শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২০ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা বিএনপি

যে আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়া সম্ভব



রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :৪ মে, ২০২১ ৬:০১ : অপরাহ্ণ

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে চাইছে তার পরিবার ও দল। কিন্তু যে আদেশ বলে তিনি জেল থেকে বের হয়েছিলেন সে অনুযায়ী তার বিদেশে যাওয়ার সুযোগই নেই। কারণ যে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়েছিলো সরকার, তার শর্তই হলো তিনি বিদেশে যেতে বা বিদেশি চিকিৎসা নিতে পারবেন না।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘সরকার সেই শর্তটি শিথিল করলে খালেদা জিয়ার বিদেশে যেতে আইনগত কোন বাধা থাকে না। এটা নির্ভর করছে একেবারেই সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।’

কিন্তু এখনো তারা বিএনপি বা খালেদা জিয়ার পরিবারের তরফ থেকে এরকম কোন আবেদন পাননি বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী।

করোনাভাইরাস আক্রান্ত খালেদা জিয়া গত ২৮ এপ্রিল থেকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি। শ্বাসকষ্টের কারণে সোমবার (৩ মে) তাকে সিসিইউতে (করোনারি কেয়ার ইউনিট) স্থানান্তর করা হয়। রাতেই তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার বিষয়ে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বলে জানিয়েছে বিএনপি।

বিএনপি মহাসচিবিমির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিবিসিকে বলেছেন, ‘খালেদা জিয়ার অবস্থা এখন স্থিতিশীল। তার চিকিৎসা নিয়ে এখন ডাক্তারেরা যা বলেন সেই অনুযায়ী এগোনো হবে।’

দলের নেতারা বলছেন, সরকারের কাছে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়ার জন্য অনুমতি চেয়ে একটি আবেদন আগেই করা আছে।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘ম্যাডামকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য নেয়া জরুরি। এখন উপায় একটিই তাহলো, সরকারকে তার দেয়া নির্বাহী আদেশ সংশোধন করে বিদেশে যাওয়ার ওপর বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করা। এখন বিদেশে পাঠাতে হলে আর তো কোন অপশন নাই। এভাবে দল বা পরিবার বা আইনজীবীদের তো করণীয় কিছু নেই। নির্বাহী আদেশ সংশোধন করলেই তাকে বিদেশে নেয়া সম্ভব হবে।’

তিনি বলেন, ‘সরকার তো সাম্প্রতিক সময়ে অনেককে সাজা থেকে ক্ষমাও করে দিয়েছে। সেখানে খালেদা জিয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিক। তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে দিতে সমস্যা কোথায়।’

আগেও আবেদন করা হয়েছিল বিদেশ নেবার:
এর আগে গত বছরের মার্চে বিদেশে চিকিৎসার জন্য মুক্তি চেয়ে স্বরাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়েছিলো খালেদা জিয়ার পরিবার।

তার বোন সেলিমা ইসলাম তখন বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন যে, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবরে এই চিঠিতে আমরা লিখেছি যে, বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য আমরা পরিবারের সদস্যরা তাঁকে বিদেশে নিয়ে যেতে চাইছি। সেজন্য তাঁর মুক্তি প্রয়োজন। তাকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার জন্য মানবিক কারণে মুক্তির বিষয়টি বিবেচনা করা হোক।’

তবে সেই চিঠিতে তখন খালেদা জিয়াকে লন্ডনে চিকিৎসার সুযোগ দেয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছিলো বলে আইনমন্ত্রী জানিয়েছিলেন।

এখন বিএনপি নেতারা বলছেন, ওই আবেদনের ভিত্তিতেই সরকার মুক্তির আদেশ সংশোধন করলে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়া সম্ভব হবে।

যেসব শর্তে মুক্তি পেয়েছিলেন খালেদা জিয়া:
দেশজুড়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর ২০২০ সালের ২৫শে মার্চ ছয় মাসের জন্য নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেয়েছিলেন খালেদা জিয়া। এরপর প্রথমে সেপ্টেম্বরে ও পরে চলতি বছরের মার্চে আবারো ছয় মাসের জন্য তার তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়।

এর আগে ২০১৮ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলো আদালত, তারপর থেকে প্রথমে কারাগারে বিশেষ ব্যবস্থায় ও পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।

হাসপাতালে থাকা অবস্থাতেই নির্বাহী আদেশে বিশেষ শর্তে মুক্তির পর তিনি গুলশানের বাসায় উঠেন।

সেই শর্ত ছিলো, এই সময়ে তার ঢাকায় নিজের বাসায় থাকতে হবে এবং তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না।

ঢাকায় নিজের বাসায় থাকা অবস্থাতেই গত ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার করোনা শনাক্ত হয়। ২৮ এপ্রিল হাসপাতালে ভর্তির আগ পর্যন্ত তাকে বাড়িতে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল।

সুপ্রিম কোর্ট ও নিম্ন আদালত মিলে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অন্তত সতেরটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে দুটি মামলায় (জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা) তার সতের বছরের কারাদণ্ড হয়েছে।

এর আগে এ দুটি মামলায় জামিনের জন্য বিএনপি সরকারকে অনুরোধ করলেও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে-জামিন দেয়া না দেয়া একান্তই আদালতের এখতিয়ার।

তবে খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন বলছেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষ চাইলে আদালতের জামিনের অনুরোধ জানাতে পারে। এখানে বিএনপির বা আইনজীবীদের কিছু করার নেই। কিন্তু যেহেতু নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেয়া হয়েছে সেটি সংশোধনটাই এখন একমাত্র উপায় এবং আশা করি সরকার সেটিই করবেন।’

সূত্র: বিবিসি

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর