রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক
প্রকাশের সময় : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ৯:১৫ অপরাহ্ণ
সেনা শাসনের বিরুদ্ধে চার সপ্তাহের বিক্ষোভে সবচেয়ে রক্তাক্ত দিন পার করলো মিয়ানমার। আজ (২৮ ফেব্রুয়ারি) রোববার বিক্ষোভ দমনে নিরাপত্তা বাহিনীর মারমুখী অবস্থানে দেশটির বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১৮ জন নিহত ও ৩০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
আজ দেশটির ইয়াঙ্গুন, দাওয়েই ও মান্দালয় শহরে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলির পাশাপাশি স্টান গ্রেনেড ও কাঁদুনে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। বিক্ষোভ দমনে সামরিক বাহিনীর সদস্যরাও পুলিশের সঙ্গে যোগ দেয়। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সকাল থেকে মিয়ানমারের বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার মানুষ সেনা অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে যোগ দেয়। আগের দিন অনলাইনে বড় ধরণের বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। এতে সাড়া দেন সব শ্রেণিপেশার মানুষ।
বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে প্রথমে স্টান গ্রেনেড ও কাঁদুনে গ্যাস ব্যবহার করা হয়। এতে ব্যর্থ হয়ে সরাসরি গুলি ছোড়ে পুলিশ।
জ হেইন নামে একজন উদ্ধারকর্মী জানান, দক্ষিণাঞ্চলীয় দাওয়েই শহরে নিরাপত্তা বাহিনীর ছোড়া গুলিতে তিনজন নিহত হন। এসময় রাবার বুলেটে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। তাদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ইয়াঙ্গুনেও বড় বিক্ষোভ হয়েছে। শহরটিতে শিক্ষকদের একটি বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে স্টান গ্রেনেড ব্যবহার ও গুলি ছোড়ে পুলিশ। এ সময় এক নারী মারা যান।
এছাড়া বুকে গুলিবিদ্ধ এক ব্যক্তিকে হাসপাতালে নেয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চিকিৎসক।
একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক অ্যামি কিয়াও বলেন, আমরা বিক্ষোভে নামামাত্র পুলিশ গুলি চালানো শুরু করে। তারা সতর্ক করতে টু শব্দটিও উচ্চারণ করেনি। গুলিতে কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ অবস্থায় কিছু বিক্ষোভকারী আশপাশে বাড়িঘরে আশ্রয় নেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায়, ইয়াঙ্গুনের রাস্তা থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ছেন। কয়েকজন লোককে ধরাধরি করে প্রতিবাদ থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে, তাদের দেহ রক্তাক্ত।
এছাড়া মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়েও দুজন নিহত হয়েছেন। সেখানেও সকাল থেকেই বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও হয় পুলিশ। উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় শহর লাশিও এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মায়িকেও বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে।
বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটির প্রথম ক্যাথলিক কার্ডিনাল চার্লস মাউং বো টুইটারে বলেছেন, মিয়ানমার যুদ্ধক্ষেত্রের মতো হয়ে গেছে।
এর আগে ২০ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে পুলিশের গুলিতে দুই বিক্ষোভকারী নিহত হন। এদিন রাতে ইয়াঙ্গুনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান আরেক বিক্ষোভকারী। এর আগের দিন রাজধানী নেপিদোয় বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের গুলিতে প্রাণ যায় এক তরুণীর।
সামরিক জান্তাপ্রধান জেনারেল সিন অং হ্লাইং বলছেন, বিক্ষোভকারীদের মোকাবিলায় ন্যূনতম শক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।
মিয়ানমারে গত নভেম্বরের নির্বাচনে অং সান সু চির ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) বিপুল জয় পায়। কিন্তু নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তোলে সেনাবাহিনী। তারা পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশন শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে ১ ফেব্রুয়ারি ভোরে সামরিক অভ্যুত্থান করে।
এদিন সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনী সু চির সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে। সেনাবাহিনী প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট ও স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চিসহ রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার করে। এরপর দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়।
সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে মিয়ানমারের বিভিন্ন শহরেই বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা অং সান সু চিসহ বন্দী রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তির পাশাপাশি সামরিক শাসন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছেন।