নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা প্রকাশের সময় :৩ এপ্রিল, ২০২১ ৬:০৫ : অপরাহ্ণ
জাতীয় সংসদে হেফাজতে ইসলামকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছেন সরকারি দলের সাংসদ ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। তিনি বলেছেন, ‘নামে হেফাজতে ইসলাম, এরা ইসলামবিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধী। তাদের মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ তালেবান রাষ্ট্র নয়, পাকিস্তান নয়। সন্ত্রাসী জঙ্গিদের বাংলার মাটিতে কোনো স্থান নেই।’
আজ শনিবার (৩ এপ্রিল) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ‘যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে মেনে নিতে পারেনি, তারা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী আর সুবর্ণজয়ন্তীর সুন্দর অনুষ্ঠানটি কলঙ্কিত করার জন্য চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সহিংস ঘটনা ঘটিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বিএনপি-জামায়াত, স্বাধীনতাবিরোধী হেফাজতে ইসলাম হাটহাজারীতে তাণ্ডব চালায়। এ ছাড়া সিলেট, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, যাত্রাবাড়ী বায়তুল মোকাররম, বসুন্ধরা এবং ৩০০ ফিট রাস্তার বিভিন্ন স্থানের স্থাপনায় আগুন দেয় ও গাড়ি ভাঙচুর করে।’
সরকারকে হেফাজতের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে কেন্দ্র করে যেসব সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, প্রয়োজনে ট্রাইব্যুনালে দ্রুত সেসবের বিচার করতে হবে। সেই সঙ্গে যেসব মাদ্রাসা থেকে রাস্তায় বের হয়ে ‘মানুষকে হত্যা, বাড়িঘর ও স্থাপনায় আক্রমণ’ হয়েছে সেসব মাদ্রাসা বন্ধ করে দেওয়া এবং ২০১৩ সালের ৫ মের ঘটনায় হওয়া মামলাগুলো দ্রুত তদন্ত করতে হবে।’
একটি ছবি দেখিয়ে শেখ সেলিম বলেন, ‘এই জঙ্গিরা তলোয়ার নিয়ে ঘোড়ার ওপর উঠে পেছনে শত শত জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের হাতে অস্ত্র দিয়ে সাধারণ মানুষকে হত্যা এবং স্থাপনাকে ধ্বংস করার জন্য তাণ্ডব চালিয়েছে। ছবি দেখে মনে হচ্ছে প্রাচীনকালের মতো কোনো যুদ্ধে যাচ্ছে।’
২০১৩ সালে হেফাজতের আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘২০১৩ সালের ৫ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে থেকে বিভিন্ন স্থানে বিনা কারণে কী তাণ্ডব করেছিল। সেদিন খালেদা জিয়া বিএনপিকে হেফাজতের পাশে থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তারা বায়তুল মোকাররমে মসজিদে আক্রমণ করে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও আওয়ামী লীগ অফিসে আক্রমণ করে। এরা স্বাধীনতাবিরোধী। ইসলামবিরোধী, জঙ্গি। এরা রাষ্ট্রের শত্রু। দেশের শত্রু। এদের কোনো ছাড় দেওয়া যেতে পারে না।’
শেখ সেলিম বলেন, ‘জন্মশতবার্ষিকী আর সুবর্ণজয়ন্তীর জন্য অনেক কিছু আমরা সহ্য করে গেছি। আর কোনো কিছু সহ্য করা হবে না। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে আরও কঠোর হতে হবে। আপনার পেছনে ১৪ কোটি মানুষ আছে। এই অপশক্তিকে ছাড় দেওয়া যাবে না। ইসলাম শান্তির ধর্ম, মানবতার ধর্ম। ইসলাম ধ্বংস করে না। ইসলাম সৃষ্টি করে। কোনো সন্ত্রাসী জঙ্গিরা ইসলামকে হেফাজত করতে পারে না। ইসলামকে হেফাজত করবে আল্লাহ।’
বিএনপি ২৪ থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত স্বাধীনতা দিবসের সব কর্মসূচি স্থগিত করার সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের এই প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, ‘যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে তারা স্বাধীনতার কর্মসূচি বন্ধ করতে পারে না। বিএনপি-জামায়াত-হেফাজত এরা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। বিএনপি ২৬ মার্চ স্মৃতিসৌধে যায়নি। কারণ তারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না।’
শেখ সেলিম বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদি প্রথমবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর বাংলাদেশ থেকে সবার আগে অভিনন্দন জানান খালেদা জিয়া। বিএনপি অফিসে মিষ্টি বিতরণ করছিল তারা।’
২০১৬ সালে মোদির বাংলাদেশ সফরের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘২০১৬ সালের ৬ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে আসেন। খালেদা জিয়া ৭ জুন সোনারগাঁও হোটেলে গিয়ে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করেন। বিগলিত হাসি দিয়ে হ্যান্ডশেক করেন। তখন মোদি ভালো ছিলেন। এখন সেই মোদি খারাপ হয়ে গেলেন। এর ভেতর কী গোলমালটা হয়েছে? কেন খারাপ? এমন কী হলো, তা দেশবাসী জানতে চায়।’