শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা জাতীয়

বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণে ছিল স্বাধীনতার পূর্ণ দিকনির্দেশনা



রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :৭ মার্চ, ২০২১ ১০:০০ : পূর্বাহ্ণ

ঐতিহাসিক ৭ মার্চ আজ। বাঙালি জাতির দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক অনন্য দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন।

এ দিন লাখ লাখ মুক্তিকামী মানুষের উপস্থিতিতে এই মহান নেতা বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেব, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশা আল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, জয়বাংলা।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একাত্তরের ৭ মার্চ দেওয়া ঐতিহাসিক ভাষণ পরবর্তী সময়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের বীজমন্ত্র হয়ে পড়ে। একইভাবে এ ভাষণ শুধু রাজনৈতিক দলিলই নয়, জাতির সাংস্কৃতিক পরিচয় বিধানের একটি সম্ভাবনাও তৈরি করে।

বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয় জাতিসংঘের শিক্ষা বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিকবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কতটা দূরদর্শী নেতা ছিলেন তার প্রমাণ ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ। একদিকে জাতিকে স্বাধীনতার পূর্ণ দিকনির্দেশনা দেয়া, অন্যদিকে বিচ্ছিন্নতাবাদি হিসেবে যাতে চিহ্নিত না হন। এই দুটি বিষয়ের ভারসাম্য রক্ষা করেই প্রায় ১৮ মিনিটের এই ভাষণ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।

১৯৭১ সালের ১লা মার্চ থেকেই বিক্ষোভে উত্তাল ছিল ঢাকার রাজপথ। এরপর ধারাবাহিকভাবে দেশের মানচিত্র খচিত পতাকা ওড়ানো, স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ ও জাতীয় সংগীত ঠিক করা হয়। কিন্তু দেশের জনগণ তখন অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে বঙ্গবন্ধুর দিকনির্দেশনার অপেক্ষায়। ৩রা মার্চ পল্টনে ছাত্র সমাবেশে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দিলেন ৭ই মার্চের ভাষণের।

অবশেষে এলো ৭ই মার্চ, ১৯৭১। রবিবার বিকেলে স্বাধীনতার দাবিতে উত্তাল দেশের সব জনস্রোত সেদিন মিলিত হয়েছিল তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে। লাখ লাখ মানুষের জনসভায় ভাষণ দেবেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কেমন ছিল সেই ভাষণের প্রস্তুতি?

বঙ্গবন্ধুর প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ৭ই মার্চের ভাষণটি তখনকার বাঙালিদের মধ্যে একটা শক্তি সঞ্চার করে। সারাদেশের মানুষ এসে এখানে ঝাপায়া পড়ছে। এই ভাষণ নিয়ে তিনি তেমন কোন প্রস্তুতি নেননি। প্রতিদিন উনার যে রুটিন ছিল,ওইদিনও তেমন কাজই করেছেন।

পৌনে তিনটায় ভাষণ শুরু করলেন বঙ্গবন্ধু। শেষ করলেন ৩টা তিন মিনিটে। ১৮ মিনিটে স্বাধীনতাকামী জাতিকে দিলেন সব নির্দেশনা।

বঙ্গবন্ধুর প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, তিনি জানতেন জনগণকে সাহসও দিতে হবে আবার শান্তও রাখতে হবে। অনেক কিছু বিবেচনা করেই উনাকে বক্তব্য দিতে হয়েছে। ভবিষ্যতে কি হবে এই ভাষণের মাধ্যমেই তিনি জনগণকে জানিয়ে দিয়েছেন।

বঙ্গবন্ধু ভাষণ দেয়ার সময় তাঁর ঠিক পেছনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন মহিউদ্দিন। ভাষণ শেষ হতেই আবারো স্বাধীনতার পক্ষে শ্লোগানে শ্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠে রাজপথ।

রাজনীতি বিশেষজ্ঞদের মতে, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুধু বাঙালি জাতিকে মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান নয়। এটি সব জাতির মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার দিকনির্দেশনা।

দিবসটি উপলক্ষে স্বাস্থ্যবিধি মেনে জাতীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

মন্তব্য করুন
Rajniti Sangbad


আরও খবর