রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ৫:০০ : অপরাহ্ণ
৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব অস্বীকার করার কিছু নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেই সাথে তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের ঘোষণার গুরুত্বও স্বীকার করতে হবে। আমরা শুধু ৭ মার্চ নয়, আমরা ২ মার্চ, ৩ মার্চও পালন করছি।’
আজ (২৭ ফেব্রুয়ারি) শনিবার দুপুরে স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে গণমাধ্যমের সম্পাদক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে গুলশানে হোটেল লেকশোরে বিএনপির মতবিনিময় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
২ ও ৩ মার্চ বিএনপি কেন কর্মসূচি পালন করছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা ২রা মার্চ কেনো করছি? সেদিন প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন তখনকার ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা আ স ম আবদুর রব। আমরা সেটাও পালন করছি, দ্যাট ইজ এ পার্ট অব হিস্ট্রি। তিন তারিখ কি? স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেছেন শাহজাহান সিরাজ সাহেব। এটাকে অস্বীকার করবো কি করে? আজকে তার রাজনৈতিক ধারা ভিন্ন, রাজনৈতিক দল ভিন্ন হতে পারে কিন্তু দ্যাট ইজ রিয়েলিটি, দ্যাট ইজ পার্ট অব হিস্ট্রি।’
একাত্তরের ৭ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ অবশ্যই ইতিহাস উল্লেখ করে বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, ‘তার সম্মান, তার মর্যাদা তাকে দিতে হবে। তার অর্থ এই নয় যে, ৭ মার্চ আপনি যখন পালন করবেন তখন এই কথা বলবেন, ৭ই মার্চের ডাকে স্বাধীনতা হয়ে গিয়েছিল কিনা সেটা তো আলোচনার মধ্যে আসবে, ইতিহাস থেকে আসবে, ইতিহাসের সমস্ত বই থেকে আসবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কাউকেই খাটো করার কোনো রকম ইচ্ছা আমাদের নেই এবং আমরা বিশ্বাস করি সেটা উচিতও না। বিশেষ করে স্বাধীনতার ব্যাপারে প্রকৃত সত্য সকলকে উদ্ঘাটিত করতে হবে। এজন্য জোর দিয়ে বলছি, আমরাও ওই সময়ে, ওই যুদ্ধের সময়ে আমরা যুবক, আমরা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি, প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি সময় আমাদের সামনে জ্বলজ্বল হয়ে আছে। কে বক্তৃতাতে ৭ মার্চে কি বলেছিলেন, পরবর্তীকালে ২রা মার্চে কি বলেছিলেন, ৩রা মার্চে কি বলেছিলেন, ৯ মার্চ মওলানা ভাসানী কি বলেছিলেন পল্টন ময়দানে- এগুলো ইতিহাস। একই সাথে ২৬ মার্চ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের যে ঘোষণা জাতিকে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত করেছিল এবং সমগ্র জাতি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল- এটাও ইতিহাস। সুতরাং এগুলো কোনোটাই অস্বীকার করা যাবে না।’
জাতিকে বিভক্ত করার জন্য আওয়ামী লীগকে অভিযুক্ত করে তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্য আমাদের ৫০ বছর পরে জাতি হিসেবে আমরা বিভক্ত হয়ে পড়েছি। সেটার জন্য কৃতিত্ব আওয়ামী লীগেরই। জাতিকে প্রথম থেকে তারা স্বাধীনতার পক্ষে, স্বাধীনতার বিপক্ষে, চেতনার পক্ষে, চেতনার বিপক্ষে নিয়ে গেছে। ওই চেতনা নিয়ে কি দেশ স্বাধীন হয়েছিল যে, আমি গণতন্ত্র লুট করে নেবো, আমি আগের রাতে নির্বাচন করে সরকার লুট করবো, আমি কোষাগার খালি করে দেবো। আমি একজন লেখক, একজন নিরীহ মানুষ, তিনি লেখেন সেই অপরাধে তাকে জেলে পাঠিয়ে তাকে মৃত্যু বরণ করতে হবে।’
ডিজিটাল আইনের কঠোর সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে যে ডিজিটাল আইন তৈরি করা হয়েছে আপনারা সাংবাদিকরা তার সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী। আপনাদের প্রায় ৪০০ জন বিভিন্নভাবে ভুক্তভোগী, কতজনকে জেল খাটতে হয়েছে। আপনাদের ফটোগ্রাফার কাজল, তার আগে বিখ্যাত আন্তর্জাতিক আলোকচিত্রী শহিদুল আলম- এরা সবাই। সাগর-রুনিকে হত্যা করা হয়েছে। এদের অপরাধ শুধু লেখার জন্য। আমার প্রশ্ন এই জায়গায় যে, এর জন্য তো আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেনি, এজন্য আমরা স্বাধীনতা চাইনি।’
সভায় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘গত ১২ বছর দেখেছি, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিতর্কিত করার জন্য, নানাভাবে বিকৃত করার জন্য হেন চেষ্টা নাই, তা করা হয় নাই। যিনি প্রথম যুদ্ধ ঘোষণা করলেন, যিনি প্রথম সেক্টার কমান্ডার, প্রথম ফোর্সেস কমান্ডার তাকে বিতর্কিত করার জন্য কি না করেছে। সর্বশেষ তার খেতাব বাতিলের জন্য আজকে সরকার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যে প্রচেষ্টা নিচ্ছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা বিশ্বাস করি, জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিল করার অর্থ মুক্তিযুদ্ধকে অবমাননা করা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করা।’
বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগকে আমন্ত্রণ জানানো হবে বলে জানান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মিডিয়া কমিটির আহ্বায়ক ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব শ্যামা ওবায়েদের পরিচালনায় মতবিনিময়সভায় উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, মিডিয়া কমিটির সদস্য মীর হেলাল উদ্দিন, আতিকুর রহমার রুমন, শায়রুল কবির খান, ফারজানা শারমিন পুতুল, ইয়াসির খান, মাহমুদা হাবিবা, শফিকুল ইসলাম, হুমায়ুন কবির, মীর সোলায়মান, নুরুল ইসলাম সাজু, বাবুল তালুকদার প্রমুখ।