তুরস্কের জনপ্রিয় টিভি সিরিজ আরতুগ্রুল দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন ৬০ বছর বয়সী এক মার্কিন নারী। ধর্ম পরিবর্তনের পর ‘খাদিজা’ নাম বেছে নেন ওই নারী। শুধু ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেই ক্ষান্ত হননি, উইসকনসিনের ওই নারী এখন হিজাবও পরেন।
তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম আনাদলুকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে খাদিজা নামের নওমুসলিম ওই নারী বলেন, আমি ওই সিরিজটি যখন চোখে পড়লো তখন এর পুরোটা (একটি পর্ব) দেখলাম। এভাবে আমার দেখা শুরু হলো। নেটফ্লিক্সে ওই সিরিজের কয়েকটি পর্ব দেখার পর ইসলামের প্রতি আমার আগ্রহ তৈরি হলো।
তিনি বলেন, আমি দ্রুতই এই সিরিজের ভক্ত হয়ে যাই। তবে আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লাগে মুহিউদ্দিন ইবনে আরাবির চিত্র। তার কথা আমাকে কাঁদিয়েছে। তিনি আমার সবচেয়ে পছন্দের চরিত্র।
খাদিজা বলেন, আমি নতুন ইতিহাস জানতে আগ্রহী। কিন্তু যখন এটি আমি দেখি তখন আমার চোখ খুলে গেছে। ধর্ম সম্পর্কে আমার আগ্রহ আরও বৃদ্ধি পায়, এভাবে আমি আরও বেশি দেখতে থাকি।
এভাবেই তিনি নতুন নতুন পর্ব দেখতে আগ্রহী হন, আর এভাবেই ইসলামের প্রতি তার আকর্ষণ বাড়তে থাকে।
ইসলাম গ্রহণের আগে ওই নারী ছিলেন একজন ব্যাপটিস্ট ক্যাথলিক (খৃষ্টান)। একপর্যায়ে তিনি মুসলিমদের ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কুরআন ইংলিশ ভার্সনে পড়া শুরু করেন।
ইসলাম সম্পর্কে তার মাথায় যত প্রশ্নগুলো ছিল সেগুলোর জবাব যখন তিনি পেয়ে যেতে শুরু করেন তখন তিনি ইসলামের দিকে আসতে শুরু করতেন। পরে তিনি মসজিদ খুঁজতে থাকেন। এক পর্যায়ে তিনি মসজিদে যান। তাকে দেখে মুসলিমরা বিস্মিত হন। তিনি মনে করেন ওই দিনই তার ইসলাম গ্রহণ করা উচিত।
আমি এ বিষয়ে খুব বেশি বিস্তারিত কিছু বলতে পারব না। আমি কারো কোনো বিশ্বাসে হস্তক্ষেপ করতে চাই না। ঠিক তেমনই আমার বিশ্বাসেও কেউ যেন কোনো হস্তক্ষেপ করাও উচিত নয়।
ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেয়ার পর তার বন্ধুরা ব্যাপক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বলে জানান খাদিজা।
তিনি জানান, তার সন্তানরা তার নতুন ধর্ম বিশ্বাস নিয়ে কোনও প্রশ্ন তোলেনি। সন্তানদের নিয়ে এখন তার সময় কাটছে তুর্কি শো দেখে। তবে আমার বন্ধু-বান্ধবরা বলছে, আমার ব্রেনওয়াশ করা হয়েছে। ধর্মান্তরিত হওয়ার পর থেকে তারা আমার সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ বন্ধ করে দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, দিরিলিস আরতুগ্রুলের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এর আগেও যুক্তরাষ্ট্রে এক মেক্সিকান দম্পতিসহ অনেক মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছেন বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় খবর প্রকাশ হয়েছে।
উল্লেখ্য, আরতুগ্রুল সিরিজকে তুরস্কের গেম অব থ্রোনস হিসেবে অভিহিত করা হয়। আরতুগ্রুল ১৩শ শতাব্দীতে আনাতোলিয়ায় অটোমান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠার আগে এক চরিত্রের নাম। এই সিরিজে আরতুগ্রুল গাজীর লড়াইয়ের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
পাকিস্তান-ভারতে জনপ্রিয় আরতুগ্রুল
এর আগে উসমানীয় সাম্রাজ্যের গৌরবময় উত্থানের সত্য কাহিনি অবলম্বনে নির্মিত জনপ্রিয় তুর্কি সিরিজ ‘দিরিলিস আরতুগ্রুল’ সম্প্রচারের জন্য রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন (পিটিভি) কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
ভারতের মুসলিম তরুণদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে উসমানীয় সাম্রাজ্যের গৌরবময় উত্থানের সত্য কাহিনী অবলম্বনে নির্মিত জনপ্রিয় তুর্কি সিরিজ ‘দিরিলিস আরতুগ্রুল’।
কাশ্মীরসহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের মুসলমানদের মধ্যে তুরস্কের এ সিরিজটি ভীষণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। এমনকি অধিকৃত উপত্যকাটিতে এখন নবজাতকদের ‘আরতুগ্রুল’ নাম রাখারও হিড়িক পড়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কাশ্মীরের সোপোর, পুলওয়ামা বা বারামুলাতে এর আগে কখনও ‘আরতুগ্রুল’ নামে কেউ ছিল না। অথচ গত দু’তিন বছরে এ উপত্যকায় যেসব শিশু জন্ম নিয়েছে তাদের অনেকেরই নাম রাখা হয়েছে ‘আরতুগ্রুল’।
এছাড়া শীতের মৌসুমে কাশ্মীরী তরুণদের আরতুগ্রুল স্টাইলের টুপিও পরতে দেখা যাচ্ছে । গাঢ় ওয়াইন-কালারের এ ধরনের মাথা ও কান-ঢাকা ফার বা পশমী টুপি তুরস্কে খুব জনপ্রিয় হলেও কাশ্মীরে এর কখনই কোনো প্রচলন ছিল না।
কিন্তু জনপ্রিয় তুর্কি টেলি-ড্রামা ‘দিরিলিস: আরতুগ্রুল’ এখন সব পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে।
২০১৭ সালের অক্টোবরে নেটফ্লিক্স তুরস্কের এই ঐতিহাসিক ড্রামাটি অনলাইনে ‘স্ট্রিম’ করতে শুরু করার পরই ভারতে তা তুমুল সাড়া ফেলে।
বাংলাদেশে দিরিলিস আরতুগুল: খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাছরাঙা টিভিতে ২ এপ্রিল ২০১৭ থেকে দিরিলিস আরতুগ্রুল সিরিজ সম্প্রচার শুরু হয়। এই সিরিয়ালটি শুরু হওয়ার পর বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণির দর্শক মাছরাঙা টিভির প্রতি হুমড়ি খেয়ে পড়ে। এ সিরিজটি সম্প্রচারের পর থেকে তাদের টিআরপি অনেকাংশে বেড়ে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
ইতিমধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় সিজন দর্শকরা বাংলায় ডাবিং করা এ সিরিয়ালটি দেখেছেন। তৃতীয় সিজনের জন্য অপেক্ষা করছেন দর্শকরা।
ইউরোপে তুর্কি সিরিজের জনপ্রিয়তা
ইউরোপে তুর্কি চলচ্চিত্র র্যাংকিংয়ে প্রথম। আর তুরস্কের ৪৮ ভাগ মানুষই দেশীয় চলচ্চিত্র দেখে থাকেন। মধ্যপ্রাচ্য থেকে বলকান, পূর্ব ইউরোপ থেকে ল্যাটিন আমেরিকায় গত পাঁচ বছরে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে তুর্কি সিরিজ।
এছাড়াও বিশ্বব্যাপী আলোচিত ১৬ শতাব্দীর অটোমান সাম্রাজ্যের ঐতিহাসিক কাহিনী নিয়ে নির্মিত সিরিজ দ্য ম্যাগনিফিসেন্ট সেঞ্চুরি (বাংলাদেশে যা সুলতান সোলেমান হিসেবে প্রচারিত হচ্ছে) ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এটি তুরস্ক ও পশ্চিম ইউরোপের ৭০টি দেশে সম্প্রচারিত হচ্ছে। এ সিরিজটির দর্শক সংখ্যা ২৫ কোটিরও বেশি।
সূত্র: আনাদলু এজেন্সি