আজকে আওয়ামী লীগ একটি ভিন্ন মোড়কে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল আলমগীর। তিনি বলেন, ‘এই আওয়ামী লীগই সেই দল, স্বাধীনতার পরে মানুষের যে আকাঙক্ষা ছিল, যে স্বপ্ন ছিল, সেই স্বপ্নকে তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। যে সংবিধান রচনা করা হলো ৭২ সালে, সেই সংবিধানকে তারাই কেটে ছিঁড়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েছে। তারাই এই দেশের মানুষের ওপর অত্যাচার নিপীড়ন নিয়ে এসেছে। এ দেশের মানুষ কি ভুলে যাবে রক্ষীবাহিনীর কথা ? কী নির্মম-নিষ্ঠুর নির্যাতন করা হয়েছে শুধু মাত্র ভিন্ন মত পোষণ করার জন্য।’
আজ (৩ মার্চ) বুধবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন। ৩ মার্চ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ দিবস উপলক্ষে বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটি এ আলোচনা সভা আয়োজন করে।
মির্জা ফখরুল আলমগীর বলেছেন, ‘স্বাধীনতা এমনি এমনি আসেনি। ভাষণ দিয়ে দিল আর দেশ স্বাধীন হয়ে গেল— বিষয়টি এমন না। এর জন্য অনেক দাম দিতে হয়েছে আমাদের। স্বাধীনতা কারও দয়ায় পাওয়া না। এ দেশের খেটে খাওয়া কৃষক, কারখানার শ্রমিক, পেশাজীবী, ছাত্রসমাজ— সবার সংগ্রাম-লড়াইয়ে দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর দেশ স্বাধীন হয়েছে। তাই যারা বলেন একজন মাত্র মানুষ, একজন মাত্র নেতা— যার ডাকে দেশ স্বাধীন হয়ে গেছে, এটা একেবারে মিথ্যা, জাতির সঙ্গে প্রতারণা।’
তিনি বলেন, ‘আমরা লড়াই করে, যুদ্ধ করে একটি দেশের জন্ম দিয়েছিলাম এবং এই যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি, শ্রদ্ধা নিবেদন করছি আমাদের মহান জাতীয় নেতৃবৃন্দ শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, মওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা ইতিহাসকে বিকৃত করতে চাই না। সেজন্যই স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটিতে সেইসব বীর যোদ্ধাদের সামনে নিয়ে এসেছি। আমরা ইতিহাসে যার যা প্রাপ্য সেটি তাকে দিতে চাই। যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় নেতৃত্ব দিয়েছিল, নির্যাতিত হয়েছিল তাদেরকে আওয়ামী লীগ স্মরণ করতে চায় না।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, লেখক, ব্লগার মোস্তাক আহমেদকে সরকারের সমালোচনা করে একটি লেখার জন্য সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছে এবং ছয় মাস তাকে জামিন না দিয়ে কারাগারে আটক রাখা হয়েছিল। শুধু মোস্তাক আহমেদ নন, এরকম বহু মানুষকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে আটক রাখা হয়েছে। আপনারা দেখেছেন সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে যাওয়ায় আমাদের ছাত্রনেতাদের কে কি অমানবিক ভাবে নির্যাতন করা হয়েছে গত কয়েক দিন আগে। হাসপাতাল থেকে একটি ছেলেকে তুলে নিয়ে গিয়ে রিমান্ডে নিয়ে তার উপর পৈশাচিক নির্যাতন চালানো হয়।
বিএনপি মহাসচিব প্রশ্ন রাখেন, আমরা জানতে চাই, জনগণের প্রতিপক্ষ কেন পুলিশ? প্রতিপক্ষ তো আপনারা বানিয়েছেন, নিজেরা বানিয়েছেন।
বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, সাবেক ছাত্র নেতা শামসুজ্জামান দুদু, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, হাবিবুর রহমান, জহির উদ্দিন স্বপন, ফজলুল হক মিলন, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, নাজিম উদ্দীন আলম, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী।