বুধবার, ২৬ জুন, ২০২৪ | ১২ আষাঢ়, ১৪৩১ | ১৯ জিলহজ, ১৪৪৫

মূলপাতা আন্তর্জাতিক

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ: ভারতের প্রতিবেশীদের জন্য অশনি সংকেত


রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :১০ মে, ২০২১ ১২:০১ : অপরাহ্ণ
Rajnitisangbad Facebook Page

দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোতে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠছে। গত সপ্তাহে দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন করে ২৭ লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এসময়ে মারা গেছেন ২৫ হাজারের বেশি মানুষ।

করোনার ভারতীয় ধরনে সংক্রমণের মাত্রা অত্যন্ত বেশি। প্রতিদিনই শনাক্তের রেকর্ড হচ্ছে ভারতে। দেশটিতে দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা চার লাখ ছাড়িয়ে গেছে। মৃত্যুর মিছিল চলছে। ভেঙে পড়েছে চিকিৎসা ব্যবস্থা।

ভারতের প্রতিবেশী দেশ নেপালে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশটিতে যাদের করোনা টেস্ট করা হচ্ছে তাদের ৪০ ভাগের বেশি পজিটিভ আসছে। যা রীতিমতো আতঙ্কজনক।

তিন কোটির কিছু বেশি মানুষের দেশ নেপাল। এক মাস আগেও দেশটিতে করোনা পরিস্থিতি ছিল বেশ নিয়ন্ত্রণে। দৈনিক ১০০ জনের মতো করোনা শনাক্ত হচ্ছিল। কিন্তু গত কয়েকদিনে গড়ে প্রতিদিন আট হাজারের বেশি মানুষের করোনা শনাক্ত হচ্ছে। ভারতের সঙ্গে নেপালের ১৮৮০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে।

বাংলাদেশে ইতিমধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে করোনার ভারতীয় ধরন শনাক্ত হয়েছে। যদিও অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যে ধরনের প্রাত্যহিক যোগাযোগ রয়েছে তাতে ভারতীয় ধরন আরো আগেই প্রবেশ করেছে। বর্তমানে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত বন্ধ রয়েছে। যদিও কিছু কিছু লোক এরমধ্যেও ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।

বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা আশঙ্কা করছেন, ঈদের পর দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউ আসতে পারে—যা হবে ভয়াবহ। ডাক্তার-নার্সের সংকটে ব্যাহত হবে চিকিত্সাসেবা। পরিস্থিতি ভারতের চেয়ে ভয়াবহ হতে পারে। দেখা দেবে অক্সিজেনের ভয়াবহ সংকট। চিকিত্সার অভাবে রোগীরা যেখানে সেখানে মারা যাবে।

বিবিসির এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, পাকিস্তানেও করোনায় শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। দেশটিতে বর্তমানে কোন ধরনের লকডাউন নেই। তবে কিছু কিছু অঞ্চলে কড়াকড়ি রয়েছে। মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মানাতে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। ভারত, আফগানিস্তান এবং ইরান থেকে প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

করোনা বাড়ছে আফগানিস্তানেও। শ্রীলঙ্কায়ও মধ্য এপ্রিল থেকে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। গত শুক্রবার দেশটিতে ১ হাজার ৮৯৫ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় কড়া পদক্ষেপের পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ভারত থেকে দেশটিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। মালদ্বীপেও সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। দেশটিতে দৈনিক সংক্রমণ ছয়শ’ ছাড়িয়েছে। ভারতের প্রতিবেশি এসব দেশে সংক্রমণ বাড়ার জন্য ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট দায়ী কি-না তা নিয়ে পর্যালোচনা চলছে।

সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশেও করোনা সংক্রমণ এ মুহূর্তে বাড়ছে। থাইল্যান্ড করোনার প্রথম ঢেউ সামাল দিতে অনেকটাই সফল হয়েছিল। কিন্তু গত শুক্রবার দেশটিতে এক দিনেই আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৯১১ জন। কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়াতেও এখন সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। জাপানে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় দেশটির কয়েকটি অঞ্চলে জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। টোকিও, ওসাকা, হোগো ও কিওটোতে ১১ মে এ অবস্থা শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন তা বাড়িয়ে মাসের শেষ পর্যন্ত করা হয়েছে।

সংক্রমণ বাড়ার পরও দক্ষিণ এশিয়ায় বাড়ছে না টিকা গ্রহণের হার। ভারত টিকা রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ায় বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি অনেকটাই স্থবির হয়ে গেছে। প্রথম ডোজ টিকা দেয়া এরইমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশেও টিকা দেয়ার হার একেবারেই কম।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব দেশের অনেকগুলোতে গত জানুয়ারি থেকে করোনা ভাইরাসের টিকা দেওয়া শুরু হয়। কিন্তু টিকা দেওয়ার হার খুবই কম। যে কারণে এসব দেশে করোনা পরিস্থিতি যে কোনো সময় বিপর্যয়কর রূপ নিতে পারে।

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর