শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ১৩ আশ্বিন, ১৪৩১ | ২৪ রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

মূলপাতা আন্তর্জাতিক

জামাল খাশোগিকে হত্যার অনুমোদন দেন সৌদি যুবরাজ: মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদন


রাজনীতি সংবাদ ডেস্ক প্রকাশের সময় :২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ১২:৩০ : অপরাহ্ণ
Rajnitisangbad Facebook Page

সৌদি আরবের ক্ষমতাধর যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ২০১৮ সালে সে দেশের ভিন্নমতাবলম্বী সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে (৫৯) হত্যায় অনুমোদন দিয়েছিলেন। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। সে বছরই সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিবেদনটি ধামাচাপা দিয়ে রাখলেও বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তা প্রকাশ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার অনুমোদন দিয়েছিলেন যুবরাজ সালমান। মোহাম্মদ বিন সালমান খাশোগিকে ‘ধরে আনতে অথবা হত্যা করার’ নির্দেশনার অনুমোদন দিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শুক্রবার সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের পরিচালকের দপ্তরের চার পাতার ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘সৌদি আরবের যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যা বা আটক করতে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অভিযানের অনুমোদন দিয়েছিলেন বলে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।’

মূলত তিনটি কারণে খাশোগি হত্যাকাণ্ডে মোহাম্মদ বিন সালমানের জড়িত থাকার কথা বিশ্বাস করছে সিআইএ। এক. ২০১৭ সাল থেকে সৌদি রাজতন্ত্রের নীতি নির্ধারণে তাঁর নিয়ন্ত্রণশীল ভূমিকা; দুই. তাঁর একজন উপদেষ্টা ও নিরাপত্তারক্ষী কয়েকজনের সরাসরি হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতা এবং তিন. বিদেশে অবস্থানরত ভিন্নমতাবলম্বীদের দমনে সহিংস উপায় ব্যবহারে তাঁর সমর্থন।

এই প্রথম মার্কিন সরকার খাশোগিকে হত্যার জন্য সরাসরি সৌদি যুবরাজকে দায়ী করল।

মোহাম্মদ বিন সালমান অবশ্য শুরু থেকে এই হত্যাকাণ্ডের দায় অস্বীকার করে আসছেন।

২০১৮ সালের অক্টোবরে তুরস্কের ইস্তাম্বুলের সৌদি দূতাবাসে যাওয়ার পরই নিখোঁজ হন ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি। সৌদি রাজবংশের ক্ষমতাধরদের কড়া সমালোচনার জন্য আলোচিত ছিলেন সুপরিচিত এই সাংবাদিক।

পুলিশের ধারণা, ৫৯ বছর বয়সী সাংবাদিক খাশোগিকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর তার মরদেহ টুকরো করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। সৌদি সরকার বরাবরই এ হত্যাকাণ্ডে যুবরাজের সংশ্লিষ্টতা থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছে।

শুক্রবার মার্কিন বিবৃতি প্রকাশের পর তাদের তদন্ত প্রত্যাখ্যান করেছে সৌদি আরব। সৌদি সরকার আগের বিবৃতির মতো আবারও জানিয়েছে, খাশোগির হত্যাকাণ্ড একদল দুর্বৃত্তের জঘন্য অপরাধ ছিল।

২০১৮ সালেও সৌদির যুবরাজই এই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা বলে সিআইএ সন্দেহ করেছিল। তবে এর আগে যুক্তরাষ্ট্র কখনো বিষয়টি প্রকাশ করেনি।

এদিকে, মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, খাশোগি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে সৌদি আরবের ৭৬ নাগরিকের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। এসব সৌদি নাগরিক যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা পাবেন না। তবে বাইডেন প্রশাসন সৌদি যুবরাজের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে না বলে মার্কিন বার্তা সংস্থাগুলো জানিয়েছে।

মোহাম্মদ বিন সালমান ও তাঁর বাবা সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল-সৌদের সমালোচক হিসেবে পরিচিত জামাল খাশোগি জীবনের নিরাপত্তার ভয়ে যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছা-নির্বাসনে চলে গিয়েছিলেন। তিনি ওয়াশিংটন ডিসির শহরতলীতে বসবাস করতে শুরু করেন এবং সেখানে বসেই ওয়াশিংটন পোস্টে নিবন্ধ লিখে সৌদি রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকেন। দেশত্যাগের আগে বহুদিন রাজ পরিবারের সঙ্গে জামাল খাশোগির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল বলে তিনি মোহাম্মদ বিন সালমান ও তাঁর রাজ পরিবারের হাঁড়ির খবর জানতেন। সৌদি যুবরাজ ঠিক এ কারণেই জামাল খাশোগিকে ভয় পেতেন।

খাশোগি ২০১৮ সালের অক্টোবরে দ্বিতীয় বিয়ে করার জন্য তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আনতে গিয়ে নৃশংসভাবে নিহত হন। সৌদি আরব থেকে বিশেষ বিমানে করে নিরাপত্তা বাহিনীর একটি দল তাঁকে হত্যা করার জন্য আগেই ইস্তাম্বুলে পৌঁছে গিয়েছিল এবং তারাই খাশোগিকে হত্যা করে তার লাশ টুকরো টুকরো করে ফেলে বলে পরবর্তী সময়ে জানা যায়। দেহখণ্ডগুলো এসিডে ঝলসে দেওয়া হয়।

সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি

মন্তব্য করুন
Rajnitisangbad Youtube


আরও খবর