রাজনীতি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় :২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ৩:০০ : অপরাহ্ণ
২১ আগস্টে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশের মঞ্চ লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছুড়ে মেরেছিলেন হরকাতুল জিহাদের জঙ্গি ইকবাল হোসেন জাহাঙ্গীর ওরফে সেলিম। এর পরই দেশ-বিদেশে আত্মগোপন করেন গ্রেনেড হামলা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এই আসামি।
গ্রেনেড হামলার ১৬ বছর এবং আদালতের রায়ের তিন বছর পর গতকাল (২২ ফেব্রুয়ারি) সোমবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ইকবালকে রাজধানীর দিয়াবাড়ী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। পরে আজ (২৩ ফেব্রুয়ারি) মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সেখানেই এই দাবি করেন র্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।
গ্রেফতার মো. ইকবাল হোসেন ওরফে ইকবাল ওরফে জাহাঙ্গীর ওরফে সেলিমের বাড়ি ঝিনাইদহে। তাকে গ্রেফতারের পর মঙ্গলবার কারওয়ান বাজারে র্যাব সদর দফতরে মিডিয়া ব্রিফিংয়ে মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইকবাল স্বীকার করে নিয়েছেন যে, মুফতি হান্নানের নির্দেশে তিনি মঞ্চের দিকে গ্রেনেড ছুড়েছিলেন।
র্যাব জানায়, ঝিনাইদহের ইকবাল একসময় ছাত্রদল করত। পরে জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদে (হুজি) জড়িয়ে পড়েন। ২০০৮ সালে তিনি বিদেশে পালিয়ে গিয়েছিলেন। ২০২০ সালের শেষ দিকে তিনি দেশে ফেরেন।
র্যাব প্রধান আল মামুন জানান, ২০০৮ সালে ইকবালকে গ্রেফতারের জন্য ঝিনাইদহে তার বাড়িতে এবং পরবর্তীতে গাজীপুর ও সাভারসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়েছিল। কিন্তু ইকবাল আত্মগোপন করেন। আত্মগোপনে থাকার সময় তিনি নিরাপত্তাকর্মী, শ্রমিক, রিকশা মেকানিক ইত্যাদি ছদ্মবেশে থাকতেন বলে আমাদের জানান।
ইকবাল ২০০৮ সালে দেশত্যাগ করেন জানিয়ে র্যাবের ডিজি বলেন, ইকবাল ১৯৯৫ হতে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় ছিলেন। প্রবাসে তিনি প্রথমে ‘সেলিম’ এবং পরে ‘জাহাঙ্গীর’ নাম ধারণ করেন। একপর্যায়ে তিনি অবৈধ অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত হন এবং তাকে ২০২০ সালের শেষের দিকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
আল মামুন বলেন, দেশে ফিরেও ইকবাল আত্মগোপন থেকে সমমনাদের সঙ্গে পুনরায় যোগাযোগ স্থাপন করেন। ২০০১ সালে তার চিন্তা-চেতনা ও মনস্তাত্বিক পরিবর্তন আসে এবং ঝিনাইদহের স্থানীয় এক জঙ্গির মাধ্যমে সে হরকাতুল জিহাদে যোগ দেন। ২০০৩ সালে মুফতি হান্নান ও অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের সান্নিধ্যে চলে আসেন এবং জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিতে থাকেন।’
দেশে ফেরার পর ইকবালের জঙ্গি সংযোগের তথ্য দিয়ে র্যাব প্রধান বলেন, ২০০৪ সালে হামলার আগেই ইকবাল ঢাকায় অবস্থান নিয়েছিলেন। আগস্টে মুফতি হান্নানের নির্দেশে সে ঢাকায় চলে আসেন এবং গোপন আস্তানায় অবস্থান করতে থাকেন। সেখানে মুফতি হান্নানসহ অন্যান্যদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক তৈরি হয় তার।
ইকবাল জবানবন্দির বরাত দিয়ে আল মামুন বলেন, মুফতি হান্নানের নির্দেশে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় সরাসরি অংশ নেন। মুফতি হান্নান তাকে গ্রেনেড সরবরাহ করেছিলেন। ইকবাল মঞ্চ লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছুড়েছিলেন।
যাবজ্জীবন দণ্ডিত ইকবাল কী করে দেশ ছাড়লেন-এমন প্রশ্নের জবাবে র্যাব প্রধান বলেন, ইকবাল যে সময় দেশ ছাড়েন, সে সময় হাতে লেখা পাসপোর্টের চল ছিল। তিনি নামও পরিবর্তন করেন অন্তত দুবার। তবে তিনি কীভাবে দেশ ছেড়েছেন এবং কীভাবে ফিরেছেন, সে সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
ইকবালকে গ্রেফতারের বর্ণনা দিয়ে চৌধুরী আবব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) দেওয়া তথ্যে র্যাবের গোয়েন্দা শাখার সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ আভিযানিক দল মঙ্গলবার ভোররাত ৩টার দিকে ইকবাল হোসেনকে দিয়াবাড়ি এলাকা থেকে গ্রেফতার করে।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে দলটির সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। ওই নৃশংস হামলায় ২৪ জন নিহত ও নেতাকর্মী-আইনজীবী-সাংবাদিকসহ পাঁচ শতাধিক লোক আহত হয়। নিহতদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমান।
তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের প্রথম সারির অন্যান্য নেতা এই গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে যান। এতে অল্পের জন্য শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচণ্ড শব্দে তাঁর শ্রবণশক্তি আঘাতপ্রাপ্ত হয়।
এ ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে দুটি মামলা হয়। ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর মামলার রায় হয়। এতে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। এ ছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। ৪৯ আসামির মধ্যে বাকি ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে অনেকে পলাতক আছেন।