শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা ইসলামী দল

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক নিয়ে বাবুনগরীপন্থীদের দালাল বলছে আহমদ শফির অনুসারীরা



রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :২০ এপ্রিল, ২০২১ ২:৪০ : অপরাহ্ণ

সরকারের কঠোর অবস্থানে কোণঠাসা হয়ে পড়া হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েছেন। সরকারপন্থী হিসেবে পরিচিত হেফাজতের সাবেক আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফির অনুসারীরা একহাত নিয়েছেন বাবুনগরীপন্থী নেতাদের। তারা এখন আপোষহীন নেতা হিসেবে পরিচিত হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর অনুসারীদের সরকারের দালাল হিসেবে আখ্যায়িত করছেন।

গতকাল সোমবার (১৯ এপ্রিল) রাতে হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক করেন।

হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব নূরুল ইসলাম জিহাদীর নেতৃত্বে এ বৈঠকে অংশ নেন সংগঠনটির নায়েবে আমীর মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজী, মামুনুল হকের ভাই বেফাকের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান (দেওনার পীর), মাওলানা হাবিবুল্লাহ সিরাজী প্রমুখ।

এ বৈঠকের পর বাবুনগরীপন্থীদের কটাক্ষ করে ফেসবুকে একের পর এক পোস্ট দিচ্ছেন আল্লামা শফিপন্থী হেফাজতের নেতা-কর্মীরা।

বাবুনগরীপন্থী হেফাজতের নেতা-কর্মীরা সংগঠনের সাবেক আমির প্রয়াত আল্লামা শাহ আহমদ শফিকে সরকারপন্থী হিসেবে আখ্যায়িত করে তার বিরুদ্ধে বিষোদগার করতেন। গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর হাটহাজারী দারুল উলূম মাদ্রাসায় বাবুনগরীপন্থী হেফাজতের নেতা-কর্মীরা আহমদ শফির বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেন। একপর্যায়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমির আল্লামা শফি।

আল্লামা শফিপন্থী নেতা-কর্মীরা এখন প্রশ্ন তুলছেন, হেফাজতের আপোষহীন নেতারা এখন কেন সরকারের সাথে আপোষ করছেন?

গতরাতে ফেসবুকে হাটহাজারী ওলামা কমিটি নামের একটা আইডিতে বাবুনগরীপন্থী হেফাজত নেতাদের কটাক্ষ করে পোস্ট করা হয়। এতে বলা হয়-‘শহীদের রক্তের সাথে গাদ্দারী হচ্ছে না বুঝি, সরকারের পা চাটা চামচাদের ফতোয়া এখন কই? গোপনে গোপনে পা চাটা হালাল আর আল্লামা শফি সারা দেশের আলেম-উলামাদের ইজ্জত বহাল রেখে আক্রমণাত্মক সিদ্ধান্ত না দেওয়ায় দালাল।’

আমিন আমিনী নামের অপর একটা আইডিতে পোস্ট দিয়ে বলা হয়-‘রাতের অন্ধকারে হে মাহফুজুল হক সাহেব? এ কেমন বেইমানি মুনাফেকি গাদ্দারি
২১জন শহিদের রক্ত বেচা বিক্রির লাভ লস কেমন হলো দেশ জাতি তাওহীদি জনতা তার হিসাব জানতে চায়!!!’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হেফাজতে ইসলামের প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান রাজনীতি সংবাদকে বলেন,‘সরকার আমাদেরকে ভুল বুঝেছে, সেই ভুল ভাঙাতে আমাদের শীর্ষ নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন।’

বৈঠকে সরকারের ভুল ভেঙ্গেছে?- এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘একদিনে তো ভুল ভাঙবে না, একটু সময় লাগবে। সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা হেফাজতের আমিরের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন। আলোচনা শুরু হয়েছে, ভুল বোঝাবুঝির নিরসন না হওয়া পর্যন্ত তা চলমান থাকবে।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক নিয়ে আল্লামা শফিপন্থী হেফাজত নেতা-কর্মীদের সমালোচনা প্রসঙ্গে জাকারিয়া নোমান বলেন, ‘সরকারের সাথে পাল্টাপাল্টি করে কি পারা যাবে? তারা তো (আল্লামা শফিপন্থী) সরকারের কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছিলেন। আমরা সরকারের সাথে আপোষ করলেও কোনো সুযোগ-সুবিধা নিবো না।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের ঘন্টা খানেক আগে হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী হাটহাজারী দারুল উলূম মাদ্রাসা থেকে একটি ভিডিও বার্তা দেন। ২৬ মার্চ দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংস ঘটনার পর সরকারকে হুঁংকার দিয়ে আসা জুনায়েদ বাবুনগরী ভিডিও বার্তায় নরম সুরে কথা বলেন।

ভিডিও বার্তায় তিনি দাবি করেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদীর আগমনকে ঘিরে সহিংস ঘটনা হেফজতের নিয়ন্ত্রণে ছিল না।

এই হেফাজত নেতা এমনটা দাবি করলেও ২৮ মার্চ হরতালের দিন হাটহাজারী মাদ্রাসার সামনেই দেয়াল তুলে সড়ক অবরোধ করে রেখেছিলেন সংগঠনটির কর্মী-সমর্থকরা। হামলা হয়েছিল হাটহাজারী থানায়ও।

গত ২৮ মার্চ হেফাজতের ডাকা হরতালের দিন হাটহাজারী সদরের কাচারি সড়কে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী বলেছিলেন, ‘আমাদের ওপর জুলুম-নির্যাতন হলে আমরা আলেম-ওলামা, তৌহীদি জনতা এভাবে ঝাঁপিয়ে পড়বো।’

অথচ হেফাজত আমির গতকাল ভিডিও বার্তায় সরকারকে বলেছেন গুজবে কান না দিতে।

গত শুক্রবার চট্টগ্রামের দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসার বাইতুল করিম মসজিদে জুমার আগে বক্তৃতায় জুনায়েদ বাবুনগরী সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেছেন, ‘অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, আপনারা মরবেন না। আল্লাহ ফেরাউনকেও সুযোগ দিয়েছিলেন, কিন্তু ছেড়ে দেননি। মনে রাখবেন-আল্লাহ ছাড় দেন, ছেড়ে দেন না। এই জুলুমের শেষ একদিন হবে। পৃথিবীতে কোনো জালিম চিরস্থায়ী হয়নি।’

হেফাজতের চট্টগ্রামের হাটহাজারীর দায়িত্বশীল একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজনীতি সংবাদকে বলেন, বিএনপির মতো একটা জনপ্রিয় দলকে সরকার কাবু করে ফেলেছে। জামায়াত-শিবিরের মতো ক্যাডারভিত্তিক সংগঠনকেও সরকার কোণঠাসা করে ফেলেছে। জামায়াত-শিবির দেশজুড়ে সহিংস তাণ্ডব চালিয়েও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মতো জনপ্রিয় আলেমকে মুক্ত করতে পারেনি। সাঈদীর তুলনায় মামনুল হকের জনপ্রিয়তা দশভাগের একভাগও হবে না। এসব বিষয় বিবেচনা করে আমরা আন্দোলনের পথে আর পা না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

এই হেফাজত নেতা বলেন, আইনিভাবে মোকাবেলা ও সরকারের সাথে সমঝোতা করা ছাড়া এখন আমাদের সামনে আর কোনো পথ নেই।

আল্লামা শফিপন্থী এক হেফাজত নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শাপলা চত্বরের ঘটনার পর আল্লামা শফি পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরেছিলেন। তাই তিনি সরকারের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেছিলেন। জুনায়েদ বাবুনগরী তখন পরিস্থিতি আঁচ করতে পারেননি। ৭ বছর পর আমিরের চেয়ারে বসে তিনি এখন সেটা আঁচ করতে পেরেছেন।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর