নিজস্ব প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :৯ মে, ২০২১ ১২:১৫ : অপরাহ্ণ
প্রায় চার সপ্তাহ পরে করোনামুক্ত হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। শনিবার (৮ মে) খালেদা জিয়ার তৃতীয় দফার নমুনা পরীক্ষায় করোনাভাইরাস নেগেটিভ ফলাফল এসেছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার করোনা নেগেটিভ আসার পরও অন্যান্য জটিল রোগের চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নিতে চান পরিবারের সদস্যরা।
খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, খালেদা জিয়া করোনামুক্ত হলেও তার অন্যান্য জটিল রোগের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকদের পরামর্শেই বিদেশে চিকিৎসা করাতে চান তারা।
তিনি বলেন, ‘যেহেতু তার (খালেদা জিয়া) ছেলে, ছেলের স্ত্রী, নাতনীসহ পরিবার রয়েছে লন্ডনে। এর আগেও তার চিকিৎসা সেখানে হয়েছে, তাই আমরা তাকে লন্ডনেই নিতে চাই।’
ঢাকার বেসরকারি এভারকেয়ার হাসপাতালে ১২ দিন ধরে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার এখন পোস্ট কোভিড এবং অন্যান্য জটিলতার চিকিৎসা চলছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন এই চিকিৎসক।
৭৬ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরেই ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত। ডায়াবেটিসের কারণে তার অন্য চিকিৎসায় সাবধানতা অবলম্বন করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
গত ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। সে সময় সিটি স্ক্যান রিপোর্টে তাঁর ফুসফুসে পাঁচ শতাংশে সংক্রমণ পাওয়া গিয়েছিল। এরপর গত ২৫ এপ্রিল দ্বিতীয় দফার পরীক্ষায়ও খালেদা জিয়ার ফলাফল ‘পজিটিভ’ আসে। এরপর গত ২৭ এপ্রিল তাকে পরীক্ষার জন্য রাজধানীর বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত ৩ মে তিনি শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নিয়ে যাওয়া হয়। এখনো তিনি সিসিইউতেই আছেন।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসা করাতে পরিবারের পক্ষ থেকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য সরকারের কাছে লিখিত আবেদন করা হয়েছে। গত ৫ মে রাতে খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এই লিখিত আবেদন জমা দেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবেদনটির আইনি দিক পর্যালোচনার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠান।
পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এই আবেদনটিকে সরকার ইতিবাচকভাবেই দেখছে।
উল্লেখ্য, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়ার যে নির্বাহী আদেশ দিয়েছিলো সরকার তাতে বলা হয়েছিলো মুক্তি পেয়ে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর বাসাতেই থাকতে হবে এবং এ সময় তিনি বিদেশ যেতে পারবেন না।
আজ রোববার (৯ মে) সকালে আইন মন্ত্রণালয় খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার আবেদনের বিষয়ে মতামত দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা যাত্রা। আজ এই বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার গণমাধ্যমকে জানান, আমরা সরকারের অনুমতির অপেক্ষায় আছি। খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে নেওয়ার সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। সরকারের অনুমতি পেলে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তিনি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স নাকি চার্টার্ড ফ্লাইটে বিদেশ যাবেন।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
দেশজুড়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে ছয় মাসের জন্য মুক্তি পেয়েছিলেন খালেদা জিয়া। এরপর প্রথমে সেপ্টেম্বরে ও পরে চলতি বছরের মার্চে আবারো ছয় মাসের জন্য তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়।