নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা প্রকাশের সময় :৯ এপ্রিল, ২০২১ ৭:০০ : অপরাহ্ণ
অপহরণ করে টাকা আদায়ের অভিযোগে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে হাতিরঝিল থানা পুলিশ। রাজধানীতে এক যুবককে অপহরণ করে মুক্তিপণ নেওয়ার অভিযোগে দায়েরকৃত একটি মামলায় আজ শুক্রবার (৯ এপ্রিল) তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম একটি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, গ্রেপ্তার ৪ জনের মধ্যে ৩ জন সেনাবাহিনীর ও ১ জন বিমানবাহিনীর সদস্য।
তিনি জানান, টাকা আদায়ের অভিযোগে গ্রেপ্তার চারজনের বিরুদ্ধে থানায় নিয়মিত মামলা হলেও চারজনকেই তাদের নিজ নিজ বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এদের বিচার নিজ নিজ বাহিনীর আইনকানুন অনুযায়ী হবে।
হাতিরঝিল থানা পুলিশ সূত্র জানায়, এই অপহরণ চক্রে মোট ছয়জন সদস্য ছিলেন। তাদের মধ্যে তিনজন হলেন সেনাবাহিনীর, একজন বিমান বাহিনীর, একজন বিজিবির ও আরেকজন সাধারণ মানুষ। আসামিদের মধ্যে বিজিবির সদস্য ও সাধারণ নাগরিক পলাতক রয়েছেন।
হাতিরঝিল থানায় অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, রাইয়ানা হোসেন নামের এক তরুণী অভিযোগ করেন তার বড়ভাই তামজিদ হোসেন (২৭) তাদের মীরবাগের বাসা থেকে ৮ এপ্রিল সকাল ৯টায় উত্তরায় যাওয়ার কথা বলে বের হন। আনুমানিক দুপুর ১২টার দিকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি তাকে ফোন করে র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে জানান তার ভাই তামজিদ র্যাবের হেফাজতে আছেন। থানা পুলিশ বা ডিবি পুলিশকে জানালে তার ভাইকে প্রাণে মেরে ফেলা হবে- একথা বলে ফোন কেটে দেন ওই অজ্ঞাত ব্যক্তি।
রাইয়ানা অভিযোগে বলেন, আমি পরে অনেকবার ফোন করলে ওই অজ্ঞাত ব্যক্তি রিসিভ করেননি। পরে আনুমানিক দুপুর দেড়টায় ফোন রিসিভ করে ওই অজ্ঞাত ব্যক্তি জানান আমার ভাইকে র্যাবের সিনিয়র অফিসাররা জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। তার নামে অস্ত্র ও মাদক মামলা হবে।
তিনি বলেন, আমার ভাইকে র্যাবের কোন অফিসে, কোন সিনিয়র অফিসার জিজ্ঞাসাবাদ করছেন জানতে চাইলে ওই অজ্ঞাত ব্যক্তি জানান, এই মুহূর্তে আমার ভাই কোন অফিসে আছে তা বলা যাবে না। তাকে ক্রসফায়ারও দেওয়া হতে পারে। যদি আপনার ভাইকে বাঁচাতে চান তাহলে দুই কোটি টাকা রেডি করেন। এর কিছুক্ষণ পর র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী সেই ব্যক্তি মোবাইল ফোনে আমার ভাইকে তাদের সহযোগীদের দ্বারা মারধরের শব্দ শােনান এবং আমার ভাইকে মোবাইল ফোন দিলে আমার ভাই কাঁদতে কাঁদতে জানায়, তাকে চোখ বেঁধে গাড়িতে তুলে বেদম মারধর করছে। আমার ভাই কাঁদতে কাঁদতে বাঁচার আকুতি জানায়।
রাইয়ানা অভিযোগে বলেন, পরবর্তীতে ওই নম্বর থেকে আরও অজ্ঞাত ২-৩ জন ফোন করে টাকা জোগাড় করতে পেরেছি কি না, আমার কাছে জানতে চায়। আমি তাদেরকে বলি, আমরা গরিব মানুষ। এত টাকা কোথায় পাব? একপর্যায়ে র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী সেই ব্যক্তি ১৫ লাখ টাকা দাবি করেন। আমাদের কাছে কোনো টাকা নেই জানালে সেই ব্যক্তি নগদ ১২ লাখ টাকা নিয়ে রাজধানীর একটি অভিজাত মার্কেটে যেতে বলে। থানা পুলিশ বা ডিবি পুলিশকে জানালে আমার ভাইকে প্রাণে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয়। আনুমানিক বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে আমার ভাইয়ের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন থেকে কল করে আমার সঙ্গে ভাইয়ের কথা বলিয়ে দেওয়া হয়। আমার ভাই তখন তাকে খুব মারধর করছে বলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তাদের দাবিকৃত টাকা দিয়ে দিতে বলে। আমরা তখন তার অবস্থান জানতে চাইলে সে পুনরায় জানায় তার হাত-পা ও চোখ বাঁধা। সে কোথায় আছে বলতে পারবে না।
৪ সদস্য গ্রেপ্তার নিয়ে যা বলল র্যাব
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন গণমাধ্যমকে বলেছেন, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে হাতিরঝিল থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া চার সদস্যকে ইতোমধ্যেই র্যাবের কাছে আনা হয়েছে। তাদের বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে যদি প্রমাণ পাওয়া যায় যে, তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তাহলে তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ স্বচ্ছতার সঙ্গে তদন্ত হবে।
খন্দকার আল মঈন বলেন, কোনো ধরনের সহানুভূতি দেখানো হবে না। এই পর্যন্ত র্যাবে যতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, তাদেরকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। বাহিনী কোনো ব্যক্তির অপরাধের দায় নেয় না। র্যাবে অপরাধ করলে শাস্তি দেওয়ার গড় শতভাগ।