রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :১৫ মার্চ, ২০২১ ৯:০৩ : পূর্বাহ্ণ
আরও একটি রক্তাক্ত দিনের প্রত্যক্ষদর্শী হলো মিয়ানমার। মিয়ানমারে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে গতকাল (১৪ মার্চ) রোববার একজন পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৩৯ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে। এর মধ্যে দেশটির প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনের হ্লায়াইং থারইয়া এলাকায় বিক্ষোভে সেনা-পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন ২১ জন বিক্ষোভকারী।এর আগে ৩ মার্চও ৩৮ জন প্রাণ হারায়।
গতকাল সেনা-পুলিশের সাথে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় শহর ইয়াঙ্গুন। লাঠি ও ছুরি ব্যবহারকারী বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি ছুড়েছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। এতে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপি)। হতাহতের পাশাপাশি চলে ব্যাপক ধরপাকড়।
পশ্চিম ইয়াঙ্গুনের হ্লাইংথায়া উপশহরীয় এলাকায় চীনা বিনিয়োগে পরিচালিত দুটি পোশাক কারখানায় আগুন ধরিয়ে দিলে সেখানে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
এ ছাড়া মান্দালয় ও বাগোসহ অন্যান্য শহরের এদিন ১৬ বিক্ষোভকারী ও এক পুলিশ নিহত হয়।
জান্তা বিরোধী বিক্ষোভকারীরা মনে করে, চীন মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে সমর্থন দিচ্ছে। যদিও চীন এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। বিক্ষোভকারীদের হামলার আশঙ্কায় ইয়াংগুনে বিভিন্ন চীনা কারখানা এলাকায় মার্শাল ল জারি করা হয়েছে।
পোশাক কারখানায় আগুন দেওয়ার ঘটনায় চীনা দূতাবাস গতকাল রোববার মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানায়।
কারখানা দুটিতে কারা আগুন ধরিয়েছে তা স্বীকার করেনি কোনো গোষ্ঠী বা পক্ষ।
তবে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে নেতৃস্থানীয় এই থিনজার মং তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘সবে দুটি কারখানা পোড়ানো হয়েছে। যদি তোমরা মিয়ানমারে শান্তিমতো ব্যবসা করতে চাও, তবে মিয়ানমারের জনগণের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হও। লড়াকু হ্লাইংথায়ার জন্য আমরা গর্বিত!’
ইয়াঙ্গুনের চীনা কারখানা এলাকায় দায়িত্বরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ফটোসাংবাদিক রয়টার্সকে বলেন, ‘মারাত্মক ভয়াবহ পরিস্থিতি, চোখের সামনে মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে, আমি জীবনেও এই দৃশ্য ভুলতে পারব না।’
গতকালের ঘটনা নিয়ে বিক্ষোভে অন্তত ১২৬ জনের প্রাণহানি ঘটল এবং গত শনিবার পর্যন্ত দুই হাজার ১৫০ জনের বেশি লোককে আটক করা হয়েছে বলে জানায় এএপিপি। তবে এদের মধ্যে থেকে ৩০০ জনের মতো মুক্তি পেয়েছে।
গত ১ ফেব্রুয়ারি দেশটির সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বে রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতের পর থেকে দেশটিতে জান্তাবিরোধী তুমুল বিক্ষোভ চলছে। সেনা অভ্যুত্থানের অবসান এবং দেশটির নেত্রী অং সান সু চিসহ সামরিক বাহিনীর হাতে আটক রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তির দাবিতে রাজপথে রয়েছে মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি সাধারণ জনগণ।
সূত্র: বিবিসি ও রয়টার্স