রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :২০ মার্চ, ২০২১ ১০:০০ : অপরাহ্ণ
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী নির্বাচনের আগেই তিনজন প্যানেল মেয়র চূড়ান্ত করে ফেলেছেন। তিনি গত ১৭ মার্চ রাতে তার নগরীর বহদ্দারহাটের বাসায় ২৫ জন কাউন্সিলরকে নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকে তিনি তার পছন্দের তিন প্যানেল মেয়র প্রার্থীকে ভোট দিতে কাউন্সিলরদের অনুরোধ করেছেন। অনেক কাউন্সিলরকে তিনি ফোনে এ বার্তা পাঠিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে চসিকের একজন কাউন্সিলর রাজনীতি সংবাদকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
চূড়ান্ত হওয়া তিন প্যানেল মেয়র হলেন-১৫ নম্বর বাগমনিরাম ওয়ার্ডের গিয়াস উদ্দিন, ২৫ নম্বর রামপুর ওয়ার্ডের আবদুস সবুর লিটন এবং ১২ নম্বর সংরক্ষিত মহিলা আসনের (২৭,৩৭ ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড) আফরোজা কালাম।
এদের মধ্যে গিয়াস উদ্দিন সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের সাথে রাজনীতি করেন। আবদুস সবুর লিটন হলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী। আর আফরোজা কালাম সাংসদ ডা. আফছারুল আমীনের অনুসারী।
রাজনীতি সংবাদের কাছে প্যানেল মেয়র চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘প্যানেল মেয়র নির্বাচন নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যাথা নেই। নির্বাচনের যারা বিজয়ী হবে তাদের স্বাগতম জানাবো।’
আগামী ২২ মার্চ সকাল ১০টায় নগরীর আন্দরকিল্লায় পুরোনো নগর ভবনের কে বি আবদুচ ছত্তার মিলনায়তনে চসিকের প্যানেল মেয়র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গোপন ব্যালটের মাধ্যমে প্যানেল মেয়র নির্বাচনের কথা রয়েছে। ৫৫ জন কাউন্সিলরের মধ্যে নির্বাচনে ভোট দেবেন ৫৪ জন কাউন্সিলর। গত ১৮ মার্চ এই প্যানেল মেয়র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টুর মৃত্যুতে নির্বাচন স্থগিত করা হয়।
প্যানেল মেয়র পদে ৪১টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১৪টি সংরক্ষিত আসনের মহিলা কাউন্সিলরদের মধ্য থেকে ৩ জন নির্বাচিত হবেন। এর মধ্যে ২ জন পুরুষ ও ১ জন নারী।
পুরুষ প্যানেল মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৬ জন। এরা হলেন-২০ নম্বর দেওয়ান বাজার ওয়ার্ডের চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, ১০ নম্বর
উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডের নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, ১৫ নম্বর বাগমনিরাম ওয়ার্ডের গিয়াস উদ্দিন, ২৫ নম্বর রামপুর ওয়ার্ডের আবদুস সবুর লিটন, ৩২ নম্বর আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের জহর লাল হাজারী এবং ১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডের হারুন উর রশীদ।
নারী প্যানেল মেয়র পদে প্রতিদন্দ্বিতা করছেন ৫ জন। এরা হলেন-১২ নম্বর সংরক্ষিত মহিলা আসনের (২৭,৩৭ ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড) আফরোজা কালাম, ৮ নম্বর সংরক্ষিত মহিলা আসনের (২২,৩০ ও ৩১ নম্বর ওয়ার্ড) নীলু নাগ, ১৩ নম্বর সংরক্ষিত মহিলা আসনের (৩৩,৩৪ ও ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড) লুৎফুন্নেছা দোভাষ বেবী, ১ নম্বর সংরক্ষিত মহিলা আসনের (১,২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড) ফেরদৌস বেগম মুন্নী এবং ২ নম্বর সংরক্ষিত মহিলা আসনের (৪,৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড) জোবাইরা নার্গিস খান।
২০১৫ সালে তৎকালীন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনও নির্বাচনের আগে তার পছন্দের তিন কাউন্সিলরকে নিয়ে প্যানেল মেয়র চূড়ান্ত করে ফেলেছিলেন। প্যানেল মেয়র নির্বাচন ছিল কেবল আনুষ্ঠানিকতা।
গত বারের তিন প্যানেল মেয়র ছিলেন-চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু এবং জোবাইরা নার্গিস খান।
জানা গেছে, এবারও প্যানেল মেয়র চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার বিষয়টি গত ১৮ মার্চ থেকে অনেক কাউন্সিলরদের মধ্যে চাওর হয়ে গেছে। মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর অনুরোধে তার পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিতে কাউন্সিলরদের অনেকে সম্মতি দিয়েছেন।
১৭ নম্বর পশ্চিম বাকলিয়ার কাউন্সিলর মোহাম্মদ শহিদুল আলম রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘প্যানেল মেয়র প্রার্থী নিয়ে আমাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। আমরা যেহেতু রাজনীতি করি, তাই কমিটমেন্ট রক্ষা করতে হবে। দলের স্বার্থে আমাদের অনেক কিছু বিবেচনা করতে হয়।’
প্যানেলে নাম চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিন রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘আমিও অনেকের কাছে বিষয়টা শুনেছি। কিন্তু আমি এ নিয়ে কিছুই জানি না।’
আফরোজা কালাম বলেন, ‘আমি নির্বাচন করছি সেটা মেয়রকে বলেছি। কিন্তু আমার নাম চূড়ান্ত হওয়ার বিষয়টা সম্পর্কে কিছু জানি না।’
জানা গেছে, নির্বাচনের আগে মেয়র রেজাউল করিম তার পছন্দের প্রার্থী চূড়ান্ত করার খবরে কাউন্সিলরদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। নির্বাচনের দিন এ নিয়ে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে।
প্যানেল মেয়র প্রার্থী ১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডের হারুন উর রশীদ রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘শুনেছি মেয়র মহোদয় তিনজন প্রার্থীর প্যানেল করে তদেরকে ভোট দেওয়ার জন্য অনেক কাউন্সিলরকে অনুরোধ করেছেন। মেয়কে যাকে অনুরোধ করবেন তিনি তো ভোট দিতে বাধ্য।’
জানা গেছে, নির্বাচনে জেতার জন্য প্যানেল মেয়র প্রার্থীরা কাউন্সিলরদের বিভিন্ন উপহার দিচ্ছেন। পাঞ্জাবি, শাড়ি থেকে শুরু করে মোবাইলও উপহার দেওয়া হচ্ছে।
৩০ নম্বর পূর্ব মাদারবাড়ি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আতাউল্লাহ চৌধুরী রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘প্যানেল মেয়র প্রার্থী আবদুস সবুর লিটন আমাকে একটি মোবাইল উপহার দিয়েছেন। কিন্তু উপহার দিলেই যে ভোট দিতে হবে তা কিন্তু নয়।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্যানেল মেয়র প্রার্থী আবদুস সবুর লিটন রাজনীতি সংবাদকে বলেন, ‘উপহার দিয়ে থাকলে সমস্যাটা কি? আমিও একটা অনলাইন পত্রিকার মালিক। এটা কি জাতীয় ইলেকশন যে ভোটারদের কিছু দিলে সেটা.. পরিপন্থী? আমার কাছে তো কেউ কেউ পাঞ্জাবি-পায়জামা পাঠিয়েছেন। অনেকে তো চেইনও দিচ্ছেন।’