রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :১০ মার্চ, ২০২১ ৯:৩০ : অপরাহ্ণ
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমি সরকারকে বলতে চাই, আপনারা ব্যর্থ হয়েছেন, সেই দায় নিয়ে পদত্যাগ করুন। নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন। নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ ইসির অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে একটি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করুন।’
আজ বুধবার (১০ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর খিলাগাঁও তালতলায় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
‘নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সাজানো মামলা প্রত্যাহার, ডিজিটাল কালো আইন বাতিলের দাবি এবং নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে’ এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
দুপুর ২টায় সমাবেশ শুরুর আগেই সমাবেশস্থল ও এর আশপাশের এলাকা নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। দলীয় নেতা-কর্মীরা খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিভিন্ন স্লোগানে সমাবেশ প্রাঙ্গণ মুখরিত করে তুলেন। এতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ, বরিশাল, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচনে দলীয় মেয়র প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এত বড় কঠিন সময় স্বাধীনতার ৫০ বছরে জাতি কখনো অতিক্রম করেনি। কিন্তু ৫০ বছর পরে আমরা কী দেখছি, সরকার আমাদের অধিকারগুলো কেড়ে নিচ্ছে। এই সরকার বন্দুকের মুখে আমাদের সব অধিকার কেড়ে নিচ্ছে!’
যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশন তো আজ্ঞাবহ ক্রীতদাসের চেয়েও খারাপ। সরকারকে কিছু বলতে হয় না, তার আগে বলে দেয়, খুব ভালো নির্বাচন হয়েছে, সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে, এই যে, আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা সব জয়লাভ করেছে।’
ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থীদের কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা কি ভোট দিতে গেলে ভোট দিতে পারি? এই যে আমাদের ছয়জন মেয়র প্রার্থী এখানে বসে আছেন, তারা কেউ ভোট করতে পারেননি। তাদের ভোটের দিন সবাইকে বের করে দেওয়া হয়েছে কেন্দ্র থেকে এবং সন্ধ্যা বেলা তাদের পছন্দমতো ফলাফল ঘোষণা করেছে।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই সরকার এতো দুর্বল যে তাদের নিজেদের রক্ষা করার জন্য নতুন নতুন আইন তৈরি করতে হয়। এই যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তৈরি করেছে। এই যে আপনারা মোবাইল বলেন, ফেসবুক খোলেন-এগুলো ওরা নিয়ন্ত্রণ করে, মনিটর করে। কে কোথায় কী বলে না বলে ওইগুলো দেখে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কয়েকদিন আগে আমাদের সুপ্রিম কোর্টের চিফ জাস্টিস বলেছেন, লেখালেখি করা ভালো কিন্তু রাষ্ট্রের ইমেজ নষ্ট হয়-এটা আমরা মেনে নেব না। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে যে, অবশ্যই আমাদের জানাতে হবে যে, কোন কাজে রাষ্ট্রের ইমেজ নষ্ট হয়। লেখালেখি করলে রাষ্ট্রের ইমেজ নষ্ট হয়। সেজন্য মুশতাক আহমেদকে কারাগারে মৃত্যুবরণ করতে হয়। আর সেজন্য কার্টুনিস্ট কিশোরের সমস্ত শরীর রক্তাক্ত করা হয়, তার মাথার মধ্যে রক্তপাত হয়। সেখানে ইমেজ নষ্ট হয় না রাষ্ট্রের? আমরা যখন দেখি প্রায় ৭০০ লেখক, তারা লেখালেখি করার জন্য এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটকা পড়ে আছেন, তখন রাষ্ট্রের ইমেজ নষ্ট হয় না?’
সরকারকে উদ্দেশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে আমার যে ন্যায্য হিস্যাগুলো রয়েছে-তা আমি চাইতে পারব না? দুঃখ হয়, যখন দেখলাম- ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসলেন। এসে ব্রিফিং ও সভা করলেন। সীমান্ত হত্যার বিষয়ে আমাদের সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, অপরাধ না হলে হত্যা হবে না।’
মির্জা ফখরুল প্রশ্ন রাখেন, ‘হত্যা করার অধিকার কে কাকে দিয়েছে? বিনা বিচারে কোনো সভ্য দেশের আইনে কাউকে হত্যা করার অধিকার দেয়নি।’
তাবিথের আউয়ালের সভাপতিত্বে এবং মহানগর উত্তরের মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু ও এএফএম আব্দুল আলিম নকির পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা শ্যামা ওবায়েদ, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, শিরিন সুলতানা, আবদুস সালাম আজাদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কাজী আবুল বাশার, হাবিবুর রশীদ হাবিব, যুবদলের সাইফুল আলম নিরব, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, এসএম জাহাঙ্গীর, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, সুলতানা আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, শ্রমিক দলের মুস্তাফিজুল করীম মজুমদার প্রমুখ।