রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :১৭ মে, ২০২১ ১১:১২ : পূর্বাহ্ণ
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় টানা অষ্টম দিনের মতো গতকালও রাতভর হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গাজায় রোববার রাতে ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৪২ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ১০ জন শিশু রয়েছে।। ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের মতে, ইসরায়েলের সাথে চলমান সংঘাত শুরুর পর থেকে গতকালই সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, রোববার মধ্যরাতের পর পরই গাযার একটি ব্যস্ত সড়কে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে অন্তত তিনটি ভবন ধসে পরে এবং অনেকে নিহত হয়।
এর পর প্রায় সারা রাত ধরে এবং বিকেলে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলকে লক্ষ্য করে রকেট ছোড়ে হামাস।
সাইরেন বাজার সাথে সাথে লাখ লাখ ইসরায়েলি নিরাপদ আশ্রয়ে গিয়ে আশ্রয় নেন।
ইসরায়েলে হামাসের ছোড়া রকেট মধ্য এবং দক্ষিণ ইসরায়েলের আশকেলন, আশদদ, নেটিভটসহ অন্যান্য এলাকায় আঘাত হানে।
ইসরায়েল বলছে, গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া সংঘাতে দেশটিতে এখনো পর্যন্ত রকেট হামলায় দুই শিশুসহ ১০ জন মারা গেছে।
দেশটির আয়রন ডোম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এসব রকেটের অনেক গুলোকেই প্রতিহত করেছে। তবে এদের মধ্যে কয়েকটি গাড়ি এবং ভবনে আঘাত হেনেছে। এর মধ্যে সন্ধ্যায় ইহুদিদের ছুটির দিন (শাভুয়াটের দিন) সন্ধ্যায় ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আগমুহুর্তে আশকেলনে ইয়াদ মাইকেল সিনাগগের দেয়াল রকেটের কারণে ফুটো হয়ে যায়।
ফিলিস্তিনিরাও সতর্কতা অবলম্বন করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু জনবহুল এবং দরিদ্র গাযা উপত্যকার অনেক বাসিন্দার আসলে যাওয়ার মতো তেমন কোন নিরাপদ আশ্রয় ছিল না।
রিয়াদ এশকুনতানা নামে একজন ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, তিনি তার মেয়েদেরকে বাড়ির এমন একটি ঘরে ঘুম পারিয়েছিলেন যেটি বিস্ফোরণের স্থান থেকে সবচেয়ে দূরে বলে তিনি মনে করেছিলেন। তবে ওই রাতের পর তার মেয়েদের মধ্যে শুধু একজন বেঁচেছিলেন। যার নাম ছিল সুজি। তার বয়স মাত্র ৬ বছর। তার স্ত্রী এবং আরো তিন সন্তান মারা যায়।
এশকুনতানা বলেন, ‘মেয়েরা বেঁচে আছে কিনা তা দেখতে ছুটে যাই আমি। আমার স্ত্রী লাফিয়ে পড়ে মেয়েদের জড়িয়ে ধরে ঘরের বাইরে নিয়ে আসার চেষ্টা করছিল। আর তখনই ঘরটিতে দ্বিতীয় ক্ষেপণাস্ত্রটি আঘাত হানে… ছাদ ধসে পরে আর আমি ধ্বংস্তুপের নিচে পরি।’
পরে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দাবি করে যে, তারা ওই এলাকায় জঙ্গিদের একটি সুড়ঙ্গকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। সুড়ঙ্গটি ধসে পরার কারণে এর উপরে থাকা বাড়িঘরও ধসে পরে। যার কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত বেসামরিক প্রাণহানি ঘটে বলে জানায় তারা।
ইসরাইলের সেনাবাহিনীর দাবি, গতকাল রোববার গভীর রাতে বিরসেবা ও আশকেলন শহরে গাজা থেকে রকেট হামলা চালানো হয়। এরপরই ইসরাইল হামলা চালিয়েছে। হামাস রকেট ছোড়ার পরপরই গাযা শহরে হামাসের নেতা এবং তাদের অবকাঠামোকে লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি এলাকায় বিমানে করে ৮০টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইসরায়েল।
জাতিসংঘ হুঁশিয়ার করে বলেছে যে, গাযায় জ্বালানি সংকট হতে পারে। যার কারণে হাসপাতাল এবং অন্য প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ সংকট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, আরো বেশি সংঘাত হলে ওই এলাকায় “নিয়ন্ত্রণহীন সংকট” তৈরি হবে।
তিনি এমন ভয়ংকর সহিংসতার জরুরী ভিত্তিতে বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।
সূত্র: আল জাজিরা ও বিবিসি