রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :৩ মে, ২০২১ ১২:১০ : পূর্বাহ্ণ
‘খেলা হবে’- নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকেই এই স্লোগান দিয়ে আসছিলো পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস। অনুব্রত মণ্ডলদের মতো ঠোঁটকাটা নেতারা এই স্লোগানকে আরো জনপ্রিয় করে তোলেন। পাড়ায়, মহল্লায়, রাস্তায় রাস্তায় ডিজে গান বাজতে থাকে- ‘খেলা হবে’। সংবাদমাধ্যমগুলোর শিরোনামও হতে থাকে এই স্লোগান। কিন্তু খেলাটা কী? তৃণমূল নেতারা বলছিলেন, সেটা ভোটের ফলেই দেখা যাবে।
রোববার (২ মে) নির্বাচন কমিশন ভোটের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার পর দেখা গেলো, ভাঙা পায়ে ‘খেলা’ দেখিয়েই দিয়েছেন মমতা!
বাংলা দখলে নিতে একবিন্দু ছাড় দেয়নি বিজেপি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডারা ডজন ডজন সমাবেশ করেছেন। করোনাকে থোড়াই কেয়ার করে বিশাল বিশাল রোড শো করেছেন। জোগি আদিত্যনাথের মতো কট্টর হিন্দুত্ববাদী নেতাকে এনে ধর্মীয় সমীকরণ তৈরির চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু দিন শেষে তাদের সব কৌশলই মার খেয়েছে। ভাঙা পায়ে গোলপোস্টে ঠিকই বল জড়িয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহ-এর বাংলা দখলের স্বপ্নকে চূর্ণবিচূর্ণ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস টানা তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় এলো।
গতকাল (২ মে) ভারতের মোট ৫টি রাজ্যের ভোটের ফল গণনা করে ফল ঘোষণা করা হয়। এগুলো হলো- পশ্চিমবঙ্গ, পুদুচেরি, তামিলনাড়ু, কেরালা ও আসাম। এর মধ্যে সবারই দৃষ্টি ছিল পশ্চিমবঙ্গে। কারণ, অনেক। এই রাজ্যে মোট আসন আছে ২৯৪টি। এর মধ্যে কোনো দলকে সরকার গঠনের জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে কমপক্ষে ১৪৮টি আসন পেতে হয়। সেই হিসেবে ২১৫ আসনে জিতে ভূমিধস বিজয় অর্জন করেছে মমতার দল তৃণমূল কংগ্রেস। আর বিজেপি পেয়েছে মাত্র ৭৫টি আসন। দুটি আসনের দু’জন প্রার্থী মারা যাওয়ায় সেখানে নির্বাচন হয়নি।
এমন জয়ে কার না আনন্দ হয়!
বিপুল ভোটে জিতে এই প্রথমবার কালীঘাটের বাড়ি থেকে বেরিয়ে মমতা বলেন, ‘এটা বাংলার জয়, বাংলার জয়। কিন্তু উচ্ছ্বাস যেন বাঁধভাঙা না হয়। কোভিড চলছে এখনও কোভিডের মোকাবিলা করাই প্রধান। এখনই বিজয় মিছিল নয়। সকলে বাড়ি যান। অভিনন্দন আপনাদের সকলকে।’
তিনি বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম ২২১ আসন পাব। সেটাই টার্গেট করেছিলাম। আমি বলেছিলাম যে ডাবল ইঞ্জিনের বিরুদ্ধে ডাবল সেঞ্চুরি করব। সেটাই করেছি। বাংলার এই জয় আসলে ভারতের জয়। ভারতকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।’
মমতা বলেন, ‘খেলা হবে আর জয় বাংলা স্লোগান ব্যবহার করে জয় হয়েছে। গ্রাম বাংলার ক্লাবে ৫০ হাজার ফুটবল আমি দেব। খেলা হয়েছে আমরা জিতেছি তাই। বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন সবাইকে দেব। কেন্দ্রকে বলব ১৪০ কোটি লোককে বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দিতে বলব। না করলে গান্ধী মূর্তির নীচে প্রতিবাদ শুরু করবো।’
দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও নিজের আসনে জিততে পারেননি মমতা। এক সময়ের ঘনিষ্ঠ সহযোগী শুভেন্দু অধিকারীর কাছে হেরে গেছেন তিনি। সুদূর নন্দীগ্রামে তিনি যে বাজি ধরেছিলেন তাতে সফল হননি। কিন্তু নিজের হারেও তার যে খুব একটা মন খারাপ হয়নি তা বোঝা যায় সন্ধ্যার সংবাদ সম্মেলনে।
নন্দীগ্রামের ফলাফল নিয়ে বিভ্রান্তির বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মমতা বলেন, ‘কোনও বিভ্রান্তি নেই। ২২১টি আসনে যে দল জেতে তাদের কোনো কনফিউশন থাকে না। নন্দীগ্রামে হেরেছি ভালোই হয়েছে। বারবার ওতদূর যেতে হতো। মানুষ যেটা করেছে ভালোই করেছে।’
নন্দীগ্রামের মানুষের রায় মেনে নিয়েও মমতা বলেন, ‘আমার কাছে খবর আছে, নির্বাচন কমিশন ফল ঘোষণার পরেও সেখানে কিছু কারচুপি হয়েছে। সেগুলো আমি খুঁজে বের করবো, রিভিউ করবো। প্রয়োজন হলে কোর্টে যাবো।’
এই নন্দীগ্রামে গিয়েই হামলার শিকার হয়েছিলেন মমতা। এতে তিনি বাম পায়ে আঘাত পান। পরে পায়ে ব্যান্ডেজ বেঁধে হুইল চেয়ারে ভোটের মাঠে দাপিয়ে বেড়ান তিনি। তার ভাঙা পায়ের কার্টুন হয়েছে। ফুটবল হাতে প্রচারনা নিয়ে ট্রোল হয়েছে। কিন্তু দিনশেষে এসবই তার ভোট বাড়িয়েছে।
এবারের নির্বাচন ছিলো মোদি-মমতার ইমেজের লড়াইও। বাংলায় কে বড় নেতা, সেটাও এই ফলাফলে স্পষ্ট হয়ে গেলো। তৃতীয় বারের মতো সরকার গড়তে যাওয়া মমতা বুঝিয়ে দিলেন, তিনিই এখনো বাংলার সবচেয়ে বড় মুখ।
আরও পড়ুন:
https://rajnitisangbad.com/2021/05/03/%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%b2%e0%a7%87%e0%a6%93-%e0%a6%ae%e0%a7%81%e0%a6%96%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%ae%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a7%80-%e0%a6%b9%e0%a6%a4%e0%a7%87/