নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা প্রকাশের সময় :২৩ এপ্রিল, ২০২১ ১১:০০ : পূর্বাহ্ণ
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় একটি ফ্ল্যাটে গ্যাসের চুলার পাইপলাইনের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে নারী ও শিশুসহ দুই পরিবারের ১১ জন দগ্ধ হয়েছেন। আজ শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) সকাল ছয়টার দিকে মডেল গার্মেন্টসের দক্ষিণ পাশে স্থানীয় মফিজুল ইসলামের তিনতলা ফ্ল্যাটের তৃতীয় তলায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
দগ্ধরা হলেন, মো. হাবিবুর (৪০), তার স্ত্রী আলেয়া বেগম (৩৮), তার ছেলে লিমন (১৭), মেয়ে মিম (১৮), তিন মাসের শিশু মাহিরা। মো. সোনাহার (৪০), তার স্ত্রী শান্তি আক্তার (৩০), ছেলে সামিউল (২৫), পুত্রবধূ মনোয়ারা (২২) ও সাথী (২৫)।
দগ্ধদের মধ্যে তিন মাসের শিশুসহ পাঁচজনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। অপর ছয়জনকে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
বিস্ফোরণে তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটের দুটি কক্ষের পুরো দেয়াল উড়ে গেছে এবং রান্নাঘর ও বাথরুমের দুটি দেয়াল মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ভবনের অন্যান্য ফ্ল্যাটের জানালা ও রুমের কাচ ভেঙে গেছে। বিস্ফোরণের ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ওই ফ্ল্যাট ও পাশের ভবনের লোকজন আতঙ্কে রাস্তায় নেমে আসেন। এই ঘটনায় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ফতুল্লা থানার এসআই সোহাগ সাহা বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, গ্যাসের সংযোগে লিকেজ ছিল। তবে ঠিক কী কারণে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে তা তদন্ত সাপেক্ষে নিশ্চিত বলা যাবে।
বিস্ফোরণস্থলে উপস্থিত ফতুল্লা কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, রান্না ঘরে চুলার সুইচ চালু ছিল। এ কারণেই হয়তো সারা ঘর গ্যাস ছড়িয়ে ছিল। পরে সকালে চুলা জ্বালাতে গেলে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, ওই বাড়ির তৃতীয় তলায় বেশ কয়েকটি পরিবার বসবাস করেন। তারা কমন (একটি) রান্নাঘরেই রান্নার কাজ করতেন।
ফ্ল্যাটের একজন বাসিন্দা আব্দুল্লাহ জানান, ঘুমের মধ্যেই হঠাৎ বিকট শব্দে একটি দরজা ভেঙে আমার ওপর এসে পড়ে। কিছু বুঝে উঠার আগেই দেখি পাশের ঘরে আগুন এবং দুটি ঘরের দেয়াল পাশের তিনতলা ভবনের ছাদে পড়ে আছে। বের হয়ে দেখি একই পরিবারেরই ৬ জন দগ্ধ অবস্থায় কাতড়াচ্ছেন।
আশপাশের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সেহেরির সময় এ ঘটনা ঘটায় আশপাশের সবাই জেগে গিয়েছিল। অনেকে বালু, পানি দিয়ে তাৎক্ষণিক আগুন নেভানোর চেষ্টা করায় আগুন ছড়াতে পারেনি।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভানোসহ দগ্ধদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বরও ফতুল্লার তল্লা মসজিদের ভেতরে গ্যাস জমা হয়ে ছিল। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত (এসি) মসজিদটিতে নামাজের সময় দরজা, জানালা লাগিয়ে সব এসি চালু করে দেওয়া হয়।
এ সময়ই হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলে মসজিদের অবৈধ বিদ্যুৎ লাইন চালু করতে কাটআউট যুক্ত করার সময় বৈদ্যুতিক সুইচে স্ফুলিঙ্গ (স্পার্ক) হয়। স্ফুলিঙ্গ পেয়ে বিকট শব্দে গ্যাস বিস্ফোরণ হয় এবং আগুন ধরে যায়। এতে ভেতরে থাকা ৩৭ জনের মধ্যে ৩৪ জন পুড়ে মারা যান।