নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা প্রকাশের সময় :১৩ এপ্রিল, ২০২১ ৯:৩৩ : পূর্বাহ্ণ
এবার রাজধানী ঢাকার কয়েকটি থানায় বালুর বস্তা দিয়ে বাঙ্কার তৈরি করা হয়েছে। এগুলোতে ২৪ ঘণ্টা লাইট মেশিন গান তথা এলএমজি নিয়ে পাহারা দিচ্ছে পুলিশ। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে সহিংস আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে হামলার আশঙ্কায় থানাগুলোতে এমন কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগের প্রতিটি থানায় বসানো হয়েছে লাইট মেশিনগান (এলএমজি) ও চাইনিজ রাইফেল সম্বলিত চৌকি। বালুর বস্তা দিয়ে তৈরি চৌকিতে সর্বদা প্রস্তুত রাখা হয়েছে পুলিশ সদস্যের। মতিঝিল বিভাগের পাশাপাশি ওয়ারী বিভাগের থানাগুলোতেও একই ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে।
এর আগে ব্রাক্ষণবাড়িয়া, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী এবং চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানা ও পুলিশ ফাঁড়িতে লাইট মেশিনগান পোস্ট স্থাপন করা হয়।
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জায়গায় একের পর এক সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, ভূমি অফিস, থানা ও পুলিশ ফাঁড়ি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এমনকি পুলিশের হাত থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ছিনিয়ে নেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে পুলিশ প্রশাসন।
এ অবস্থায় গত ৭ এপ্রিল পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ এক ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের এসব ঘটনা কঠোরভাবে দমন করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, রাবার বুলেটে সহিংসতা দমানো না গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আরও বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন অস্ত্র চালাতে হবে।
আইজিপি মাঠ পর্যায়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের এমন নির্দেশনা দেয়ার পরই থানায় থানায় নিরাপত্তা চৌকি বসানো শুরু হয়েছে। গেল বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ও থানায় বালুর বস্তা দিয়ে বাঙ্কার তৈরি করা হয়েছে। সার্বক্ষণিক সেখানে মেশিনগান তাক করে আছে পুলিশ।
জানা গেছে, পর্যায়ক্রমে দেশের ঝুঁকিপূর্ণ থানাগুলোতে লাইট মেশিনগান পোস্ট স্থাপন করা হবে।
ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, হেফাজতের আন্দোলনসহ যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ইতোমধ্যে রাজধানীর সকল থানার নিরাপত্তা বৃদ্ধির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ থানাগুলোতে সবসময় একটা মোবাইল টিম দায়িত্বে থাকবে। ওই টিম সারাদিন থানার আশপাশ দিয়ে ঘোরাফেরা করবে। তারা কখনও থানার থেকে বেশি দূরে যাবে না। টহল দেবে ২৪ ঘণ্টা।
সরেজমিনে ঢাকার ওয়ারী শ্যামপুর থানা, গেন্ডারিয়া থানা ও যাত্রাবাড়ী থানায় বাঙ্কারে মেশিনগান নিয়ে পুলিশ সদস্যদের প্রস্তুত থাকতে দেখা গেছে।
ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) শাহ ইফতেখার আহমেদ গণমাধ্যমকে জানান, ওয়ারী বিভাগের ওয়ারী থানা, ডেমরা থানা, শ্যামপুর থানা, যাত্রাবাড়ী থানা, গেন্ডারিয়া থানা ও কদমতলি থানায় এ নিরাপত্তা জোরদার রয়েছে। বালুর বস্তা দিয়ে থানার সামনে বসানো হয়েছে চিরাপত্তা চৌকি। চৌকিগুলোতে এলএমজি ও চাইনিজ রাইফেলসহ পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার রয়েছে।
দেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের বিরোধিতাকে কেন্দ্র করে হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ ও সহিংসতায় গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত তিন দিনে ১৭ জন নিহত হয়েছেন।
২৮ মার্চ হেফাজতে ইসলামের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালে দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাণ্ডব চালানো হয়। বিশেষ করে চট্টগ্রামের হাটহাজারী এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক সহিংসতা হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল বিশ্বরোড মোড়ে খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানায় হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় কয়েকটি অস্ত্র। হামলাকারীরা থানা কম্পাউন্ডের ভেতরে রাখা সাঁজোয়া গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। একই সময়ে হামলাকারীরা থানার সরকারি দুটি পিকআপ ভ্যান ও ২০ টনের একটি রেকার পুড়িয়ে দেয়। থানার সামনে বিভিন্ন মামলার আলামত হিসেবে রাখা দুটি লেগুনা, দুটি ব্যক্তিগত গাড়ি ও ১০-১২টি মোটরসাইকেলেও আগুন দেওয়া হয়। পরে থানা কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করার চেষ্টা করে হামলাকারীরা। এসব সহিংসতায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১০ জনের মৃত্যু হয়।
হাটহাজারী থানা ও এসি ল্যান্ড অফিসসহ কয়েকটি সরকারি অফিসে হামলার ঘটনা ঘটে। সেখানে চারজন নিহত হয়।
গত ৫ এপ্রিল ফরিদপুরের সালথায় উপজেলা কমপ্লেক্স ও থানায় হামলার ঘটনা ঘটে।