শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা চট্ট-মেট্টো

চাপে পড়েও হেফাজতের নেতৃত্ব ধরে রাখলেন বাবুনগরী



রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :২৬ এপ্রিল, ২০২১ ৪:০০ : পূর্বাহ্ণ

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত ও বিতর্কিত নেতাদের বাদ দিয়ে অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়ে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর নেতৃত্বে হেফাজতে ইসলামের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি গঠন হতে যাচ্ছে। কয়েক দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা দেওয়ার কথা রয়েছে। কমিটি গঠনের সাথে সম্পৃক্ত দায়িত্বশীল একটি সূত্র রাজনীতি সংবাদকে এ তথ্য জানিয়েছে।

রোববার দিবাগত (২৬ এপ্রিল) রাত ২টার দিকে হেফাজতে ইসলামের পাঁচ সদস্যের আংশিক আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটির আহ্বায়ক হয়েছেন আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী আর নুরুল ইসলাম জিহাদী সদস্য সচিব। কমিটির প্রধান উপদেষ্টা করা হয়েছে আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীকে।

এছাড়া সদস্য করা হয়েছে দুজনকে। এরা হলেন-সালাউদ্দিন নানুপুরী ও অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী। বিলুপ্ত কমিটিরও নেতৃত্বে ছিলেন এই পাঁচ হেফাজত নেতা।

এর আগে রোববার (২৫ এপ্রিল) রাত ১১টায় ফেসবুক লাইভে এসে হেফাজতে ইসলামের কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা দেন সংগঠনটির আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। তবে কী কারণে কমিটি ভেঙ্গে দিয়েছেন তা তিনি তার বক্তব্যে বলেননি।

নতুন কমিটি গঠন প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত দায়িত্বশীল সূত্রটি জানায়, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত ও বিতর্কিত নেতাদের সংগঠন থেকে বাদ দেওয়ার জন্য একটি মহলের চাপে পড়ে হেফাজতের কমিটি ভেঙ্গে দিতে বাধ্য হয়েছেন জুনায়েদ বাবুনগরী। মূলত নিজের ও সংগঠনের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে তিনি কমিটি ভেঙ্গে দিতে বাধ্য হন।

দায়িত্বশীল সূত্রটি জানায়, বাবুনগরী প্রথমে কমিটি ভেঙ্গে না দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নেন। হেফাজত নেতাদের চলমান গ্রেপ্তার অভিযানে জুনায়েদ বাবুনগরীকেও নজরদারীতে রাখা হয়। তখন বাবুনগরীকে মাইনাস করে আহমদ শফি পন্থী নেতাদের হেফাজতের নেতৃত্বে নিয়ে আনতে একটি মহল চেষ্টা করে। কিন্তু আরেকটি মহল এতে বাধ সাধে। তারা বাবুনগরীর পক্ষে অবস্থান নেয়। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ চলে। এর মধ্যে ১৪ দলের শরীক একটি দলের চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য বাবুনগরীর হাতে হেফাজতের নিয়ন্ত্রণ রাখার পক্ষে জোরালো অবস্থান নেন। তার অনুরোধে শেষ মুহূর্তে কমিটি ভেঙ্গে দিতে সম্মত হন জুনায়েদ বাবুনগরী।

হেফাজতের বিলুপ্ত হওয়া কমিটির যুগ্ম মহাসচিব নাছির উদ্দিন মুনির রাজনীতি সংবাদকে বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কমিটি ভেঙ্গে না দেওয়া ছাড়া হেফাজত আমিরের সামনে আর কোনো পথ ছিল না।

রোববার (২৫ এপ্রিল) রাতে ফেসবুক লাইভে বাবুনগরী যখন হেফাজতে ইসলামের কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা দেন, তখন হাটহাজারী দারুল উলূম মাদ্রাসার সামনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য অবস্থান নিয়েছিলেন। বাবুনগরী কমিটি ভেঙ্গে দেওয়ার ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সেখান থেকে চলে আসেন।

দায়িত্বশীল সূত্রটি জানায়, বিভিন্ন মামলায় হেফাজতের যেসব নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদেরকে পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটিতে রাখা হবে না। ভেঙ্গে দেওয়া কমিটিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত ও বিতর্কিত যেসব নেতা রয়েছেন তারাও কমিটিতে স্থান পাবেন না। হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব নাছির উদ্দিন মুনির, ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইদ্রিস ও মুফতি হারুন ইজাহারসহ অনেকে বাদ পড়বেন। যেসব আলেমরা কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত নেই কেবল তাদের নিয়ে হেফাজতের নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন হবে।

গত বছরের ১৫ নভেম্বর হাটহাজারী দারুল উলূম মাদ্রাসায় সম্মেলনের মাধ্যমে জুনায়েদ বাবুনগরীকে আমির ও নূর হোসাইন কাসেমীকে মহাসচিব করে হেফাজতে ইসলামের ১৫১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছিল। গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফির মৃত্যুর পর নতুন এ কমিটি করেছিল হেফাজত। এরপর ১৩ ডিসেম্বর মহাসচিব নূর হোসাইন কাসেমী মারা গেলে নায়েবে আমির আল্লামা নুরুল ইসলাম জিহাদীকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব দিয়েছিলেন হেফাজত।

গত ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেন হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীরা। সেই বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নেয়। ওই সংঘাতে প্রাণ হারান অন্তত ১৮ জন। বিক্ষোভ–সহিংসতার ঘটনায় দেশের বিভিন্ন জেলায় হেফাজতের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অন্তত ৭৭টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৬৯ হাজারের বেশি জনকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত হেফাজতের কেন্দ্রীয় ও গুরুত্বপূর্ণ ১৯ জন নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে রয়েল রিসোর্টে এক নারীসহ অবরুদ্ধ হওয়ার ঘটনায় বিতর্কের মুখে পড়ে হেফাজত। গত ১৮ এপ্রিল মামুনুল হক গ্রেপ্তার হলে কোণঠাসা হয়ে পড়ে হেফাজত।

সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে কোণঠাসা হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতারা শুরু থেকেই সমঝোতার চেষ্টা করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তারা গোয়েন্দা সংস্থা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

গত সপ্তাহে হেফাজত ইসলামের মহাসচিব আল্লামা নুরুল ইসলাম জিহাদী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বাসায় দেখা করে দলের নেতা-কর্মীদের গণগ্রেপ্তার না করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। এই পরিস্থিতিতে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক হেফাজতের কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা দিয়েছেন সংগঠনের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী।

আরও পড়ুন:

https://rajnitisangbad.com/2021/04/26/%e0%a6%b9%e0%a7%87%e0%a6%ab%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a6%a4%e0%a6%95%e0%a7%87-%e0%a6%a8%e0%a6%bf%e0%a7%9f%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%a3%e0%a7%87-%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%96/

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর