শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা ইসলামী দল

হেফাজতকে ‘নিয়ন্ত্রণে রাখতে’ তিন কৌশল



রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :২৬ এপ্রিল, ২০২১ ৯:৩০ : অপরাহ্ণ

হেফাজতে ইসলামকে ‘নিয়ন্ত্রণে রাখতে’ তিনটি কৌশল নিয়েছে একটি মহল। হেফাজতের নতুন কমিটির আহ্বায়ক আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর বিরুদ্ধে তিনটি মামলা, হেফাজত থেকে বিতাড়িত আহমদ শফি পন্থীদের পাল্টা কমিটির ঘোষণা এবং কওমী মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত অরাজনৈতিক এই সংগঠনটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার কৌশল বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র।

গত বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) জুনায়েদ বাবুনগরীর বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে। গত ২৬ মার্চ হাটহাজারীতে সহিংসতার ঘটনায় জুনায়েদ বাবুনগরীসহ ১৪৮ জনের বিরুদ্ধে এসব মামলা করা হয়।

গত ২৬ মার্চ হাটহাজারীতে পুলিশের সাথে সংঘর্ষের সময় ৫ জন নিহত হয়। এর জেরে হাটহাজারী ও পটিয়া থানা, হাটহাজারী ডাকবাংলো ও ভূমি অফিসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এসব ঘটনায় অজ্ঞাত ৪ হাজার জনকে আসামি করে হাটহাজারী থানায় সাতটি, পটিয়া থানায় একটিসহ আটটি মামলা দায়ের করে পুলিশ।

রোববার (২৫ এপ্রিল) রাত ১১টায় ফেসবুক লাইভে এসে হেফাজতে ইসলামের কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা দেন সংগঠনটির আমির জুনায়েদ বাবুনগরী। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য হাটহাজারী দারুল উলূম মাদ্রাসাটি ঘিরে রাখে। বাবুনগরী কমিটি ভেঙ্গে দেওয়ার ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সেখান থেকে চলে আসে।

বাবুনগরীর কমিটি বিলুপ্তি ঘোষণার আধা ঘন্টা পর আহমদ শফি পন্থী হেফাজতে ইসলামের সাবেক সহকারী যুগ্ম মহাসচিব মাঈনুদ্দিন রুহী এক ভিডিও বার্তায় হেফাজতের মূল ধারার বিপরীতে পাল্টা কমিটি করার ঘোষণা দেন। এরপর বিলুপ্তির তিন ঘন্টার মাথায় তিন সদস্যের আংশিক নতুন আহ্বায়ক কমিটির ঘোষণা দেন জুনায়েদ বাবুনগরী।

কমিটির আহ্বায়ক হয়েছেন আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী আর নুরুল ইসলাম জিহাদী সদস্য সচিব। কমিটির প্রধান উপদেষ্টা করা হয়েছে আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীকে। পরে কমিটির তালিকায় আরও দুই সদস্যের নাম যুক্ত করা হয়। এরা হলেন-সালাউদ্দিন নানুপুরী ও অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী। বিলুপ্ত কমিটিরও নেতৃত্বে ছিলেন এই পাঁচ হেফাজত নেতা।

গত বছরের ১৫ নভেম্বর হাটহাজারী দারুল উলূম মাদ্রাসায় সম্মেলনের মাধ্যমে জুনায়েদ বাবুনগরীকে আমির ও নূর হোসাইন কাসেমীকে মহাসচিব করে হেফাজতে ইসলামের ১৫১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছিল। গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফির মৃত্যুর পর নতুন এ কমিটি করেছিল হেফাজত। এরপর ১৩ ডিসেম্বর মহাসচিব নূর হোসাইন কাসেমী মারা গেলে নায়েবে আমির আল্লামা নুরুল ইসলাম জিহাদীকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব দেয় হেফাজত।

নতুন কমিটি গঠন প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত দায়িত্বশীল সূত্রটি জানায়, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত ও বিতর্কিত নেতাদের সংগঠন থেকে বাদ দেওয়ার জন্য একটি মহলের চাপে পড়ে হেফাজতের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন জুনায়েদ বাবুনগরী।

বাবুনগরী প্রথমে কমিটি ভেঙ্গে না দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নেন। পরে ১৪ দলের শরীক একটি দলের চেয়ারম্যান ও সাংসদের অনুরোধে শেষ মুহূর্তে কমিটি ভেঙ্গে দিতে সম্মত হন জুনায়েদ বাবুনগরী। মূলত একটি মহলের চাপে নিজের ও সংগঠনের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে তিনি কমিটি ভেঙ্গে দিতে বাধ্য হন।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, জুনায়েদ বাবুনগরী কমিটি ভেঙ্গে দিলেও হেফাজতকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পদক্ষেপের অংশ হিসেবে জুনায়েদ বাবুনগরীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আর হেফাজতের মূল ধারাকে চাপে রাখতে আহমদ শফি পন্থীদের সক্রিয় করা হচ্ছে। তবে আহমদ শফি পন্থীরা পাল্টা কমিটির ঘোষণা দিলেও তারা সহসা এই পদক্ষেপ নিতে পারবে না। কারণ কমিটি গঠন নিয়ে তাদের মধ্যেও ফাটল ধরার আশঙ্কা রয়েছে। আর শেষ পর্যন্ত তারা কমিটি করার সুযোগ পেলেও কওমি অঙ্গনে সেটার গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না। কারণ দেশের বড় বড় কওমি মাদ্রাসাগুলো হেফাজতের মূল ধারার নিয়ন্ত্রণে।

সূত্রটি আরও জানিয়েছে, কওমী মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্তও এই পদক্ষেপের অংশ।

রোববার (২৫ এপ্রিল) যাত্রাবাড়ীর জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া মাদ্রাসায় আল-হাইআতুলের স্থায়ী কমিটির সভায় কওমী মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সূত্রটি জানায়, সরকার হেফাজতকে আর কোনো সুযোগ দিতে চায় না। হেফাজতকে আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না দিতেই এসব কৌশলী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

গত ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেন হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীরা। সেই বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নেয়। ওই সংঘাতে প্রাণ হারান অন্তত ১৮ জন। বিক্ষোভ–সহিংসতার ঘটনায় দেশের বিভিন্ন জেলায় হেফাজতের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অন্তত ৭৭টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৬৯ হাজারের বেশি জনকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত হেফাজতের কেন্দ্রীয় ও গুরুত্বপূর্ণ ১৯ জন নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে রয়েল রিসোর্টে এক নারীসহ অবরুদ্ধ হওয়ার ঘটনায় বিতর্কের মুখে পড়ে হেফাজত। গত ১৮ এপ্রিল মামুনুল হক গ্রেপ্তার হলে কোণঠাসা হয়ে পড়ে হেফাজত।

সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে কোণঠাসা হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতারা শুরু থেকেই সমঝোতার চেষ্টা করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তারা গোয়েন্দা সংস্থা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

গত সপ্তাহে হেফাজত ইসলামের মহাসচিব আল্লামা নুরুল ইসলাম জিহাদী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বাসায় দেখা করে দলের নেতা-কর্মীদের গণগ্রেপ্তার না করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। এই পরিস্থিতিতে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক হেফাজতের কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা দিয়েছেন সংগঠনের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী।

আরও পড়ুন:

https://rajnitisangbad.com/2021/04/26/%e0%a6%9a%e0%a6%be%e0%a6%aa%e0%a7%87-%e0%a6%aa%e0%a7%9c%e0%a7%87%e0%a6%93-%e0%a6%b9%e0%a7%87%e0%a6%ab%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a6%a4%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%a8%e0%a7%87%e0%a6%a4%e0%a7%83%e0%a6%a4/

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর