় উৎকণ্ঠায় পার করেছেন প্রতিটি মুহূর্ত।
ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়াকে নিজেদের বিজয় হিসেবে দেখছে হামাস। যুদ্ধবিরতি শুরুর পর পরই ফিলিস্তিনিরা গাজার রাস্তায় নেমে আসে এবং গাড়ির হর্ণ বাজিয়ে আনন্দ উল্লাস করে। এ সময় তারা ‘আল্লাহ মহান’ ‘আল্লাহকে ধন্যবাদ’ এসব স্লোগান দিতে থাকে। মসজিদগুলোর মাইকে মাইকে ঘোষণা করা হয়, ‘ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের বিজয় অর্জিত হয়েছে।’
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর শুক্রবার গাজা শহরে উদযাপনরত হাজার হাজার মানুষের উদ্দেশে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা খলিল আল-হাইয়া বলেন, ‘ইসরায়েলকে পরাজিত করে গাজা যুদ্ধে হামাসের বিজয় হয়েছে। এটি বিজয়ের উচ্ছ্বাস।’
এ সময় তিনি ইসরায়েলের বিমান হামলায় বিধ্বস্ত বাড়িঘর পুনর্নির্মাণের আশ্বাস দেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় উপত্যকায় ২৩২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়, যাদের মধ্যে ৬৫ শিশু ও হামাস যোদ্ধা রয়েছে। হামলায় আহত হয়েছে এক হাজার ৯০০ মানুষ।
হামাসের হিসাব অনুযায়ী, বিমান হামলায় বিপুল জায়গা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার মানুষ।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, হামাস ও সশস্ত্র অন্য সংগঠনগুলো ইসরায়েলের দিকে চার হাজার ৩০০-এর বেশি রকেট ছুড়েছে। এর বেশির ভাগই আটকে দিয়েছে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোম।
ইসরায়েলের পুলিশ জানিয়েছে, গাজা থেকে ছোড়া রকেটে ইহুদি রাষ্ট্রটিতে ১২ জন নিহত হয়েছে, যার মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এ ছাড়া এক ভারতীয় ও থাইল্যান্ডের দুই নাগরিকও প্রাণ হারিয়েছেন।
সম্প্রতি ইসরায়েল ফিলিস্তিনের জেরুসালেমে আল জাররাহ এলাকা দখলে নেওয়ার প্রচেষ্টা চালায়। এ নিয়ে সেখানকার ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের মধ্যে থেমে থেমে উত্তেজনা চলে আসছিল। গত ৭ মে পবিত্র মাহে রমজানের শেষ জুমা অর্থাৎ জুমাতুল বিদা আদায় করতে বিপুল মুসল্লি আল-আকসা মসজিদে সমবেত হলে ইসরায়েলি বাহিনী তাদের ওপর চড়াও হয়। মসজিদে ঢুকে মুসল্লিদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে ইসরায়েলি বাহিনী।
এর দুদিন পর শবে কদরেও আল-আকাসা মসজিদে ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে মুসল্লিদের সংঘর্ষ হয়। এর প্রতিবাদে গাজা সীমান্তে বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে গত ১০ মে থেকে গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
সূত্র: রয়টার্স