রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :১০ মে, ২০২১ ১১:১৭ : অপরাহ্ণ
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার জন্য সরকার অনুমতি না দেয়ায় তার পরিবার এবং দল বলেছে, আইনগত এবং অন্য কী উপায় আছে, সবই তারা খতিয়ে দেখবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিবিসিকে বলেছেন, এ মুহুর্তে বিদেশে নেয়ার পথ বন্ধ হওয়ায় বেগম জিয়াকে দেশের হাসপাতালেই সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা তারা করবেন। একইসাথে বিদেশে নেয়ার জন্য আইনগত বা অন্য কোন উপায় আছে কিনা-তা খতিয়ে দেখে দলের নীতি নির্ধারণী ফোরাম সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম বলেছেন, এ মুহুর্তে বিদেশে নেয়ার উপায় না থাকায় পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে ঢাকায় হাসপাতালে রেখেই চিকিৎসা দেয়া হবে। এখন হাসপাতালে থেকেই চিকিৎসা দিতে হবে। হাসপাতালেই থাকবে, যতদিন ভাল না হয় ততদিন। এছাড়াতো আর উপায় নাই। কারণে বাসায় নিয়েতো এই চিকিৎসা দেয়া যাবে না।
তিনি আরও বলেছেন, বিদেশে নেয়ার অনুমতির জন্য পরিবারের পক্ষে আর কিছু করার আছে কীনা-তা তারা আলোচনা করে দেখবেন।
ঢাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়ার ব্যাপারে তার ছোট ভাই শামীম এসকান্দরের আবেদন গত রোববার (৯ মে) নাকচ করে দিয়েছে সরকার।
সরকার অনুমতি না দেয়ায় বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে পারছেন না। এমুহুর্তে তার ঢাকায় চিকিৎসা নেয়া ছাড়া বিকল্প নেই।
তবে বিদেশে নেয়ার প্রশ্নে বিএনপি কী করতে পারে, তাদের সামনে কোন পথ খোলা আছে কীনা- এসব প্রশ্নে দলটির নেতারা আলোচনা করার কথা বলছেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরাতো জোর করে তাকে বিদেশে নিয়ে যেতে পারবো না। এখানে সরকার না করে দিয়েছে। সুতরাং আমরা চেষ্টা করবো, এখানেই তাকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেয়ার জন্য। একই সময় অন্য কোনো অপশন আছে কীনা-আইনগত বা অন্য কোনো উপায়, সেটাও আমরা দেখবো।
বিএনপির অন্য একাধিক সিনিয়র নেতা জানিয়েছেন, বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি মানবিক এবং ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হতে পারে-সরকারের পক্ষ থেকে এমন ইঙ্গিত দেয়া হয়েছিল। এরপর খালেদা জিয়ার ভাই শামীম এসকান্দর আবেদনটি করেছিলেন।
এখন আবেদন নাকচ হওয়ায় ভিন্ন কোন উপায় আছে কীনা-তা খতিয়ে দেখার কথা বলছে বিএনপি।
আইনজীবীদের অনেকে বলেছেন, অনুমতির জন্য বিএনপি আদালতে যেতে পারে এবং সাজার ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চেয়ে আবেদন করার সুযোগ রয়েছে।
তবে বিএনপির একজন আইনজীবী নেতা বলেছেন, দুর্নীতির দু’টি মামলায় ১৭ বছরের সাজা সরকার তার নির্বাহী ক্ষমতায় স্থগিত করে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়েছিল, ফলে আইনগত অন্য প্রক্রিয়ায় কতটা লাভ হবে-তা নিয়ে তাদের সন্দেহ রয়েছে।
এই আইনজীবী নেতা আরও বলেছেন, যে দু’টি মামলায় সাজা হয়েছে, সেই মামলাগুলোর অভিযোগই তারা মানতে রাজি নন। ফলে ক্ষমা চাওয়ার পথে তারা হাঁটতে পারেন না।
এরপরও সব বিষয় নিয়ে তারা আলোচনা করবেন।
ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেয়া যায় না বলে সরকার যে যুক্তি দিচ্ছে তা বিএনপি নেতারা মানতে রাজি নন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকারের এখতিয়ারে থাকার পরও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকেই বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দেয়া হলো না। দেশের সব মানুষই আশা করেছিল যে, বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের এই অবনতির কথা ভেবে সরকার মানবিক কারণে হলেও তাকে বাইরে যাওয়ার অনুমতিটা দেবে। দুঃখজনক হলো, এরা (সরকার) একটা ধারণা দিয়েছিল যে, আমরা মানবিক কারণে এটা দেখবো। কিন্তু শেষমুহুর্তে তারা আইনের কথা বলে এটা নাকচ করে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেছেন, এটা অত্যন্ত নোংরা একটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ছাড়া আর কিছু নয়। কিন্তু আইনে পরিস্কার বলা আছে যে, এটা সরকার দিতে পারে, যেকোনভাবে দিতে পারে।
তবে সরকার আইনী বাধার একই যুক্তি তুলে ধরছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, যেহেতু বাসভবনে থেকে চিকিৎসা নেয়া এবং বিদেশে না যাওয়ার শর্তে সাজা স্থগিত করে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া হয়েছিল- সেই বিধিতে শর্ত শিথিলের সুযোগ নেই। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয়ার আদেশটাকে গ্রহণ করেই খালেদা জিয়া মুক্ত হয়েছিলেন। এখন এই যে দরখাস্তটা, এটা নিস্পত্তি হয়ে গেছে। সেটা আবার পুনরায় খুলে শর্ত শিথিল করা শর্ত পরিবর্তন করার সুযোগ আইনে দেয়া নেই।
তিনি জানান, ৪০১ ধারার ছয়টা উপধারা আছে। এর কোনো একটা উপধারায় বলা নাই যে, এই শর্ত রিভাইস করা যাবে বা পরিবর্তন করা যাবে। এখন আইনের ব্যপ্তয় ঘটিয়ে কোনো দরখাস্ত এন্টারটেইন করা সম্ভব না।
গত ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। তবে শনিবার (৮ মে) খালেদা জিয়ার তৃতীয় দফার নমুনা পরীক্ষায় করোনাভাইরাস নেগেটিভ ফলাফল এসেছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
দীর্ঘদিন ধরেই ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত ৭৬ বছর বয়সী খালেদা জিয়াকে গত ২৭ এপ্রিল পরীক্ষার জন্য রাজধানীর বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত ৩ মে তিনি শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নিয়ে যাওয়া হয়। এখনো তিনি সিসিইউতেই আছেন।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
দেশজুড়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে ছয় মাসের জন্য মুক্তি পেয়েছিলেন খালেদা জিয়া। এরপর প্রথমে সেপ্টেম্বরে ও পরে চলতি বছরের মার্চে আবারো ছয় মাসের জন্য তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়।
সূত্র: বিবিসি