শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা আন্তর্জাতিক

বীভৎস দৃশ্য! নদীতে ভেসে এলো একের পর এক লাশ



রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :১০ মে, ২০২১ ৮:২১ : অপরাহ্ণ

বীভৎস এক দৃশ্য। গঙ্গার পানিতে ভেসে এসেছে গলিত, অর্ধগলিত, পচনধরা লাশ। তা থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে।

স্থানীয়রা আজ সোমবার (১০ মে) সকালে এ দৃশ্য দেখে শিউরে উঠেন। এ কি দেখছেন তারা! একটা, দু’টা নয়। ৪০ থেকে ৪৫টি লাশ!

কেউ কেউ বলছেন, লাশের সংখ্যা ১৫০ ছাড়াতে পারে। এতো লাশ কোথা থেকে এলো গঙ্গায়! কিছুতেই নিজেদের বিশ্বাস করতে পারছিলেন না বিহারের বাক্সার এলাকার মানুষজন।

স্রোতের দিক বিচার করে স্থানীয় প্রশাসনের প্রাথমিক অনুমান, উত্তরপ্রদেশ থেকেই ভেসে এসেছে লাশগুলি এবং মৃতদের মৃত্যু সম্ভবত করোনা সংক্রমণের কারণেই হয়েছে। লাশগুলোর অবস্থা দেখে মনে করা হচ্ছে পাঁচ থেকে সাত দিন আগেই এদের মৃত্যু হয়েছে। সৎকারে অসমর্থ হওয়ায় মৃতের পরিবার দেহগুলি নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছেন।

করোনা পরিস্থিতিতে এভাবে দেহ ভেসে আসায় নদীর জলে সংক্রমণ আরও ছড়ানোর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় লাশ পানি থেকে তুলে তীরে নিয়ে মাটিচাপা দেয়া হয়েছে।

অনলাইন এনডিটিভি এ খবর দিয়ে জানিয়েছে, ভারতে করোনা মহামারি কি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে তার আরেকটি চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে এই ঘটনা। এসব মানুষ করোনায় মারা গিয়েছেন বলে ধারণা করা হয়।

রিপোর্টে বলা হয়, স্থানীয় প্রশাসন মনে করছে মৃত এসব মানুষের আত্মীয়রা হয়তো লাশ দাহ করার বা কবরস্তানে দাফনের কোনো ফাঁকা স্থান পাননি। তাই তারা এসব লাশ গঙ্গার পানিতে ভাসিয়ে দিয়েছেন। সেই লাশ ভেসে এসেছে উজানের উত্তর প্রদেশ থেকে। এতে আরো বলা হয়েছে, সোমবার সকালে বিহারের চৌসা শহরের পাশে গঙ্গা নদীতে এসব লাশ ভাসতে দেখা যায়।

হরর মুভি বা ভৌতিক সিনেমার মতো এ ঘটনায় পুরো এলাকায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এ ঘটনাস্থল চৌসার মহাদেব ঘাটে।

সেখানে তীরে দাঁড়িয়ে চৌসা জেলা কর্মকর্তা অশোক কুমার বলেন, আমরা ৪০ থেকে ৪৫ টি লাশ ভেসে আসতে দেখেছি। তার মতে, এসব দেহ পানিতে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেন, এমন লাশের সংখ্যা হতে পারে ১০০ পর্যন্ত।

আরেকজন কর্মকর্তা কে কে উপাধ্যায় বলেছেন, লাশগুলো ফুলে উঠেছিল। সম্ভবত এগুলো কমপক্ষে ৫ থেকে ৭ দিন আগে পানিতে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে। আমরা এখন এসব মৃতদেহের সৎকারের ব্যবস্থা করছি। কোথা থেকে এই লাশগুলো এসেছে আমাদেরকে তা তদন্ত করে বের করতে হবে। আমাদেরকে বের করতে হবে উত্তর প্রদেশের বাহরাইচ অথবা বারানসি না এলাহাবাদ থেকে এসব লাশ এসেছে। তবে এ লাশগুলো এখানকার নয়।

এসব দেহ থেকে এলাকায় করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আতঙ্কে রয়েছেন ওই শহর ও আশপাশের মানুষজন। তারা মনে করছেন গঙ্গার পানিতেও এই দূষণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। মৃতদেহগুলোর পাশে পানিতেই কুকুর দেখা গেছে বিচরণ করতে। এসব মিলেই আতঙ্ক বৃদ্ধি পেয়েছে।

নরেন্দ্র কুমার নামে এক গ্রামবাসী বলেছেন, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে মানুষজন ভীতশঙ্কিত। এসব মৃতদেহ আমাদেরকে মাটিচাপা দিতে হবে।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন একজন জেলা প্রশাসনিক কর্মকর্তা। তিনি বলেছেন, এই দেহগুলো পানি থেকে তুলে সৎকার করতে তিনি ৫০০ রুপি দেবেন। কিন্তু দেহগুলো কোথাকার তা নিয়ে উত্তর প্রদেশ এবং বিহারের মধ্যে ব্লেমগেম চলছে।

ওদিকে শনিবার আংশিক মারাত্মকভাবে পোড়া কিছু মৃতদেহ ভাসতে দেখা গেছে হামিরপুর শহরে যমুনা নদীতে। ভারতের বিরোধী কংগ্রেস দল অভিযোগ করেছে, করোনায় যে পরিমাণ মানুষ মারা যাচ্ছেন তার সংখ্যাকে গোপন করছে সরকার। এসব মৃতদেহ তারই প্রমাণ।

উল্লেখ্য, গত তিন সপ্তাহে ভারতে রেকর্ড পরিমাণ মানুষ করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যু বরণ করেছেন। গত সপ্তাহে সেখানে মারা গেছেন দিনে ৪ হাজারের ওপরে।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর