রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :৬ এপ্রিল, ২০২১ ১০:৪২ : পূর্বাহ্ণ
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের ডালাস শহরের একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে পুলিশ ছয়জন বাংলাদেশীর লাশ উদ্ধার করেছে। স্থানীয় সময় সোমবার (৫ এপ্রিল) সকালে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে লাশগুলো ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তারা সবাই বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ও একই পরিবারের সদস্য।
নিহতরা হলেন- ১৯ বছর বয়সী যমজ ভাই-বোন ফারহান তৌহিদ ও ফারবিন তৌহিদ, বড় ভাই তানভীর তৌহিদ (২১), মা আইরিন ইসলাম (৫৬), বাবা তৌহিদুল ইসলাম (৫৪), তানভীর তৌহিদের নানি আলতাফুন্নেসা (৭৭)।
দুই ভাই পরিবারের চার সদস্যকে হত্যা করার পর তারা নিজেরাও আত্মহত্যা করেছে বলে ধারণা পুলিশের।
ওই পরিবারের এক বন্ধুর কাছ থেকে ফোন পেয়ে ডালাস শহরতলির অ্যালেনের পাইন ব্লাফ ড্রাইভ এলাকার ওই বাড়িতে পুলিশ রাত ১টার দিকে তল্লাশির জন্য যায়। সেখানে গিয়ে একটি বাড়ির এক কক্ষে একইসঙ্গে বাবা-মা ও তিন সন্তানের লাশ পড়ে থাকতে দেখে। একটু দূরেই পড়েছিল তাদের দাদির লাশ।
অ্যালেন পুলিশ জানিয়েছে, দুই ভাই ‘সুইসাইড নোট’ রেখে গেছেন। এই নোট থেকে মনে করা হচ্ছে, বড় ভাই তানভীর তৌহিদ (২১) ছোট দুই ভাই ফারহান তৌহিদ মানসিক বিষণ্ণতায় ভুগছিলেন। পরিবারকে লজ্জা ও কষ্ট থকে মুক্তি দেওয়ার জন্য দুই ভাই সবাইকে হত্যা করে নিজেরা আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন বলে সুইসাইড নোটে উল্লেখ রয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের আগে ফারহান তৌহিদ ইনস্টাগ্রামে একটি দীর্ঘ ‘সুইসাইড নোট’ পোস্ট করেছেন। এতে তিনি লিখেছেন, ‘আমি নিজেকে ও আমার পরিবারকে হত্যা করেছি।’
নবম শ্রেণি থেকে মানসিক হতাশার বিরুদ্ধে কীভাবে লড়াই করেছেন ফারহান সে কথাও লিখেছেন। তার বড় ভাইও হতাশার সঙ্গে লড়াই করেছেন বলে জানিয়েছেন।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে ইনস্টাগ্রাম পোস্টে ফারহান লেখেন, তার ভাই বলেছেন, ‘আমরা যদি এক বছরে সবকিছু ঠিক করতে না পারি, তবে আমরা নিজেদের ও পরিবারকে হত্যা করব।’
নিজেরা আত্মহত্যা করলে পরিবার লজ্জায় পড়বে। তাই লজ্জা ও কষ্ট থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য অন্যদের হত্যা করে নিজেদের আত্মহত্যার কথা সুইসাইড নোটে উল্লেখ রয়েছে বলে পুলিশের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে।
সুইসাইড নোটে হত্যার পরিকল্পনার কথাও লেখা আছে।
ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তা স্থানীয় পুলিশের সার্জেন্ট জন ফেল্টি স্থানীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ডালাস মর্নিং নিউজকে বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, সাপ্তাহিক ছুটির দিন রোববার দুই ভাই পরিবারের অন্য সদস্যদের হত্যার পর নিজেরা আত্মহত্যা করেছে। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব নর্থ টেক্সাসের সেক্রেটারি নাহিদা আলী বিবিসিকে বলেছেন, আকস্মিক এ ঘটনায় টেক্সাসের পুরো বাংলাদেশী সম্প্রদায় হতবাক হয়ে পড়েছে। তার বর্ণনায়, পরিবারটি ছিল ছিমছাম ও শান্তিপ্রিয়। প্রতিবেশীসহ অন্যদের সহযোগিতার করার ক্ষেত্রে তাদের সুনাম আছে। তিনটি সন্তানই খুব মেধাবী ছিল। ছোট ছেলেটি ফেসবুকে একটি নোট দিয়ে গেছে। যেখানে বলা হয়েছে যে তিনি ও তার ভাই বিষণ্ণতায় ভুগছিলেন দীর্ঘ দিন ধরে।
নাহিদা আলী আরো বলেন, বিষণ্ণতার জন্য তারা দীর্ঘ দিন ধরে চিকিৎসাও নিয়েছে বলে ছোট ছেলেটি তার নোটে লিখেছেন। যদিও পরিবার থেকে এসব কখনো অন্যদের সাথে শেয়ার করেনি।